বিশ্বের সবচেয়ে দামি গরু, যার দাম ৪ মিলিয়ন ডলার!
একটি গরুর দাম সর্বোচ্চ কত হতে পারে? ১০ লাখ, ২০ লাখ, কিংবা ধরুন ৩০ লাখ টাকা। কিন্তু ব্রাজিলে এমন এক গরু রয়েছে, যেটির কথা আলাদা করে বলতেই হয়। সম্প্রতি এক নিলামে গরুটি ৪ মিলিয়ন বা ৪০ লাখ মার্কিন ডলারেরও বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। টাকার হিসাবে যা ৪৭ কোটিরও বেশি (প্রতি ডলারের বিনিময় হার ১১৮ টাকা ধরে)।
গরুটির নাম ভিয়াতিনা-১৯ এফআইভি মারা মুভিস। এর দেহ বৃহৎ আকৃতির, গায়ের রঙ তুষারের মতো সাদা।
গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত নিলামে বিক্রি হওয়া সবচেয়ে বেশি দামের গরু ভিয়াতিনা-১৯। এর আগে সবচেয়ে বেশি মূল্যে যে গরুটি বিক্রি হয়েছিল, তার চেয়েও এর দাম তিনগুণ বেশি। গরুটির ওজন এক হাজার ১০০ কেজি (দুই হাজার ৪০০ পাউন্ডেরও বেশি)। গরুটির ওজন তার বয়সের অন্য গরুগুলোর গড় ওজনের চেয়ে দ্বিগুণ।
একটি মহাসড়কের পাশে গরুটির মালিকরা দুটি বিলবোর্ড লাগিয়েছেন। আর এতে তারা তাদের গরুটির সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন, যাতে খামারি, ভেটেরিনারি শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়।
ব্রাজিলের অর্থনৈতিক অগ্রগতির অন্যতম প্রধান উৎস হলো গবাদি পশু। দেশটির সরকার গরুর উৎপাদন বাড়িয়ে অন্যান্য দেশের নতুন নতুন মাংসের বাজার দখলে নিতে চাইছে।
ব্রাজিল সরকারের এ আকাঙ্ক্ষার ফলই বলা চলে ভিয়াতিনা-১৯। এ জাতের গরুর উৎপাদন বাড়ানোর মধ্য দিয়েই সরকার তার আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করতে চায়।
খামারিরা এ জাতের গরুগুলো থেকে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু সংগ্রহ করে ভ্রূণ তৈরি করে সেটি অন্য কোনো গরুর গর্ভে রেখে দেওয়ার মাধ্যমে এসব জাতের গরুর উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। ভিয়াতিনা-১৯ এর ডিম্ব কোষ সংগ্রহের জন্য কেউ কেউ প্রায় আড়াই লাখ ডলার পর্যন্ত ব্যয় করেছেন।
গরুটির এক মালিক নেই পেরেইরা। তিনি বলেন, "আমরা উৎকৃষ্ট জাতের গবাদি পশু জবাই করছি না। এগুলো প্রজননের জন্য কাজে লাগাচ্ছি। সবশেষে বলতে গেলে, আমরা বিশ্বের মানুষের কাছে গরুর মাংস সহজলভ্য করার চেষ্টা করছি।''
বিরাট দেহের এই ভিয়াতিনা-১৯ এ পর্যন্ত বহু পুরস্কার জিতেছে। এর মধ্যে রয়েছে টেক্সাসভিত্তিক 'চ্যাম্পিয়ন অব দ্য ওয়াল্র্ড' প্রতিযোগিতার 'মিস সাউথ আমেরিকা' পুরস্কার। উল্লেখ্য, এ প্রতিযোগিতায় মূলত বিভিন্ন দেশের বড় বড় গরু ও ষাঁড় উপস্থাপন করা হয়ে থাকে।
এ জাতের গরুগুলোর অত্যধিক দামের কারণে অনেক সময় কারো একার পক্ষে একটি গরু কেনা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে কয়েকজন মিলে একটি গরু কিনে থাকেন। তাই এসব জাতের একটি গরুর একাধিক মালিকা থাকা ব্রাজিলে সাধারণ বিষয়।
২০২২ সালের এক নিলামে পেরেইরার কোম্পানি প্রায় ৮ লাখ ডলারে ভিয়াতিনা-১৯ এর অর্ধেক মালিকানা লাভ করে। বাকি অর্ধেকের মালিকানা আরেকটি পক্ষের।
গত বছর পেরেইরাসহ ভিয়াতিনা-১৯ এর দুই মালিক আরেকটি নিলামে গরুটির ৩৩ শতাংশ বিক্রি করেন। এক ব্যক্তি ১.৩ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে গরুটির আংশিক মালিকানা লাভ করেন। আর এর মধ্য দিয়ে ভিয়াতিনা-১৯ এর যে মূল্য দাঁড়ায়, তা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়।
ব্রাজিলের ৮০ শতাংশ গরুই জেবু জাতের। তবে ভিয়াতিনা-১৯ হলো নেলোর জাতের। এ জাতের গরু সাধারণত মাংস উৎপাদনের জন্য পালন করা হয়। বহু বছর আগে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের নেলোর জেলা থেকে এ জাতের গরু ব্রাজিলে নেওয়া হয়েছিল। নেলোর জেলার নামানুসারেই এ জাতের নামকরণ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ব্রাজিলে ২৩০ মিলিয়নেরও বেশি গরু রয়েছে। তবে ভিয়াতিনা-১৯ এর মতো বিরাট দেহের গরুর সংখ্যা খুব বেশি নয়।
তবে উদ্বেগের বিষয় হলো দেশটিতে এই বিপুল সংখ্যক গবাদি পশু থাকা পরিবেশের জন্য একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্ব ব্যাংকের গত মাসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রাজিলের মোট গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের ৮৬ শতাংশই এসব পশুর খাবার উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এছাড়াও গবাদি পশু প্রচুর পরিমাণে মিথেন গ্যাস নির্গত করে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
অন্যদিকে গবাদি পশুর চারণভূমি তৈরি করার জন্য আমাজন বনের বিশাল অংশ উজাড় করা হয়েছে, যা পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
ব্রাজিল ২০২২ ও ২০২৩ সালে দুই মিলিয়ন টনেরও বেশি গরুর মাংস রপ্তানি করেছে, যা ১৯৯৭ সালে রেকর্ড রাখা শুরু করার পর থেকে সর্বোচ্চ।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট গরুর মাংস রপ্তানির জন্য নতুন নতুন বাজার খোলার কাজ করছেন। গত মাসে তিনি জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদগার সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাকে ব্রাজিল থেকে মাংস আমদানির আহ্বান জানান।
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক