বাইডেন-নেতানিয়াহু ফোনালাপ: ইরানের হামলার ‘ভয়াবহ’ জবাব দেওয়ার হুমকি ইসরায়েলের
কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রথমবারের মতো ফোনে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির মাঝেই তারা দুজন ইরানের গত সপ্তাহের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ইসরায়েলি প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, বুধবারের (৯ অক্টোবর) ৩০ মিনিটের এই ফোনালাপে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস যোগ দিয়েছিলেন।
ফোন আলাপ শেষ হওয়ার পর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট জানিয়েছেন, ইরানের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিশোধমূলক হামলা "ভয়াবহ, নির্ভুল এবং সর্বোপরি অবাক করার মতো" হবে।
তিনি বলেন, "তারা বুঝতে পারবে না, কী ঘটেছে এবং কীভাবে ঘটেছে; তারা এর ফলাফল দেখবে।"
হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারিন জিন-পিয়েরে বাইডেন ও নেতানিয়াহুর ফোন আলাপকে "সোজা এবং খুব ফলপ্রসূ" হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি সাংবাদিকদের জানান, ইরানের হামলার বিষয়ে আলোচনা চলমান রয়েছে এবং বলেছেন, যতক্ষণ লেবাননের প্রধান বিমানবন্দর খোলা থাকবে, ততক্ষণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লেবাননে অবস্থানরত আমেরিকানদের জন্য ফ্লাইট ব্যবস্থা বজায় রাখবে।
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য অঞ্চলে হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। এদিকে, দক্ষিণ লেবাননের সিদোনের কাছে একটি লেবানিজ গ্রামে ইসরায়েলি বিমান হামলায় চারজন নিহত হয়েছে।
ছোট ইসরায়েলি শহর কিরিয়াত শমনাতে কুকুর নিয়ে হাঁটতে বের হওয়া এক দম্পতি লেবানন থেকে হিজবুল্লাহর নিক্ষেপ করা রকেটে নিহত হন। এই ঘটনাটি ১২ দিন আগে সীমান্ত সংঘাত শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো কোনো ইসরায়েলি সাধারণ নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনা।
রকেট হামলা ইসরায়েলের বন্দরের শহর হাইফাতেও হয়েছে, যেখানে অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েল জানায়, ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননের দক্ষিণে তাদের স্থল অভিযানের শুরু থেকে ১,১০০টিরও বেশি বিমান হামলা চালানো হয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি বিমান বাহিনী জানিয়েছে, তারা হিজবুল্লাহর স্থাপনাগুলোতে হামলা চালাতে যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার এবং দূর থেকে পরিচালিত বিমান ব্যবহার করেছে। পাশাপাশি জাবালিয়াতে সংঘর্ষের অংশ হিসেবে উত্তর গাজায় ৩০০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছে।
এর আগে ইরানের হামলা পর নেতানিয়াহু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ইরানকে এর "মূল্য দিতে হবে"। এদিকে তেহরান দাবি করেছে, ইসরায়েলের লেবানন আক্রমণ ও হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহসহ উচ্চপদস্থ সদস্যদের হত্যার প্রতিক্রিয়া হিসেবে এ হামলা চালানো হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতিশোধ নেওয়ার অধিকারকে সমর্থন করছে, কিন্তু তারা ইরানের প্রতি ইসরায়েলি প্রতিক্রিয়া সীমিত করার চেষ্টা করছে।
লেবাননের সরকার জানিয়েছে, গত এক বছরে দেশটিতে ১.২ মিলিয়ন মানুষ তাদের ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুতদের জন্য অনুমোদিত কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।
এছাড়াও, ৪ লাখের বেশি মানুষ যুদ্ধবিদ্ধস্ত সিরিয়ায় পালিয়ে গেছেন, যার মধ্যে ২ লাখের বেশি সিরিয়ান শরণার্থী রয়েছেন। এমন পরিস্থিতিকে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার প্রধান "দুঃখজনক ও অযৌক্তিক" হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
হিজবুল্লাহ লেবাননের উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক, সামরিক এবং সামাজিক শক্তি হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি ইসরায়েলের কিছু ভয়াবহ আঘাত প্রতিরোধ করলেও হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতাসহ বেশিরভাগ শীর্ষ সামরিক কমান্ডার নিহত হয়েছে।
সোমবার (৬ অক্টোবর) হিজবুল্লাহ জানিয়েছিল, তারা "ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রতিরোধের সক্ষমতায় আত্মবিশ্বাসী।"
ইসরায়েলের সরকার হিজবুল্লাহকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তারা লেবানন সীমান্তের কাছে বাস্তুচ্যুত হাজার হাজার বাসিন্দাকে তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই প্রতিশ্রুতি এসেছে গাজা যুদ্ধের পরবর্তী এক বছরের সীমান্ত সংঘাতের প্রেক্ষাপট থেকে।
৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর হিজবুল্লাহ ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর উত্তর ইসরায়েলে রকেট হামলা শুরু করে। এর ফলে ইসরায়েলের সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠীটির বিরোধ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে।