শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের অবরোধ ৩ ঘণ্টা পর প্রত্যাহার
ঢাকার সাভারে গত শনিবার (২১ ডিসেম্বর) বাসের ধাক্কায় প্রত্যয় সরকার নামে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রের (সিআরপি) সিআরপি নার্সিং কলেজের এক শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনার প্রতিবাদে এবং ৬ দফা দাবিতে টানা তিন ঘন্টারও বেশি সময় মহাসড়ক অবরোধ করে রাখার পর দুপুর ২ টা ৪০ মিনিটে মহাসড়ক থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
দুপুরে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হলে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেয়।
মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেওয়ায় ধীরে ধীরে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, সাভার মডেল থানা পুলিশ ও সাভার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগামী রবিবার শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেওয়ায় তারা অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। একইসাথে এই সময়ের মধ্যে সড়কে ঠিকানা পরিবহনের বাস চলাচল বন্ধ রাখারও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে।
এর আগে আজ সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মহাসড়কটির উভয় লেন অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা এই অবরোধ কর্মসূচী শুরু করে।
ব্যাস্ততম এক মহাসড়কটি অবরোধ করায় সড়কের উভয় লেনে যান চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। গতকালও একই দাবিতে মহাসড়কটি অবরোধ করে আন্দোলন করেছিল শিক্ষার্থীরা।
মো. আরিফুল ইসলাম নামে সিআরপি নার্সিং কলেজের আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী বলেন, "আমাদের সহপাঠী নিহতের ঘটনায় গতকাল আমরা মহাসড়ক অবরোধ করার পর কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেছিলাম। এর মধ্যে ঘাতক বাসের চালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তারের দাবিও ছিল। পুলিশের পক্ষ থেকে গতকাল আমাদের বিষয়টি দেখার আশ্বাস দেওয়া হলেও আমরা দেখতে পাচ্ছি এখনো কিছুই হয়নি। শুধু বাসটিই আটক আছে। তাই আমরা আজ আবারও মহাসড়ক অবরোধ করেছি এবং ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেছি, আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।"
শিক্ষার্থীরা জানান, গত শনিবার ভোরে সিআরপি নার্সিং কলেজের ডিপ্লোমা ইন নার্সিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী প্রত্যয় সরকার বন্ধুদের সঙ্গে খেজুরের রস খেতে বের হন। সকাল ৯ টার দিকে সাইকেলে করে ফেরার সময় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাকিজা এলাকায় পেছন থেকে ঠিকানা পরিবহনের একটি বাস প্রত্যয়কে ধাক্কা দিলে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে তাকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবিগুলো হলো, নিহত শিক্ষার্থী প্রত্যয় হত্যার দায়ভার ঠিকানা পরিবহনকে নিতে হবে এবং প্রত্যয়কে হত্যাকারী ঠিকানা পরিবহনের ঘাতক বাসের চালক ও হেলপারকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করা, সাভারের পরিবহণ ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, নিহত প্রত্যয়ের পরিবারকে উপযুক্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং প্রত্যয়ের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা, বেপরোয়া গতিতে বাস চালানো ও ওভারটেকিং বন্ধ করা, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের বিভিন্ন অংশে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধ করা এবং সাভারের সকল দূর্ঘটনাপ্রবণ জায়গায় স্পিডবেকার নির্মাণ করা।
সিআরপি নার্সিং কলেজের শিক্ষক মো. সজিব মিয়া বলেন, "আগামী রবিবার বাস মালিকপক্ষ, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নিয়ে আমরা আলোচনায় বসবো। আর যেন এমন কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে, মানুষ যেন রাস্তায় নিরাপদ ভাবে চলাচল করতে পারে, বেপরোয়াভাবে যেন গাড়ি চালানো না হয়, এই সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হবে সেখানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রতিনিধিরাও থাকবেন। যেন স্টুডেন্টরাও লুজার না হয়, আবার মানুষেরও যেন ভোগান্তি না হয়, কিভানে শান্তিপূর্ণ ভাবে এই সমস্যা সমাধান করা যায় সেগুলো আমাদের মূল লক্ষ্য থাকবে।