সভাপতির আচরণে হতাশ ফাহিম, থাকতে চান না বিসিবিতে
গত আগস্টে এক সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালকের দায়িত্ব নেন ফারুক আহমেদ ও নাজমুল আবেদীন ফাহিম। পরিচালক হওয়ার দিনই সভাপতি নির্বাচিত হন ফারুক আহমেদ। এরপর থেকে এক সঙ্গে কাজ করে আসছেন ফারুক-নাজমুল। বিসিবির অনেক আয়োজনেই দুজনকে এক সঙ্গে দেখা গেছে।
তবে এর মাঝেই গুঞ্জন ছড়ায়, বিসিবি সভাপতি ফারুকের সঙ্গে সম্পর্কটা ভালো যাচ্ছে না নাজমুল আবেদীনের। কিছু দিনের মধ্যে সেই গুঞ্জন বাস্তরে রূপ নিলো। এর বিষয়টি সামনে আনলেন নাজমুল আবেদীন নিজেই। বিসিবি সভাপতি আচরণে যারপরনাই হতাশ তিনি, এভাবে চলতে থাকলে বিসিবি থেকে করতে চান পদত্যাগ।
বিসিবি সভাপতির সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে দেশের বেসরকারি একটি টেলিভিশনে কথা বলেঝেন নাজমুল আবেদীন। সেখানে তিনি জানান, বিসিবির সভাপতির একটি মন্তব্যে তিনি হতাশ হয়েছেন। এ ছাড়া কাজের স্বাধীনতাও দেওয়া হচ্ছে না তাকে। এমন অবস্থায় তার মনে হয়েছে, বিসিবিতে না থাকাটাই তার জন্য ভালো।
একটি সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে কথা বললেও পরে আর মন্তব্য করতে রাজি হননি নাজমুল আবেদীন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে একবার কল রিসিভ করে পরে কথা বলবেন বলে জানান তিনি। যদিও পরে আর কল রিসিভ করেননি তিনি, সাড়া দেননি ম্যাসেজেরও।
টেলিভিশনটিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিসিবি সভাপতি ফারুকের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ আনেন নাজমুল আবেদীন। রিপোর্টটিতে বলা হয়, বিপিএল চলাকালীন নিজ কক্ষে বিসিবি ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সামনে নাজমুল আবেদীনের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন ফারুক। বিষয়টি নিয়ে মাজমুল আবেদীন বলেছেন, 'ওরকম একটা মন্তব্য… আমি সুনির্দিষ্ট করে বলতে চাই না, মন্তব্যটি কী ছিল।'
'তবে সেটা আমাকে খুবই হতাশ করেছে এবং সেটা বুঝিয়ে দিয়েছে, এই মুহূর্তে ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হয়তো সেভাবে আমাকে তার কনফিডেন্সে নিচ্ছেন না। আমি জানি না, প্রেসিডেন্ট কেন মন্তব্য করেছেন আমার ব্যাপারে। এটা শুনে আমি খুব অবাকও হয়েছিলাম এবং স্বাভাবিকভাবেই, আমি মোটেও আশা করিনি এমন মন্তব্য। সেটা অনেকগুলো মানুষের সামনে… মন্ত্রণালয়ের মানুষ ছিল, বোর্ডের ও বাইরের লোকজনও ছিল।' যোগ করেন তিনি।
এমন মন্তব্য করাটা কতোটা সমীচীন, এমন প্রশ্ন তুলে নাজমুল আবেদীন আরও বলেন, 'যেটা আমার কাছে মনে হয়েছে, বোর্ড প্রেসিডেন্ট হয়তো বোর্ড পরিচালকদের যে জায়গাটা দেওয়ার কথা, সেই জায়গাটা কতোটা দিতে চান, সেটা… কিংবা আমার ব্যাপারটা হয়তো কিছুটা ভিন্ন হওয়ার কথা, কারণ যে দুজন আমরা সম্প্রতি এসেছি, বোর্ড প্রেসিডেন্ট একজন, আমি আরেকজন, আমাদের মধ্যে যে বোঝাপড়া থাকার কথা, একসঙ্গে কাজ করার যে ব্যাপারটি থাকার কথা, সেখানে এই ধরনের মন্তব্য করাটা কতটা সমীচীন হয়েছে…।'
এমন মন্তব্যের পর বিসিবির দায়িত্ব ছাড়া নিয়ে ভাবছেন নাজমুল আবেদীন। তার ভাষায়, 'আমার অনেক সময় মনে হয়, আমার মনে হয় বোর্ডে না থাকলেই ভালো। কারণ বোর্ডের বাইরে থেকে যেভাবে ভূমিকা রাখতে পারি, যে ধরনের আলাপ-আলোচনা করতে পারি, বোর্ডের ভেতরে থেকে আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়। আমি যদি বোর্ডে থাকি, আমাকে কাজ করতে হবে। কাজ করতে যদি না পারি, তার চেয়ে ভালো বাইরে থাকা। বাইরে থাকলে হয়তো কী হতে পারে, না পারে, কী হওয়া উচিত ছিল, এসব নিয়ে আলোচনা করতে পারি। বোর্ডে থাকা আমার জন্য খুব জরুরি নয়।'
বিসিবি সভাপতির কারণে স্বাধীনভাবে নিজের মতো করে কাজ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ নাজমুল আবেদীনের। টেলিভিশনটিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'কাজ করতে যদি না পারি, নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপার না থাকে… আমার জন্য খুব জরুরি স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করাটা। কারণ, নিজের চিন্তাভাবনা মেলে ধরার সুযোগ থাকাটা দরকার।'
'আমরা এখনও আমাদের স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলোকে দাঁড় করাতে পারিনি। তাতে যেটা হয়েছে, কর্তৃত্ব নিয়ে কাজ করা… এই বিভাগ বা ওই বিভাগের পুরো দায়িত্ব আমার, সেই অধিকার নিয়ে কাজ করাটা হয়নি। তাতে যতোটা গতিশীল হতে পারতো, সেটি আসেনি। আমার যে ভূমিকা রাখার সুযোগ ছিল, সেভাবে আমি পারছি না। যেসব বিষয়ে আমার জানা প্রয়োজন, যেসবে আমার অবদান রাখার সুযোগ আছে, সেসব বিষয়ে যে করতে পারছি, তা নয়…।' বলেন তিনি।
গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দেশের সবখানেই পরিবর্তনের হাওয়া লাগে। ক্রীড়াঙ্গনেও আসতে শুরু করে পরিবর্তন, এর মধ্যে অন্যতম বিসিবি। সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন নাজমুল হাসান পাপন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) মনোনীত হিসেবে বিসিবি পরিচালক হন ফারুক-নাজমুল, একই দিনে অন্যান্য পরিচালকদের ভোটে সভাপতি নিরাচিত হন ফারুক।