উইকেট নিয়ে হাহাকারে বিভ্রান্ত ভিভ রিচার্ডস
দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলতে নেমে এতোটাই সমালোচনার জন্ম দিয়েছে ভারত যে, তা এখনও থামেনি। আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত গোলাপি বলের টেস্ট দুই দিনেই হেরে যায় ইংল্যান্ড। এরপর থেকে নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামের উইকেট নিয়ে সমালোচনা হয়ে আসছে। সমালোচকের তালিকায় আছেন মাইকেল ভন, অ্যালিস্টর কুক, মন্টি পানেসারের মতো ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটাররাও। আহমেদাবাদের উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডকে আইসিসির শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তারা।
যদিও আহমেদাবাদের স্পিন নির্ভর উইকেট নিয়ে এতো বিলাপ বা হাহাকারের কিছু দেখছেন না ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান ভিভ রিচার্ডস। তার মতে ভারতের মাটিতে স্পিন স্বর্গ হবে, এটাই স্বাভাবিক। এ নিয়ে এতো হতাশা প্রকাশ করার কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না সাবেক এই ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান। বরং ইংলিশ সাবেক ক্রিকেটারদের সমালোচনায় বিভ্রান্ত হচ্ছেন তিনি।
আহমেদাবাদ টেস্টের দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৯৩ রান তোলে ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয় মাত্র ৮১ রানে। টেস্টে এই প্রথম ভারতের বিপক্ষে ১০০ রানের নিচে অলআউট হয়েছে ইংল্যান্ড। দুই দিনেই ম্যাচ হারার ব্যাপারটিও পীড়া দিয়েছে ইংলিশদের। প্রায় ১০০ বছর পর দুই দিনে টেস্ট হেরেছে তারা। হতশ্রী পারফরম্যান্স করা এই উইকেটেই সিরিজের চতুর্থ ও শেষ টেস্টে ভারতের মুখোমুখি হতে হবে ইংল্যান্ডকে। সিরিজে ২-১ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকায় আহমেদাবাদের উইকেট নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছে ইংল্যান্ডকে।
ভিভ রিচার্ডস ইংল্যান্ডেকে এই চিন্তা করতে বারণ করছেন। বিলাপ না ডেকে বাস্তবতা মেনে নিতে বলছেন তিনি, 'কিছুদিন আগে ভারতে ইংল্যান্ডের সঙ্গে দ্বিতীয় ও তৃতীয় টেস্ট ম্যাচ নিয়ে আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছে। আমি এ প্রশ্ন নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্ত। যে উইকেটে খেলা হয়েছে, তা নিয়ে বিলাপ বা হাহাকার একটু বেশি হচ্ছে বলে আমার ধারণা। আমার মনে হয়েছে, যারা এমন কান্নাকাটি করছে, তাদের বোঝা উচিত, যখন পেসবান্ধব উইকেটে খেলা হয়, তখন গুড লেংথ থেকে বল লাফ দিয়ে ওঠে। তখন সবাই ধরে নেয়, এটা ব্যাটসম্যানদের সমস্যা। কিছু ব্যাটসম্যান এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে শেখে।'
পেস বান্ধব উইকেটেও অনেক দল খেই হারায়, ম্যাচ হারে বাজেভাবে। কিন্তু পেসবান্ধব উইকেট নিয়ে তখন সমালোচনা হয় না। তাই স্পিন নির্ভর উইকেট নিয়েও সমালোচনা হওয়া উচিত নয় বলে মনে করেন ভিভ রিচার্ডস।
পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে আসা ক্যারিবীয় এই ব্যাটিং কিংবদন্তি বলেন, 'এখন আপনি উল্টো দিকটা দেখছেন। এ কারণেই এর নাম টেস্ট ক্রিকেট দেওয়া হয়েছে। কারণ, এখানে মনের জোর, ইচ্ছাশক্তি ও লড়তে নামার সঙ্গে জড়িত সবকিছুর পরীক্ষা নেওয়া হয়। এখন উইকেটে বল বেশি ঘুরছে বলে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে, এটা সম্পূর্ণ উল্টো দিক। মানুষ সম্ভবত ভুলে যাচ্ছে তারা কোথায় খেলছে। যদি আপনি ভারতে খেলতে যান, এটার জন্য আপনার প্রস্তুত থাকা উচিত। আপনি স্পিনের দেশে যাচ্ছেন। কিসের মুখোমুখি হচ্ছে সেটা জেনেই প্রস্তুত হওয়া উচিত।'
এতো কিছুর পরও সিরিজের চতুর্থ টেস্টে স্পিন নির্ভর উইকেটই চাচ্ছেন ভিভ রিচার্ডস। তার মতে, তৃতীয় টেস্ট দুই দিনেই শেষ হওয়ায় ইংল্যান্ড বাড়তি সুযোগ পেয়েছে নিজেদের পরিকল্পনা ও কৌশল নিয়ে ভাবার। তিনি বলেন, 'টেস্টটা দ্রুত শেষ হওয়ায় আমি মনে করি ইংল্যান্ডের একটা সুযোগ হয়েছে নিজেদের সবকিছু আরেকবার যাচাই করে নেওয়ার। ওদের এটা মাথায় রাখা উচিত, যে উইকেটে খেলেছে, চতুর্থ টেস্টেও এমন উইকেট থাকতে পারে। আমি যদি ভারত হতাম বা উইকেট বানানোর সঙ্গে জড়িত থাকতাম, আমি একই উইকেটই বানাতাম।'