বাংলাদেশে করোনার দক্ষিণ আফ্রিকার ধরন
দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটির (স্ট্রেইন) অস্তিত্ব বাংলাদেশেও পাওয়া গেছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি এই অস্তিত্বের প্রমাণ মিলেছে।
ঢাকার বনানীর ৫৮ বছর বয়সী এক নারীর শরীর থেকে সংগ্রহ করা নমুনায় এই স্ট্রেইন পাওয়া গেছে বলে কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে বলে জানায় দৈনিক প্রথম আলো।
বাংলাদেশে দক্ষিণ আফ্রিকার এই স্ট্রেইন পাওয়ার খবর করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সের উন্মুক্ত তথ্যভান্ডার জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডাটার (জিসএআইডি) ওয়েবসাইটে ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশে এই স্ট্রেইন পাওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরির গবেষক দলও।
বিসিএসআইআরের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, গত ২৪ জানুয়ারি আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার এই নমুনা সংগ্রহ করে। এরপর জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে দেওয়া হলে গবেষকেরা করোনাভাইরাসের ওই নমুনার পূর্ণাঙ্গ জিন নকশা (হোল জিনোম সিকোয়েন্স) উন্মোচন করেন।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি গবেষকেরা ওই করোনাভাইরাসের হোল জিনোম সিকোয়েন্স জিসএআইডি তথ্যভান্ডারে জমা দেন। এরপর গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিসএআইডির ওয়েবসাইটে তা প্রকাশিত হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইনটি জাপান, ফিলিপাইন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ৬১টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতে চারটি, সিঙ্গাপুরে তিনটি, থাইল্যান্ডে ছয়টি ও চীনে একটি দক্ষিণ আফ্রিকার করোনার নতুন স্ট্রেইনের অস্তিত্ব মিলেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনাভাইরাসের চরিত্র হচ্ছে এটি দ্রুত নিয়মিতভাবে রূপান্তর হয়। বিশ্বে করোনাভাইরাসের হাজারো মিউটেন্ট আছে। তবে গবেষকেরা দক্ষিণ আফ্রিকার এই নতুন ভ্যারিয়্যান্ট '৫০১.ভি২' নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বিবিসির গত ২৩ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ আফ্রিকার এই স্ট্রেইনটি অধিকসংখ্যক মানুষকে সংক্রমিত করে মারাত্মক অসুস্থ করে ফেলে—এমন অকাট্য প্রমাণ নেই। তবে এ ধরনের ভাইরাস দ্রুত ছড়ায় এবং করোনার টিকা এই স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে ভালো কাজ করে না। দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন স্ট্রেইনের স্পাইক প্রোটিনে কিছু পরিবর্তন থাকে। এ কারণে এটি খুব সহজে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে।
এদিকে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে আসা ছয়জনের দেহে করোনাভাইরাসের আরেক নতুন স্ট্রেইন পাওয়া গেছে। এটি আসার খবর মিলেছে এ বছরের জানুয়ারি মাসেই। রূপান্তরিত নতুন একটি ধরন বা স্ট্রেইন গত ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হয়। আর গত ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশে নতুন এই স্ট্রেইন শনাক্ত হয় বলে আইইডিসিআর থেকে জানানো হয়। বিসিএসআইআরের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তারা নতুন করে ৯৩টি করোনাভাইরাসের হোল জিনোম সিকোয়েন্স করেছেন। এর মধ্যে অন্তত ৭০টির মধ্যে যুক্তরাজ্যের স্ট্রেইনের অস্তিত্ব পেয়েছেন।