হাইপারটেনশনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দৈনিক দুই কাপ কফি পানে বাড়তে পারে মৃত্যুঝুঁকি: গবেষণা
প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে হাতে এক কাপ কফি না হলে অনেকের সকালটাই ভালো যায় না। শুধু সকালেই নয়, বরং সারাদিনের কর্মব্যস্ততায় নিজেকে রিফ্রেশ রাখতে অনেকেই কফি পান করে থাকেন। প্রতিদিন কফি পানের নানা শারীরিক ও মানসিক উপকারের ব্যাপারটি অনেক আগেই নানা গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি কফি পানকে কেন্দ্র করে সাড়া জাগানো একটি গবেষণা হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, বেশকিছু উপকার থাকলেও দৈনিক দুই কাপ করে কফি পানে উচ্চ রক্তচাপে ভুগতে থাকা ব্যক্তিদের হার্টের নানা অসুখ হতে পারে; বাড়তে পারে দ্বিগুণ মৃত্যুঝুঁকি।
শারীরিক সুস্বাস্থ্যর প্রতি কফির প্রভাব নির্ণয়ে আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশনের জার্নালে সম্প্রতি একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। এ গবেষণায় তথ্য সংগ্রহে স্যাম্পল হিসেবে ৪০ থেকে ৭৯ বছর বয়সী ৬,৫৭৪ জন পুরুষ ও ১২,০৩৫ জন নারীকে নির্বাচিত করা হয়েছিল। নির্বাচিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে ১৯৮৮ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তাদের চা ও কফি পানের অভ্যাস সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। একইসাথে নির্বাচিত ব্যক্তিদের লাইফস্টাইল, ডায়েট ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্যগুলোও নিয়মিত সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করা হয়।
গবেষণা চলাকালীন অংশগ্রহণকারীদের রক্তচাপকে মোট ৫ টি গ্রুপে ভাগ করে আলাদাভাবে ফোকাস করা হয়। ১৩০/৮৫ মিগ্রা/ডেলি রক্ত চাপকে সাধারণ রক্তচাপ,
১৩৯/৮৯ মিগ্রা/ডেলি রক্ত চাপকে উচ্চ স্বাভাবিক রক্তচাপ, ১৫৯/৯৯ মিগ্রা/ডেলি রক্ত চাপকে হাইপারটেনশন ১, ১৭৯/১০৯ মিগ্রা/ডেলি রক্ত চাপকে হাইপারটেনশন ২ ও ১৮০/১১০ এর থেকে বেশি রক্তভাপকে হাইপারটেনসন ৩ ধরা হয়। গবেষণার স্বার্থে সাধারণীকরণের জন্য ১৬০/১০০ মিগ্রা/ডেলি রক্ত চাপের সমান বা বেশিকে মারাত্মক হাইপারটেনশন অবস্থা ধরা হয়। অতঃপর গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, যারা মারাত্মক হাইপারটেনশনে ভোগেন তাদের মধ্যে দৈনিক দুই কাপ কফি পান করা ব্যক্তিদের হার্ট সংক্রান্ত রোগে মৃত্যুঝুঁকি স্বাভাবিক ব্যক্তিদের তুলনায় দ্বিগুণ।
তবে মারাত্মক হাইপারটেনশনে ভুগতে থাকা রোগীরা একেবারেই কপি পান করতে পারবেন না বিষয়টি এমন নয়। সেক্ষেত্রে দৈনিক দুই কাপের কম কফি পান হার্ট সংক্রান্ত রোগে তেমন কোনো বিরুপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারবে না। শুধু তাই নয়, যাদের অতিরিক্ত চা বা কফি পানের নেশা রয়েছে, তাঁরা সুস্বাস্থ্য রক্ষায় কফির বদলে হাইপারটেনশন থাকা অবস্থায় যত ইচ্ছা তত গ্রিন টি পান করতে পারবে।
গবেষণাটির সাথে সংশ্লিষ্ট ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন স্কুলের শিক্ষক মাসাউকি টেরামতো বলেছেন, "যারা মারাত্মক হাইপারটেনশনে ভোগেন তাদের কফি পানের সাথে হার্টের রোগের সম্পর্কটি খুঁজে পাওয়ার ঘটনাটি অবাক হওয়ার মতো। কিন্তু হাইপারটেনশন ১ এ ভুগতে থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কিংবা যারা গ্রিন টি পান করেন তাদের ক্ষেত্রে দৈনিক দুই কাপ কফি/গ্রিন টি পান বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে না।"
তবে গবেষণায় বিশেষ অবস্থায় কফি পানের নেতিবাচক বিষয়টির ব্যাপারে বলা হলেও একইসাথে কফি পানের উপকারি দিকগুলোর কথাও বলা হয়েছে। যেমন ২০২১ সালে করা এক গবেষণায় দেখা যায়, নির্দিষ্ট মাত্রায় কফি পান হার্ট ফেইলরের রিস্ক কমাতে পারে। এছাড়াও, নির্দিষ্ট মাত্রায় কফি পান ব্যক্তির হাইপারটেনশনে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিকে উল্টো কমাতে পারে যদি না ঐ ব্যক্তি আগে থেকেই হাইপারটেনশনে আক্রান্ত থাকেন।
তবে কফি পানের সাথে সম্পর্কিত নেতিবাচক অবস্থার জন্য ক্যাফেইনই যে দায়ী ব্যাপারটি এমন নয়। বরং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নেতিবাচক অবস্থার জন্য কফিতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বা অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি পদার্থগুলো দায়ী থাকতে পারে। কেননা গ্রিন টি তেও ক্যাফেইন থাকে কিন্তু তা মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর নয়।
পরিশেষে গবেষণাটির সাথে সম্পর্কিত গবেষকেরা নিজেদের গবেষণার কিছু সীমাবদ্ধতাকেও স্বীকার করেছেন কেননা গবেষণায় ব্যবহৃত তথ্যগুলো ব্যক্তির নিজেদের সরবারাহ করা। আর তাই কফির সাথে ব্যক্তির স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে গবেষকরা আরও অধিকতর গবেষণার প্রয়োজন অনুভব করেছেন। তবে সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এ গবেষণাটি ব্যক্তির লাইফস্টাইল ও খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নিতে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।
সূত্র: বেস্টলাইফ