খারাপ আবহাওয়ার কারণে কফির দামের রেকর্ড
আন্তর্জাতিক পণ্য বাজারে কফির দাম বর্তমানে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) অ্যারাবিকা বিনের দাম প্রতি পাউন্ড (০.৪৫ কেজি) ৩.৪৪ ডলার ছাড়িয়েছে, যা এই বছরের মধ্যেই ৮০% এরও বেশি বেড়ে গেছে। অন্যদিকে, রোবুস্তা বিনের দামও সেপ্টেম্বর মাসে নতুন রেকর্ড করেছে। খবর বিবিসির
কফি ব্যবসায়ীরা পণ্যটির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বলছেন, এ বছর একদিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই কফি উৎপাদক দেশ ব্রাজিল ও ভিয়েতনামে খারাপ আবহাওয়ার কারণে কফি ফসল উৎপাদন কমছে, আরেকদিকে কফির জনপ্রিয়তা ক্রমে বাড়ছে।
একজন বিশেষজ্ঞ বিবিসিকে বলেছেন, কফি ব্র্যান্ডগুলো নতুন বছরে দাম আরও বাড়ানোর কথা বিবেচনা করছে।
তুয়ান লক কমোডিটিসের প্রধান নির্বাহী ভিন নগুয়েনের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রধান কফি রোস্টাররা দাম বাড়লেও গ্রাহকদের আগ্রহ বজায় ছিল। তবে মনে হচ্ছে, এবার এই ট্রেন্ড পরিবর্তন হতে চলেছে।
তিনি বলেন, 'জেডিই পিট (ডাউয়ে এগবার্টস ব্র্যান্ডের মালিক), নেসলে এবং অন্যান্য ব্র্যান্ডগুলো কাঁচামালের উচ্চ মূল্যের চাপ এতদিন নিজেরা বহন করেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'কিন্তু এখন তারা প্রায় টিপিং পয়েন্টে পৌঁছেছে। অনেক ব্র্যান্ডই ২০২৫ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে সুপারমার্কেটগুলোতে দাম বাড়ানোর চিন্তা-ভাবনা করছে।'
নভেম্বরে একটি বিনিয়োগকারী ইভেন্টে নেসলের এক শীর্ষ নির্বাহী জানান, কফি শিল্প 'কঠিন সময়ের' মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি স্বীকার করেন, তার কোম্পানিকে দাম এবং প্যাকেটের আকার পরিবর্তন করতে হতে পারে।
খরা ও ভারী বৃষ্টিপাত
১৯৭৭ সালে ব্রাজিলে অস্বাভাবিক তুষারপাতের ফলে বাগানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর, কফির দাম সর্বশেষ সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়েছিল।
স্যাক্সো ব্যাংকের কমোডিটি স্ট্র্যাটেজির প্রধান ওলে হ্যানসেন বলেন, '২০২৫ সালে ব্রাজিলের কফিই উদ্বেগের মূল কারণ।'
তিনি বলেন, 'আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে দেশটি ৭০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরার মুখে পড়েছিল। তারপরে অক্টোবরে দেশটিতে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে, যার কারণে কফির ফুলগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।'
শুধু ব্রাজিলের কফি বাগানগুলোই নয়, অ্যারবিকা বিন উৎপাদন করা বেশিরভাগ বাগানই খারাপ আবহাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরেক কফি উৎপাদক দেশ ভিয়েতনামও খরা ও ভারী বৃষ্টিপাতের মুখে পড়েছিল। আর তাই রোবাস্তা বিনের সরবরাহও অনেক কমে যাচ্ছে।
অপরিশোধিত তেলের পরে, কফি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যবসা পণ্য এবং দিন দিন এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, চীনে কফি খাওয়ার পরিমাণ গত দশ বছরে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাইটস-এর কফি মূল্য বিশ্লেষক ফার্নান্দা ওকাদা বলেন, 'পণ্যটির চাহিদা বেশি, অন্যদিকে উৎপাদক ও রোস্টারদের মজুদ নিম্ন পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।'
তিনি বলেন, 'কফির দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।'
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি