‘দেশব্যাপী সর্পদংশন ও সংরক্ষণমূলক সচেতনতা ক্যাম্পেইন-২০২৩’ পরিচালনা করছে ডিইএসসিএফ
ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশন (ডিইসসিএফ) সর্পদংশনে মৃত্যুহার হ্রাস ও সাধারণ মানুষের কাছে প্রকৃতিতে সাপের গুরুত্ব তুলে ধরার লক্ষ্যে সচেতনতামূলক সেমিনার ''দেশব্যাপী সর্পদংশন ও সংরক্ষণমূলক সচেতনতা ক্যাম্পেইন-২০২৩'' পরিচালনা করছে ।
মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশনের "হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর ক্যাম্পাস ইউনিট, সকাল ১০টায় উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লির সাধারণ যুবক, শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঝাড়বাড়ী মহাবিদ্যালয়ের হলরুমে ক্যাম্পেইন আয়োজন করে। এরপর ঝাড়বাড়ী উচ্চবিদ্যালয় এর শিক্ষার্থীদের নিয়ে আরো একটি সচেতনতা পোগ্রাম আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি দিনব্যাপী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের সাধারণ জনগন ও প্রবীণ ব্যাক্তিদের সাথে সর্পদংশন সচেতনতা ও প্রকৃতিতে সাপ সংরক্ষণ এর গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়।
এর আগে, কুষ্টিয়ার ৩টি শিক্ষা কেন্দ্রে সচেতনতামূলক কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়েছে। শান্তিডাঙ্গা উলুম দাখিল মাদ্রাসায় সচেতনতার মাধ্যমে সারাদিন ব্যাপী সচেতনতা কার্যক্রম শুরু হয়ে এরপর ১২ টায় খাতের আলী দাখিল মাদ্রাসা এবং দুপুর ৩ টায় মধুপুর হদিরন্নেসা মাধ্যমিক বিদ্যালয় এ ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় শিক্ষার্থীদের মাঝে সাপ নিয়ে সচেতনা,সাপে কাটলে কারণীয়, বর্জনীয় ও এর প্রতিকার, বিষধর সাপে কাটার লক্ষণ, সাপ পরিচিতি ও প্রকৃতিতে সাপের গুরুত্বের উপর আলোচনা করা হয় এবং সর্বশেষ প্রশ্ন-উত্তর পর্বের মাধ্যমে কর্মশালাগুলো পরিচালিত হয়। কর্মশালায় মাঈনুল ইসলামের উপস্থাপনায় সাপে কাটলে করণীয়,বর্জনীয় ও এর প্রতিকার, সাপের পরিচিতি ও প্রকৃতিতে সাপের গুরুত্ব নিয়ে বক্তব্য রাখেন ছাফওয়ানুর রহমান, সাদিয়া মুবাশ্বিরা ও মেঘদাদুক হক। এরপর কুইজ পর্ব, বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ, শিক্ষার্থীদের মাঝে লিফলেট বিলি ও বিদ্যালয়ে সচেতনতা মূলক পোস্টার লাগানো হয়। শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিটি বিদ্যালয়ের কর্মশালার সমাপ্তি হয়। সংঠনের সদস্য সাদিয়া মুবাশ্বিরা বলেন ক্যাম্পাসের আশাপাশের অঞ্চলে প্রায়ই সাপে কেটে মানুষের মৃত্যু হয়, যার অন্যতম প্রধান কারণ অসচেতনতা। সাপে কাটলে মানুষ না বুঝে ওঝার কাছে নিয়ে যায় ফলে মৃত্যু ঘটে। তাই আমরা চেষ্টা করি মানুষকে সচেতন করতে যেন তারা ওঝার কাছে না গিয়ে হাসপাতালে যায়।
অপর সদস্য শাহরিয়ার সাগর বলেন, সাপ একটি উপকারী প্রানী। সাপ বিভিন্নভাবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। প্রকৃতিতে সাপ সহ সকল বন্যপ্রানীর সাথে মানুষের সহাবস্থান নিশ্চিত করার মাধ্যমে আগামীর প্রজন্মকে একটি সুন্দর পৃথিবী উপহার দেয়ার লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
সেইসাথে একই আয়োজনের ধারাবাহিকতায়, 'সাপে কাটলে করণীয়-বর্জনীয়' ও শিক্ষার্থীদের মাঝে সর্পদংশন নিয়ে সচেতনতা বাড়াতেও আরেক কর্মসূচির আয়োজন করেছে ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঝিনাইদহ ক্যাম্পাস ইউনিট। ঝিনাইদহের হলিধানি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এই সচেতনতামূলক কর্মশালার আয়োজন করে সংগঠনটি। কর্মশালায় ডিপ ইকোলজি যবিপ্রবি ঝিনাইদহ ক্যাম্পাস ইউনিটের সদস্যরা শিক্ষার্থীদের মাঝে সাপে কাটলে করণীয়, বর্জনীয়, প্রতিকার, বিষধর সাপে কাটার লক্ষণ, সাপ পরিচিতি ও প্রকৃতিতে সাপের গুরুত্বের উপর আলোচনা করেন। এ ছাড়া কর্মশালা শেষে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের জন্যে সর্পদংশন সম্পর্কিত বিভিন্ন কুইজের আয়োজন করা হয়। কুইজে বিজয়ীদের পুরষ্কার প্রদান করে এই সংগঠনটি। পুরষ্কার বিতরনী অংশে উপস্থিত থাকেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা।
ডিপ ইকোলজি যবিপ্রবি ঝিনাইদহ ক্যাম্পাস ইউনিটের সদস্য সামিউল ইসলাম বলেন, 'সর্বাধিক সর্পদংশনপ্রবণ এলাকার একটি হলো ঝিনাইদহ। সাপ ও মানুষের সংঘাত এড়াতে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। তাই মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের এ কাজে সংযুক্ত হওয়া।' আরেক সদস্য শরীফুল ইসলাম শুভ বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি সকলের প্রচেষ্টা ও সচেতনতায় একদিন এই অজ্ঞতা, কুসংস্কার এবং অপমৃত্যুর হার হ্রাস পাবে।'
ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশন ২০১৮ সাল থেকে দেশে সাপ সংরক্ষণ ও সর্পদংশন সচেতনতা নিয়ে কাজ করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় সর্পদংশনে মৃত্যুহার কমানো ও প্রকৃতিতে সাপের গুরুত্ব উপলব্ধি করানোর লক্ষ্যে দেশব্যাপী বিভিন্ন স্কুলে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ডিপ ইকোলজি এন্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশন। ডিপ ইকোলজি এন্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশন আগামী দুইমাসে দেশের বিভিন্ন জেলায় ২৫টির অধিক সচেতনতামুলক সেমিনার আয়োজন করতে যাচ্ছে।
সর্পদংশনে মৃত্যুহার কমানো ও প্রকৃতিতে সাপের গুরুত্ব উপলব্ধি করানোর লক্ষ্যে দেশব্যাপী ২৫টিরও অধিক স্কুলে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন আয়োজনের অংশ হিসেবে ডিপ ইকোলজি মাগুরা ইউনিটের নেতৃত্বে আজ ১৪ সেপ্টেম্বর বেলনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একটি সচেতনতামূলক সেমিনার ও বৃক্ষ রোপণের আয়োজন করা হয়েছে। সাপে কাটলে করনীয়, বর্জনীয় ও এর প্রতিকার, বিষধর সাপে কাটার লক্ষণ, সাপ পরিচিতি ও প্রকৃতিতে সাপের গুরুত্বেও উপর আলোচনা করা হয় এবং সর্বশেষে প্রশ্ন-উত্তর পর্বের মাধ্যমে সেমিনারের শেষ হয়।
ডিপ ইকোলজি মাগুরা ইউনিটের স্বাদীদ মাহমুদ শিশির বলেন " খুলনা দেশের সার্বিক সর্পদংশনপ্রবন বিভাগ। সাপ ও মানুষের সংঘাত এড়াতে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। তাই মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের এ কাজে সংযুক্ত হওয়া। আমরা বিশ্বাস করি সকলের প্রচেষ্টায় একদিন এই অপমৃত্যুর হার হ্রাস পাবে।"
সংগঠনের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের কার্যনির্বাহী শুভব্রত সরকার বলেন, সর্পদংশনের মৃত্যুহার হ্রাসকরণ ও সাপ-মানুষের সহবস্তান নিশ্চিতকরনের জন্য শিক্ষার্থীদের দীক্ষিত করার কোন বিকল্প নেই। কারণ আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামীদিনের ভবিষ্যৎ, তাদের হাত ধরেই দেশের পরিবর্তন আসবে।
উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবছর ৪ লাখেরও বেশি মানুষকে সাপে কামড়ায়, যাদের মধ্যে সাড়ে ৭ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ডিপ ইকোলজি এন্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশন ২০১৮ সাল থেকে দেশে সাপ সংরক্ষণ ও সর্পদংশন সচেতনতা নিয়ে কাজ করছে।