কক্সবাজারের ৭৭ শতাংশ মানুষ ব্যবহার করে না আয়োডিনযুক্ত লবণ
দেশের চাহিদার শতভাগ উৎপাদিত দেশীয় পণ্য লবণ। চট্টগ্রামের বাঁশখালীর কিছু অংশ এবং কক্সবাজারের কয়েকটি উপজেলায় প্রায় ৭০ হাজার একর মাঠে এসব লবণ উৎপাদন করছেন প্রায় ২৭ হাজার লবণ চাষী।
আর এসব লবণ প্রক্রিয়াজাত করতে ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামপুর শিল্প এলাকায় সচল রয়েছে অর্ধশতাধিক লবণ মিল। জেলার বিভিন্ন স্থানে উৎপাদিত লবণ স্থল ও জলপথে আনা হয় ইসলামপুরের বিভিন্ন মিলে। এসব মিল থেকে প্রক্রিয়াজাত শেষে লবণ চলে যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে।
দেশের মানুষের আয়োডিনের চাহিদা পূরণের চেষ্টায় শরিক হচ্ছেন কক্সবাজার জেলায় লবণ চাষের সাথে জড়িত ২২ হাজার ৫০০ চাষী। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো, এসব চাষীর পরিবার রান্নায় নিয়মিত মাঠের লবণই ব্যবহার করে। আয়োডিনযুক্ত লবণ সম্পর্কে চাষীদের পরিবারে ধারণা কম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভের ২০১৯ এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কক্সবাজারের ৭৭ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ সঠিক পরিমাণে আয়োডিনযুক্ত লবণ পরিবারে ব্যবহার করছে না।
তাই চাষী পরিবারে আয়োডিন যুক্ত লবণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিনামূল্যে আয়োডাইজ লবণ বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে ইউনিসেফ। লবণচাষীদের শতভাগ পরিবারকে আয়োডিন যুক্ত লবণ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে চাষীদের মাঝে বিনামূল্যে আয়োডিনযুক্ত লবণ বিতরণ কর্যক্রম শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ লবণ চাষ শুমারীর আওতাভুক্ত সাড়ে ৮শ' লবণ চাষী পাচ্ছেন প্রতিমাসে দু'কেজি করে আয়োডিনযুক্ত লবণ।
মঙ্গলবার সকালে ইসলামপুর এলাকায় লবণ চাষীদের আয়োডিনযুক্ত লবণ বিতরণ এবং সচেতনতামূলক প্রচারভিযানের আয়োজন করা হয়।
এতে আয়োডিনযুক্ত লবণ নিতে আসা চাষী জয়নাল আবেদীন জানান, আমরা 'র' লবণ উৎপাদন করি। সেই লবণে আয়োডিন মেশানো হয় এটা শুনেছি কিন্তু কখনও মেশাইনি। যেহেতু আমরাই চাষ করি, সেহেতু আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারে উদ্যোগী হইনি। মাঠের লবণ ব্যবহারে আমাদের তেমন কোন সমস্যাও হয়নি। তবে আয়োডিন যুক্ত লবণ না খেলে গলগন্ড রোগসহ নানা সমস্যার কথা শুনার পর আমরা এখন থেকে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার করবো।
লবণচাষী আব্দুল কাদের বলেন, শিশু এবং গর্ভবতী মায়ের জন্য আয়োডিন দরকার। আমরা এই তথ্য আগে শুনলেও গুরুত্ব দিইনি। অনুষ্ঠানে এসে জানলাম এটির অভাবে কী অঘটন ঘটতে পারে। ঘরে গর্ভবতী মহিলা আছে, তাই এখন থেকে তাকে আয়োডিনযুক্ত লবন খাওয়াবো।
আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার না করায় মানবদেহে ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে মন্তব্য করেছেন পুষ্টি বিশেষজ্ঞ এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের পুষ্টি অফিসার ড. আইরিন আখতার চৌধুরী। তিনি বলেন, লবণ যেখানে উৎপাদিত হয়, আগে সে এলাকার মানুষকে সচেতন করতে হবে। আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারে অভ্যস্ত করতে হবে তাদের। এলাকার লবণ মিল মালিকরা আয়োডিনযুক্ত লবণ উৎপাদনে আগ্রহী হলে আয়োডিনবিহীন লবণ ব্যবহার অনেকটা কমে আসবে বলে মনে করেন এই পুষ্টি বিশেষজ্ঞ।
তিনি আরো বলেন, ইসলামপুর মিল মালিক সমিতির আওতায় ৫২টি মিল লবণ প্রক্রিয়াজাত করণের সাথে জড়িত। কিন্তু তারা নিজস্ব মিলে লবণে আয়োডিন মেশাতে চান না। এরকম হতে থাকলে দেশে আয়োডিনের ঘাটতি থেকেই যাবে।
তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ইসলামপুরের সাড়ে আটশ চাষীদের একটি ডাটা বেজ তৈরি করেছি। এসব চাষী এবং মিলারদের সব ধরনের তথ্য একটি ওয়েবসাইটে সংরক্ষিত থাকবে। বিনামূল্যে লবণ পেতে সমিতির নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি চাষীদের মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা চলে যাবে। এই ক্ষুদে বার্তা দেখালে সমিতির নির্দ্দিষ্ট বুথ থেকে দুই কেজি করে বিনামূল্যে আয়োডিনযুক্ত লবণ পাবেন চাষীরা।
বিসিক সূত্র জানায়, দেশের ২০২১-২২ অর্থবছরে লবণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২৩ লাখ ৫৭ হাজার মেট্রিক টন। তার বিপরীতে লবণ মৌসুমের এই চার মাসে উৎপাদন হয়েছে ১৫ লাখ সাড়ে ১৭ হাজার মেট্রিক টন লবণ।
প্রতিবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি লবণ উৎপাদিত হলেও অধিকাংশ মিলাররা মাঠ থেকে তোলা লবণে আয়োডিন মেশাতে চান না। লবণ মালিক সমিতির আশা, তাদের নেয়া উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে জেলার শতভাগ মানুষ আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার করবে।