ত্বকে করোনার স্থায়িত্ব কতক্ষণ? ইথানলে নিস্ক্রিয় হয় ১৫ সেকেন্ডেই: গবেষণা
মানুষের ত্বকে নয় ঘণ্টা ধরে টিকে থাকতে পারে সার্স কোভ-২ নামক নতুন করোনাভাইরাস। একই ধরনের অন্যান্য ফ্লু'র জীবাণুর তুলনায় যা অনেকখানি বেশি। জাপানি বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক এক গবেষণা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। পাশাপাশি ইথানল ব্যবহারের মাধ্যমে সংক্রমণ বিস্তার রোধের দিকেও নতুন করে আলোকপাত করেছে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানটি।
গবেষণা নিবন্ধটি গত ৩ অক্টোবর চিকিৎসা বিজ্ঞানের জার্নাল ক্লিনিক্যাল ইনফেকশাস ডিজিজেস- এ প্রকাশিত হয়। ইনফ্লুয়েঞ্জা A (আইএভি) ভাইরাসের তুলনায় কোভিড-১৯ সৃষ্টিকারী জীবাণুটি মানব ত্বকে কতক্ষণ অবস্থান করতে পারে, তা জানাটাই ছিল গবেষণার প্রধান লক্ষ্য। নতুন অনুন্ধানটি অবশ্য এখনও অন্যান্য গবেষকদের পর্যালোচনার আওতায় রয়েছে।
জাপানের কিয়েটো প্রিফেকচুয়াল ইউনিভার্সিটি অব মেডিসিনের বিজ্ঞানীদের এ গবেষণা সূত্রে জানানো হয়, সার্স কোভ-২ জীবাণু মানব ত্বকে নয়ঘণ্টা পর্যন্ত সক্রিয় থাকে। সেই তুলনায় আইএভি মাত্র দুই ঘণ্টা থাকতে পারে।
''আমরা সার্স কোভ-২ এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা A জীবাণুর স্থায়িত্ব পরীক্ষা করে দেখেছি। এজন্য ফুসফুস গ্রন্থির উপরিভাগের মিউকাস তরল ল্যাবরেটরিতে জিন কালচারের মাধ্যমে ভাইরাস দুটিতে যুক্ত করা হয়। এছাড়া মানবত্বকের মতো পৃষ্ঠতলে তা কতক্ষণ অবস্থান করতে পারে, সেটাও নিয়েও পরীক্ষা চালিয়েছি। গবেষণার আরেকটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হচ্ছে; পানি বা অন্য পরিস্কারক পদার্থের সঙ্গে ৮০ শতাংশ ইথানল ব্যবহারের মাধ্যমে সার্স কোভ-২ এবং আইএভি উভয় জীবাণুকেই দ্রুত নিস্ক্রিয় করা সম্ভব হয়েছে,'' বিজ্ঞানীরা তাদের নিবন্ধে উল্লেখ করেন।
উভয় জীবাণু ইথানল প্রয়োগের ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এর মাধ্যমে নিয়মিত হাত ধোয়া এবং অ্যালকোহল উপজাত ভিত্তিক স্যানিটাইজার ব্যবহারের মাধ্যমে সংক্রমণ বিস্তার রোধ করার উপযোগিতা নতুন করে উঠে আসে।
সার্স কোভ-২ ভাইরাস যে মানবদেহে দীর্ঘক্ষণ অবস্থানের ফলে তা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে বলে জানান বিজ্ঞানীরা। এরফলে কোভিড-১৯ অতিমারি নতুন গতি লাভ করতে পারে।
অন্য পৃষ্ঠতলের তুলনায় মানবত্বকে ভাইরাস অনেকদ্রুত নির্মূল করাও সম্ভব:
ইথানল ব্যবহারে ইস্পাত, কাঁচ বা প্লাস্টিক পদার্থের পৃষ্ঠতলের তুলনায় মানবত্বকে সার্স কোভ-২ এবং আইএভি উভয় ধরনের ভাইরাস অনেক দ্রুত নির্মুল করা সম্ভব হয়েছে।
মহামারির প্রথমদিকে বিজ্ঞানীরা তামা, কাঁচ এবং ইস্পাতের তৈরি বস্তুর মসৃণ পৃষ্ঠদেশে ভাইরাস দীর্ঘক্ষণ টিকে থাকতে পারে বলে জানিয়েছিলেন।
জীবাণুটি তামার পৃষ্ঠদেশে ৪ ঘণ্টা থাকতে পারে, কার্ডবোর্ডের ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টা এবং কাঁচ বা ইস্পাতের পৃষ্ঠদেশে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে।
লাইভ সায়েন্স ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, নৈতিক কারণেই এর আগে মানবত্বকে ভাইরাস কতক্ষণ সক্রিয় থাকতে পারে- সে গবেষণা করা হয়নি।
জাপানি বিজ্ঞানীরাও এজন্য সরাসরি মানবদেহে পরীক্ষা না চালিয়ে, মরদেহ থেকে অপসারণ করা ত্বকে ল্যাবরেটরির পরিবেশে পরীক্ষা চালান। মৃত্যুর একদিন পরই এসব নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
গবেষকরা জানান, ''আমরা ত্বকে ভাইরাসের স্থায়িত্ব নির্ধারণের একটি নির্ভরযোগ্য বিশ্লেষণী মডেল তৈরি করতে পেরেছি। দীর্ঘমেয়াদি পরীক্ষা চলাকালে মৃত ব্যক্তির ত্বক যেন নষ্ট না হয়, সেজন্য সঠিক প্রক্রিয়ায় তা সংরক্ষণ করা হয়।''
- সূত্র: দ্য প্রিন্ট