দৈনন্দিন জীবনে অত্যাবশ্যক হয়ে উঠতে চলেছে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন
ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে বড় কোনো অনুষ্ঠানের টিকিট কিংবা খেলার টিকিট নিশ্চিত করতে প্রয়োজন হবে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্রহণের প্রমান পত্র। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কর্মক্ষেত্র ও যাতায়াতের ক্ষেত্রেও দরকার হতে পারে এই প্রমাণ পত্রের।
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির বায়োএথিসিস্ট আর্থার কাপলান সহ আরও অনেক স্বাস্থ্যনীতি বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ভবিষ্যতে বাধ্যতামূলক ভ্যাকসিন আদেশ জারি হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যেই শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু রোগের ভ্যাকসিন বাধ্যতামূলক।
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ভ্যাকসিন সচরাচর বাধ্যতামূলক করা না হলেও, ইতোপূর্বে এমন ঘটনা দেখা যায়। ১৯০১ সালে ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের ক্যাম্বরিজ শহরে ২১ বছর ও তার উর্ধ্বের সকল নাগরিকের জন্য গুটি বসন্তের ভ্যাকসিন গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। আদেশ অমান্যে ৫ ডলার জরিমানা করা হতো যার বর্তমান মূল্যমান ১৫০ ডলার। এই সিদ্ধান্তের বিপরীতে কোর্টে করা সব আপিল খারিজ করা হয়েছিল।
বর্তমানে মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্যদের টিটেনাস, ডিপথেরিয়া, হেপাটাইটিস এ এবং পোলিও সহ অনেক রোগের বিরুদ্ধে অনাক্রম্যতা যাচাই করা হয়। অনেক অঙ্গরাজ্যেই স্বাস্থ্যসেবা খাতের কর্মীদের জলবসন্ত, হাম, মাম্পস, রুবেলা সহ অন্য অনেক রোগের ভ্যাকসিন নেয়া বাধ্যতামূলক। আইনানুযায়ী যেকোনো খাতের নিয়োগকারীরা কর্মীদের জন্য ভ্যাকসিন গ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে পারেন।
ক্রেতাদের জন্যও এই নিয়ম জারি হতে পারে। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার হ্যাসটিংস কলেজ অফ ল' এর অধ্যাপক ডোরিট রাবিনস্টেইন রেইস এব্যাপারে বলেন, যতোক্ষণ পর্যন্ত কোনো ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান বৈষম্য বিরোধী কোনো আইন অমান্য না করছে, তারা তাদের রেস্টুরেন্ট, বার, সেলুন ও দোকানে প্রবেশাধিকার সংরক্ষণ করতে পারেন। পাসপোর্ট নিবন্ধনের জন্যও কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্রহণের প্রমাণ দেখানোর নিয়ম জারি হতে পারে। '
অনেক বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সহজলভ্য হওয়ার পর, সরকার নির্দিষ্ট কিছু শিল্পের কর্মীদের জন্য ভ্যাকসিন বাধ্যতামূলক আদেশ জারি করবে
হার্ভার্ড ল স্কুলের পেট্রি-ফ্লোম সেন্টারের কার্যনির্বাহী পরিচালক কারমেল শ্যাচার বলেন, ' নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকানের কর্মীদের প্রতিদিন বিশাল সংখ্যক মানুষের সংস্পর্শে আসতে হয়। তাদের কাজের প্রকৃতির জন্যই তাদের মাধ্যমে অনেক মানুষ আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। নিয়োগকারীরা চাইবেন তাদের কর্মক্ষেত্র নিরাপদ থাকুক। তাই ভ্যাকসিন সহজলভ্য হলেই তারা তাদের কর্মীদের জন্য এ নিয়ম জারি করতে পারেন। কর্মক্ষেত্রে সকলের ভ্যাকসিন দেয়া থাকলে কাজের ক্ষেত্রে সংক্রমণ ঘটবে না। ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রেও এই নিয়ম জারি হতে পারে।'
রেস্টুরেন্ট, বার ও কফিশপের কর্মীদের জন্যও একই আদেশ আসতে পারে।
ভ্যাকসিনের ভবিষ্যৎ কার্যকারিতার উপর ভিত্তি করে বুস্টার ডোজা দেয়ার প্রয়োজনও হতে পারে।
ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডো ডেনভারের অধ্যাপক লরেন গ্রসম্যান বলেন, ' ফ্লু ভ্যাকসিন সাধারণত ৭০ শতাংশ সময় কার্যকর, এবং প্রতিবছর নতুম ডোজের প্রয়োজন হয়।'
কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রেও যদি এরকম বুস্টার ডোজের প্রয়োজন হয়, তবে ভ্যাকসিন প্রমাণ পত্রে বুস্টার ডোজের প্রমাণও সংযুক্ত হতে পারে।
বর্তমানে আমিরাত গামী ফ্লাইটে যাত্রীদের প্রবেশের জন্য কোভিড-১৯ নেগেটিভ রিপোর্ট দেখাতে হয়। ভ্যাকসিন চলে আসলে বিমান সংস্থাগুলো যাত্রীদের কাছে ভ্যাক্সিনেশন সার্টিফিকেট দেখানোর নিয়ম জারি করতে পারে।
বর্তমানে ১৫০টির বেশি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন পরীক্ষাধীন আছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন ভ্যাকসিনের বিভিন্ন দামের কথাও শোনা যাচ্ছে। ভ্যাকসিন নিয়ে সামনের সারিতে কাজ করা কর্মীরা বলছেন, প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনের আনুমানিক মূল্য সর্বনিম্ন চার ডলার ও সর্বোচ্চ ৩৭ ডলার হতে পারে।
ইনস্যুরেন্সবিহীন, নিম্ন আয়ের এবং বেকার জনগোষ্ঠীর জন্য বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেয়ার প্রস্তাব উঠলেও এব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
বাধ্যতামূলক আইন জারি হলেও তা বাধার মুখে পড়বে। সম্প্রতি একটি জরিপে দেখা গেছে, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বিনামূল্যে দেয়া হলেও ৩৫ শতাংশ মার্কিন নাগরিক ভ্যাকসিন নেবেন না।
ভ্যাকসিন বিরোধী মনোভাব খুব বেশি না হলেও মানুষের মধ্যে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় কাজ করছে।
ইতোপূর্বে ভ্যাকসিন বিরোধী ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে কিছু তথ্য ছড়ায়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল, বাধ্যতামূলক হাম, মাম্পস ও রুবেলার ভ্যাকসিনের ফলে শিশুরা অটিজমে আক্রান্ত হতে পারে। এই দাবী ভুল প্রমাণিত হলেও এর প্রচারের ফলে ভ্যাকসিন নেয়ার সংখ্যা কিছুটা কমে যায়।
কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন পরীক্ষাধীন থাকাকালীনই এ ধরনের ভ্যাকসিন বিরোধী ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে।
ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ও সুরক্ষা নিয়ে আশংকায় থাকা জনগোষ্ঠীও ভ্যাকসিন গ্রহণের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত হতে পারে।
এব্যাপারে কাপলান বলেন, ' একটি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিরাপদ ও কার্যকর প্রমাণিত হলেই বেশিরভাগ মানুষ ভ্যাকসিন গ্রহণ করবে। আর বেশিরভাগ মানুষ চাইলে ভ্যাকসিন বাধ্যতামূলক করার ও প্রয়োজন হবেনা। '