বালি দ্বীপে নেই পর্যটক, লোকালয়ে ক্ষুধার্ত বানরের হানা
পছন্দসই খাবারের অভাবে গ্রামবাসীদের বসতবাড়িতে বিচরণ শুরু করেছে ইন্দোনেশিয়ার বালির রিসোর্ট দ্বীপের বানরেরা। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে পর্যটক নেই দ্বীপটিতে। পর্যটকদের কাছ থেকে কলা, চিনাবাদাম কিংবা অন্য কোনো সুস্বাদু খাবার পেয়ে অভ্যস্ত বানরগুলোকে তাই থাকতে হচ্ছে ক্ষুধার্ত।
সাংহে গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রায় ৫০০ মিটার দূরের এক অভয়ারণ্য থেকে ধূসর লম্বা-লেজওয়ালা ম্যাকাকরা (বানরবিশেষ) খাবারের উদ্দেশ্যে তাদের বাড়ির ছাদে চলে আসছে।
গ্রামে বানরদের এমন বিক্ষিপ্ত ছোটাছুটির ফলে আক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় চিন্তিত সেখানকার বাসিন্দারা। এলাকাটির বাসিন্দা সাসকরা গুস্তু আলিত বলেন, 'ক্ষুধার্ত বানরগুলোর আরও বেশি হিংস্র ও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠার ভয় পাচ্ছি আমরা।'
এমন পরিস্থিতি যেন না হয়, সেজন্য সাংহে মানকি ফরেস্টে ফল, চিনাবাদাম ও অন্যান্য খাবার রেখে আসছেন গ্রামের লোকেরা।
অভয়ারণ্যটিতে প্রায় ৬০০টি ম্যাকাকের বসবাস। লম্বা জায়ফল গাছ থেকে ঝুলন্ত ও বিখ্যাত 'পুরা বুকিত সারি' মন্দিরের দিকে লাফিয়ে ওঠা এসব বানরকে পবিত্র হিসেবে গণ্য হয়।
স্বাভাবিক সময়ে ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্বে সুরক্ষিত বনাঞ্চলের এই এলাকাগুলো বিয়ের ছবির জন্য স্থানীয় বাসিন্দা, এমনকি আন্তর্জাতিক দর্শনার্থীদের কাছে জনপ্রিয়। তখন এ এলাকার বানরগুলোকে কয়েকটি চিনাবাদাম খাওয়ানো হলে সহজেই সেগুলো মানুষের কাঁধে বা কোলে এসে বসতো।
মূলত, পর্যটনই বালির ৪ মিলিয়ন অধিবাসীদের আয়ের প্রধান উৎস। করোনা মহামারির আগে বছরে ৫ মিলিয়নেরও বেশি পর্যটকের সমাগম ছিল এ দ্বীপে।
এছাড়া, সাংহে মানকি ফরেস্টে সাধারণত প্রতি মাসে প্রায় ৬ হাজার দর্শনার্থী ভ্রমণে যেতেন। তবে গত বছর মহামারি ছড়িয়ে পড়ায় এবং আন্তর্জাতিক যাত্রী কমে যাওয়ায় এ সংখ্যা নেমে এসেছে প্রায় ৫০০-তে।
জুলাই থেকে ইন্দোনেশিয়া দ্বীপে সকল বিদেশি ভ্রমণকারী নিষিদ্ধ করা হয়। একইসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য অভয়ারণ্যটি বন্ধ করে দেওয়ার পর সেখানে কেউই ছিল না।
ফলে একদিকে যেমন সেখানকার বানরগুলো অতিরিক্ত খাবার থেকে বঞ্চিত হয়েছে, অপরদিকে অভয়ারণ্য কর্তৃপক্ষ হারিয়েছে আয়ের উৎস। এ কারণে বানরের জন্য খাবার কেনার অর্থেরও অভাব চলছে বলে জানান অপারেশন ম্যানেজার মেড মোহন।
তিনি বলেন, গ্রামবাসীদের অনুদান যদিও সাহায্য করেছে, কিন্তু অর্থনৈতিক নানা সমস্যার কারণে তারাও অনুদানের পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছেন। 'দীর্ঘস্থায়ী এ মহামারির প্রভাব আমাদের প্রত্যাশার বাইরে,' যোগ করেন মেড মোহন।
অভয়ারণ্যটির বানরগুলোর দৈনিক খাবার খরচ প্রায় ৮ লাখ ৫০ হাজার রুপিয়া (৬০ ডলার) বলে জানান মেড মোহন। এ প্রাণীর প্রধান খাদ্যের মধ্যে রয়েছে কাসাভা (২০০ কিলোগ্রাম বা ৪০ পাউন্ড) ও কলা (১০ কিলোগ্রাম বা ২২ পাউন্ড)।
ম্যাকাক মূলত একটি সর্বভুক প্রাণী। এগুলো জঙ্গলের বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ খেতে পারে। কিন্তু সাংহে অভয়ারণ্যের ম্যাকাকগুলোর বছরের পর বছর ধরে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ থাকায় ওদের খাদ্যাভ্যাস ভিন্ন। তাছাড়া, নিজেদের খাবারের দায়িত্ব নিতে এসব বানর ভয় পায় না বলেও উল্লেখ করেন গুস্তু আলিত।
মাঝে মধ্যেই এসব বানর গ্রামে ঘুরে বেড়ায় এবং ঘরবাড়ির ছাদে বসে সেখানকার টাইলস সরিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। যখন গ্রামবাসীরা তাদের ছাদে ধর্মীয় অর্ঘ (খাদ্য) রাখে, সেসব খেয়ে নেয় বানরগুলো।
গুস্তু আলিত বলেন, 'কিছুদিন আগে আমি সাংহে বনের কাছে একটি মন্দিরের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলাম। গাড়ি পার্ক করে যখনই খাবার ও ফুল-সহ দুটি প্লাস্টিকের ব্যাগ হাতে নেই, হঠাৎ করেই দুটি বানর এসে হাজির হলো এবং প্যাকেট দুটো নিয়ে খুব দ্রুত বনের দিকে ছুটে গেল।'
সাধারণত, এই এলাকার বানরগুলো সারাদিন দর্শনার্থীদের আশেপাশেই থাকে। তাদের সানগ্লাস ও পানির বোতল চুরি করা, কাপড় ধরে টানা, কাঁধে ঝাঁপ দেওয়া ইত্যাদি কাজ করে থাকে প্রাণীগুলো। গুস্তু আলিতের ধারণা, বানরগুলো যতটা না ক্ষুধার্ত, পর্যটক না থাকায় তারচেয়েও বেশি বিরক্ত।
তিনি বলেন, 'এ কারণেই আমি গ্রামবাসীকে বনে এসে বানরগুলোর সঙ্গে খেলতে ও ওদেরকে খাবার দিতে অনুরোধ করেছি। আমি মনে করি, ওগুলোকে হিংস্র হয়ে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে ওদের সঙ্গে যতটা সম্ভব যোগাযোগ থাকতে হবে মানুষের।'
-
সূত্র: এপি