কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকের ঢল
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের সৈকতে কবিতা চত্বর থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার এলাকা । যেখানে কবিতা চত্বর, শৈবাল পয়েন্ট, লাবণী পয়েন্ট, সী গাল পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট ও কলাতলী পয়েন্ট নামের ৭ টি এলাকায় ভাগ করা রয়েছে। আর সেই ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মঙ্গলবার সকাল ৯ টায় দেখা মিলে হাজার হাজার পর্যটকের।
বিজয় দিবসের ছুটিকে কেন্দ্র করে সোমবার থেকে এমন পরিস্থিতি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা পর্যটক সাগরের নীল জলরাশি আর বিস্তৃত বালিয়াড়ি সৈকতের ঘুরছেন পরিবার নিয়ে। সৈকতে বসানো কিটকটের কোনটিই খালি নেই। ঘুরতে আসা পর্যটকদের কেউ ঘোড়ায়, কেউ বিচ বাইকে, কেউ বিস্তৃত সৈকতে ঘুরাঘুরি করে, আবার কেউ সাগরজলে জেটস্কিতে চড়ে আনন্দ করছেন। যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ দূর করতেই তারা এ সাগর পাড়ে ছুটে এসেছেন।
সৈকতে স্নানরত পর্যটকের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালনকারী সী সেইফ লাইফগার্ডের সহকারী ইনচার্জ মোহাম্মদ শুক্কুর জানিয়েছেন, রবিবার থেকে কক্সবাজারে বাড়তে থাকে পর্যটকের আগমন। হাজার হাজার পর্যটকের পদভারে মুখরিত সৈকতের বিস্তৃত এলাকা। এ বিপুল সংখ্যক পর্যটকের নিরাপত্তা দিতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের।
কক্সবাজার আবাসিক হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার জানিয়েছেন, কক্সবাজারের সাড়ে ৫ শতাধিক আবাসিক প্রতিষ্ঠানের সবগুলোতে ৯০ থেকে শতভাগ বুকিং রয়েছে। সে হিসেবে কক্সবাজারে গড়ে দেড় লাখের অধিক পর্যটক অবস্থান করছেন। যা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত থাকবে।
তিনি জানান, ভরা পর্যটন মৌসুমের পাশাপাশি বিজয় দিবসের ছুটিতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছেন ভ্রমণপিপাসু এসব মানুষ। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ায় কেউ এসেছেন সন্তানদের, কেউ এসেছেন বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার নিয়ে। ফলে পর্যটক আগমনে ব্যবসাও ভালো হচ্ছে। সমিতির পক্ষে পর্যটকদের সেবা নিশ্চিত করতে নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে যেন কোন পর্যটকের কাজ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে হয়রানি করা না হয় তার জন্য নির্দেশনা রয়েছে।
তারপরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রয়েছে পর্যটকদের।
সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে কথা হয়েছে রাজধানী ঢাকার মিরপুর থেকে আসা আজমী ফারুক নামে এক স্কুল শিক্ষকের সাথে। তিনি জানান, বিজয় দিবসের ছুটিতে স্বপরিবারে কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছেন। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, দরিয়ানগর, হিমছড়ি, পাথুরে সৈকত ইনানী-পাটুয়ারটেক ঘুরেছেন। প্রকৃতি উপভোগে ক্ষণিকের জন্য ভুলে গেছেন যান্ত্রিক জীবনের কোলাহল।
কুমিল্লার সরকারি কর্মকর্তা রফিকুল হুদা জানান, তাদের কয়েক বন্ধু মিলে স্বপরিবারে কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছেন। তারা বুধবার সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যাবেন। সাগর ভ্রমণে এসে বার বার মুগ্ধ হন তারা।
সন্তানদের পরীক্ষা শেষে সমুদ্র ভ্রমণে আসবেন এমন পূর্ব পরিকল্পনা ছিল খুলনার ব্যবসায়ী আয়াছ রহমানের। তিনি এক সপ্তাহ পর্যন্ত কক্সবাজার ভ্রমণে থাকতে চান। তিনি বলেন, সমুদ্র সৈকত ছাড়া মেরিন ড্রাইভ হয়ে টেকনাফ সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত যাবো। দেখে আসবো ঐতিহাসিক প্রেমের নিদর্শন মাথিন কূপ। চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, রামুর বৌদ্ধ পল্লিও দেখার ইচ্ছা রয়েছে তার।
কক্সবাজার হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, ১৬ ডিসেম্বর থেকে লাখেরও বেশি পর্যটক ঘুরতে এসেছেন। সাড়ে ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেলের ৯০ শতাংশের বেশি কক্ষ বুকিং রয়েছে। আগামী ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত পর্যটক আগমনের এ চিত্র অব্যাহত থাকবে।
সী ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানিয়েছেন, ১ ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজার শহর থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ৮ টি জাহাজ চলাচলের জন্য অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু সরকারি সিদ্ধান্ত মতে ২ হাজারের বেশি পর্যটক নেওয়া যাচ্ছে না। ফলে কখনও ৩ টি কখনও ২ টি জাহাজ দ্বীপে যাচ্ছে। বিজয় দিবস ঘিরে পর্যটকের চাপ রয়েছে। ফলে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেক পর্যটক ইচ্ছা থাকার পরও দ্বীপ ভ্রমণে যেতে পারছেন না।
ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার জোনের জ্যৈষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার আবুল কালাম জানান, তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে পুলিশ পর্যটকের নিরাপত্তার পাশাপাশি হয়রানি রোধে কাজ করছেন। বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযোগ বক্স স্থাপন করা হয়েছে। অভিযোগ এলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষে ইনানী ও পাটুয়ারটেকের সৈকত, সেন্টমার্টিন, হিমছড়ি ঝর্ণা সহ অন্যান্য স্পটেও দায়িত্ব পালন করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।