ব্রিটিশ মিউজিয়ামের ভল্টে পাওয়া গেল ভূতের প্রাচীনতম চিত্রকর্ম
ব্রিটিশ মিউজিয়ামের ভল্টে একটি অস্পষ্ট চিত্রকর্ম পাওয়া গেছে, এটিই এখন পর্যন্ত পাওয়া ভূতের প্রাচীনতম চিত্রকর্ম।
প্রায় ৩ হাজার ৫০০ বছর আগের এ চিত্রকর্মটি। প্রাচীন ব্যাবিলনীয় মাটির ফলকটিতে দেখা যাচ্ছে, একটি আত্মাকে পরকালীন জীবন এবং অনন্ত সুখের দিকে নিয়ে যাচ্ছে তার প্রেমিকা। ফলকে আলো ফেললেই দেখা যায় ভূতের প্রতিকৃতিটি। ফলকে ভূতটিকে তার বাহু প্রসারিত করে হাঁটতে দেখা যাচ্ছে। তার কব্জি দড়ি দিয়ে বাঁধা। তাকে পথ দেখিয়ে পরকালের দিকে নিয়ে যাচ্ছে একজন নারী।
ব্রিটিশ মিউজিয়ামের মধ্যপ্রাচ্য বিভাগের কিউরেটর ড. আরভিং ফিংকেল বলেন, "এই দর্শনীয় বস্তুটি এখন পর্যন্ত উপেক্ষিত।এর আগে ফলকটির ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল। বিংশ শতাব্দীতে জাদুঘরে নিয়ে আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত এটি প্রদর্শিত হয়নি।"
তিনি বলেন, "এটি স্পষ্টতই একটি পুরুষ ভূত, তাকে বেশ শোচনীয় অবস্থায় দেখা যাচ্ছে...এক্ষেত্রে এই ভূতের দরকার ছিল একজন প্রেমিকা।"
একজন শয্যাসঙ্গী (বেডফেলো) দেওয়া হলে এই ভূত থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বলে মনে করতো ব্যাবিলনের মানুষ।
চিত্রকর্মের পাশাপশি ফলকটিতে বেশ কিছু লেখাও রয়েছে। যদিও ফলকটি বেশ ছোট এবং এর প্রায় অর্ধেক অংশই পাওয়া যায়নি, এর মধ্যে খোদাই করা লেখাগুলো স্পষ্টভাবেই পড়া যাচ্ছে। ভূত মোকাবেলার নির্দেশনাবলী দেওয়া আছে সেখানে।
ফলকে লেখা রীতি অনুযায়ী, ভূত থেকে মুক্তি পেতে প্রথমে একজন পুরুষ এবং একজন নারীর মূর্তি তৈরি করা হতো। পুরুষটিকে স্বাভাবিক পোশাক পরানো হতো। একইসঙ্গে ভ্রমণের জন্য যথাযথভাবে তৈরি করা হতো তাকে।
অন্যদিকে, নারীটিকে চারটি লাল পোশাকে মুড়িয়ে একটি বেগুনি রঙের পোশাক পরানো হতো। নারী মূর্তিটিকে স্বর্ণের একটি ব্রোচ, বিছানা, চেয়ার, মাদুর, তোয়ালে, চিরুনি এবং ফ্লাস্ক দিয়ে সাজানো হতো। সূর্যোদয়ের সময় এ সংশ্লিষ্ট আচার-অনুষ্ঠান পালন করতো তারা।
ফলকে লেখা সর্বশেষ বাক্যটি ছিল, ""আপনার পেছনে তাকাবেন না!"
ফিংকেল বিশ্বাস করেন, জাদুবিদ্যার প্রচলন ছিল এমন কোনো বাড়ি, কিংবা কোনো মন্দিরে লাইব্রেরির অংশ ছিল এই ফলক।
আগামী ১১ নভেম্বর প্রকাশিত হতে যাওয়া ফিংকেলের আসন্ন বই, 'দ্য ফার্স্ট গোস্টস: মোস্ট অ্যানসিয়েন্ট অব লিগেসিস' –এ ফলকটি আবিষ্কারের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।
তবে ফিংকেল জানান, তিনি নিজে কখনো ভূত দেখেননি। এমনকি ব্রিটিশ মিউজিয়ামের ভল্ট, কিংবা কিংস লাইব্রেরিতে অনেকেরই অশরীরী অবয়ব দেখার অভিজ্ঞতা থাকলেও তার সে অভিজ্ঞতা নেই।
ব্যাবিলনীয় মাটির ফলকটি প্রদর্শন হবে এমন আশাই করছেন তিনি। এসব আবিষ্কার মানুষকে নিজেদের পূর্বপুরুষের কাছাকাছি নিয়ে আসে বলে মনে করেন ফিংকেল।
"ভয়ভীতি, দুর্বলতা এবং অন্যান্য যেসকল বৈশিষ্ট্য মানব জাতিকে এত আকর্ষণীয়' করে তোলে, সেগুলো নিশ্চিতভাবেই ৩ হাজার ৫০০ বছর আগের কোদালের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।"
"আমি চাই মানুষ এই সংস্কৃতি সম্পর্কে জানুক। হলিউডে সবসময় মিশরকেই জয়ী হিসেবে দেখানো হয়। ব্যাবিলনীয় আন্ডারওয়ার্ল্ড যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, সেসব যদি সত্য হয় তাহলে সেগুলো এখনো সেখানেই আছে," বলেন তিনি।
- সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান