ভবিষ্যত মহামারি আরো ভয়াবহ হবে!
বন্যভূমি ও প্রাণিদের রক্ষা করতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া দরকার। এখন থেকেই পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থান রক্ষায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনার জোর দাবি জানিয়েছে বিজ্ঞানীদের আন্তর্জাতিক একটি গ্রুপ। এমনটা না করা হলে; নিকট ভবিষ্যতে কোভিড-১৯ এর চাইতেও ভয়াবহ অতিমারি হানা দেবে বলে তারা হুঁশিয়ারি দেন।
আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধে এ আহবান জানায় ইন্টার গভরমেন্টাল সায়েস-পলিসি প্লাটফর্ম অন বায়োডাইভার্সিটি অ্যান্ড ইকোসিস্টেম সার্ভিসেস (আইপিবিইএস)। এটি সরকারি- বেসরকারি নানা সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয় এবং অলাভজনক সংস্থায় কাজ করা বিজ্ঞানীদের জোট।
তারা সকল দেশের সরকারের প্রতি বনভূমি এবং প্রাণি সংরক্ষণকে অগ্রাধিকার দিয়ে, এজন্য শত শত কোটি ডলার জরুরিভাবে বরাদ্দ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষা করা গেলে মানুষের জীবন রক্ষা করাও সম্ভব, এমন কথা বলা হয় সাম্প্রতিক প্রতিবেদনটিতে। বাস্তুসংস্থান ও বন্যপ্রাণিরা হারিয়ে গেলে; কীভাবে নিত্যনতুন জীবাণু মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পরে নতুন রোগ তৈরি করে- সেই ব্যাখ্যা দিয়েছে গবেষণাটি।
নিবন্ধটি পর্যালোচনায় জড়িত ছিলেন কনসার্ভেশন ইন্টারন্যাশনালের জলবায়ু বিজ্ঞানী লি হান্নাহ।
তিনি জানান, ''বিজ্ঞান মহামারির সঙ্গে পরিবেশ বিপর্যয়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে না। আর বন উজাড় হওয়াটাই মহামারি সৃষ্টির পেছনে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে।''
হান্নাহ এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীরা তাদের সহকর্মীদের গবেষণাটিকে সম্পূর্ণ নির্ভুল বলে, পর্যালোচনায় উল্লেখ করেন। গত জুলাই মাসেই এ মূল্যায়ন দেন তারা।
''বন উজাড় বন্ধ করা ছাড়া ভবিষ্যতে মানুষের সভ্যতা, আর্থিক ব্যবস্থা, সংস্কৃতি কোনো কিছুই নিরাপদ থাকবে না। আরও ঘন ঘন মহামারি দেখা দেবে। মারা যাবে অসংখ্য মানুষ। বিশ্ব অর্থনীতি আরও বড় বিপর্যয়ের শিকার হতেই থাকবে,'' গবেষণা নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।
বাস্তুসংস্থান ধ্বংসের সাথে নতুন ব্যাধির সম্পর্ক কোথায়?
বন্যপ্রানির দেহে অনেক জীবাণুর বসবাস। এগুলো তাদের খুব একটা ক্ষতি করে না। যেমন আমাদের দেহেও অসংখ্য জীবাণু আছে, যাদের সঙ্গে করেই আমরা বাঁচতে শিখেছি।
তবে বন্যজীবের জীবাণু মানুষের মধ্যে ছড়ালে সেটা প্রায়শ'ই বিপজ্জনক পরিণাম ডেকে আনে। তৈরি হয় নতুন কোনো রোগ। এধরনের রোগকে জুনোটিক ডিজিস- নাম দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
কোভিড-১৯, এইচআইভি, ইনফ্লুইয়েঞ্জা, ইবোলা, জিকা এবং নিপাহ ভাইরাস শুরুতে এভাবেই প্রাণিদেহের মাইক্রোব থেকে মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ে।
করোনাভাইরাসের উৎপত্তি সম্পর্কেও আমরা জানি। চীনের উহান নগরের একটি কাঁচাবাজার থেকে ছড়িয়ে পড়েছিল জীবাণুটির প্রাণঘাতী সংক্রমণ। ওই বাজারটিতে সামুদ্রিক মাছ, বন্যপ্রাণির বিক্রিবাট্টা করা হতো।
বন্যজীবের মধ্যে বাদুড়, ইঁদুর, পাখি এবং অন্য কিছু স্তন্যপ্রায়ী প্রাণি আছে – বেশিরভাগ সময় যারা জীবাণু ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, স্তন্যপায়ী এবং পাখিদের মধ্যে কমপক্ষে ১৭ লাখ অনাবিষ্কৃত নতুন ধরনের জীবাণু রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেক মানবদেহে সংক্রমণ ছড়াতে সক্ষম।
''মানুষের কর্মকাণ্ডে বাস্তুসংস্থান ও প্রতিবেশ যেভাবে বিপন্ন হচ্ছে, তার জেরেই বন্যপ্রাণি বাহিত জীবাণুর সংস্পর্শে আরও বেশি করে আসছে মানুষ। নিত্য-নতুন মহামারি দেখা দেওয়া তাই আশ্চর্যের কোনো বিষয় নয়,'' নিবন্ধের লেখকরা জানিয়েছেন।
- সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক