গবেষণায় এমবিএ পরীক্ষায় পাশ চ্যাটজিপিটির; শিক্ষার্থীদের মধ্যে নকল বৃদ্ধির শঙ্কা!
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ার ওহারটন স্কুলের পক্ষ থেকে ওপেন এআই চ্যাটবটের উপর একটি গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে। উক্ত গবেষণায় এআই চ্যাটবট জিপিটি-৩ ব্যবহার করে এমবিএ প্রোগ্রামের পরীক্ষার জন্য ডিজাইনকৃত প্রশ্ন সমাধান করতে দেওয়া হয়। চ্যাটজিপিটির পুরনো ভার্সন হিসেবে খ্যাত এ এআই চ্যাটবটটি গবেষকদের অবাক করে সফলভাবে বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তর দিতে সমর্থ হয়েছে।
গবেষণার অংশ হিসেবে নেওয়া পরীক্ষায় জিপিটি-৩ চ্যাটবটটি বি- থেকে বি গ্রেডের স্কোর অর্জন করে। এ বিষয়ে গবেষণাটির তত্ত্বাবধায়ক প্রফেসর ক্রিস্টিয়ান টারউইচ জানান, পিআর রিভিউয়ের জন্য অপেক্ষায় থাকা এ গবেষণাটির ফলাফল পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, এআই চ্যাটবট জিপিটি-৩ খুবই দুর্দান্ত কাজ করেছে। পরীক্ষার প্রশ্নে থাকা কেস স্টাডি থেকে শুরু করে মৌলিক ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নেগুলোর সঠিক জবাব দিতে সমর্থ হয়েছে।
তবে একইসাথে প্রফেসর ক্রিস্টিয়ান টারউইচ গবেষণালব্ধ ফলাফলে নিজের শঙ্কা প্রকাশ করেন। কেননা এ গবেষক ধারণা করছেন যে, এআই চ্যাটবটের সঠিক ফলাফল দিতে পারার এ সক্ষমতার কারণে শিক্ষার্থীরা বাড়ির কাজ, অ্যাসাইনমেন্ট ও পরীক্ষায় নকলের আশ্রয় নিতে পারেন। একইসাথে এই চ্যাটবটটি যেকোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের থাকা বিশ্লেষক, ম্যানেজার ও উপদেষ্টার জন্য বরাদ্দকৃত বহু কাজ একাই করে ফেলার সক্ষমতা রয়েছে।
এআই চ্যাটবট জিপিটি-৩ এর এতসব ক্ষমতা গবেষণায় উঠে আসলেও বেশ কয়েকটি সীমাবদ্ধতার বিষয়ও উঠে পরেছে। এ বিষয়ে ড. টারউইচ জানান, এতসব সক্ষমতার মাঝেও চ্যাটবটটি মাত্র ষষ্ঠ গ্রেডের কয়েকটি অঙ্ক ভুল করে বসেছে। একইসাথে চ্যাটবটটি কোনো বিষয়ের ওপর প্রক্রিয়া বিশ্লেষণের উচ্চতর দক্ষতাসমৃদ্ধ প্রশ্নগুলোর জবাব ঠিকঠাক দিতে পারেনি।
ওহারটন স্কুলের এ প্রফেসর মনে করে, তার সম্পাদিত এ গবেষণাটি বিজনেস স্কুলগুলোর শিক্ষা সংক্রান্ত ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হবে। গবেষণালব্ধ এ ফলাফলের উপর ভিত্তি করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের বিষয়টি মাথায় রেখে সময়পোযোগী এক্সাম পলিসি ও কারিকুলাম পুনরায় নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়াও শুধু তথ্য নির্ভর না হয়ে বাস্তব জীবনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য উপযোগী কাজ করতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
গত ডিসেম্বরে ওপেন এআই প্ল্যাটফর্ম চ্যাটজিপিটি হুট করেই ব্যাপক আলোচনায় আসে। চ্যাটবটটি একদিকে অজস্র তথ্যকে গুছিয়ে একসাথে সাজিয়ে দিতে পারার ক্ষমতার জন্য এবং অন্যদিকে নানা জটিল বিষয়ের যৌক্তিক ও বিন্যাস্ত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের জন্য বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ধারণা করা হচ্ছে, ওপেন এআই প্ল্যাটফর্মের শক্তিশালী এ আত্মপ্রকাশ বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহৃত সার্চ ইঞ্জিন গুগলকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করবে।
যদিও এমবিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণের ফলাফল আসা এ গবেষণাটির পিআর রিভিউ এখনো বাকি তবুও সম্প্রতি আরেকটি পৃথক গবেষণা যেন এই গবেষণার দাবিকে আরও জোরালো করছে। কেননা সম্প্রতি সংগঠিত আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, কোন রকম প্রশিক্ষণ ছাড়াই চ্যাটজিপিটি তিন পর্বের ইউএস মেডিক্যাল লাইসেন্সিং প্রোগ্রামের পরীক্ষা মোটামুটিভাবে পাশ করে ফেলতে পারে। অন্যদিকে ঠিক এই পরীক্ষাটি পাশ করতে একজন শিক্ষার্থীকে মোট ছয় বছর মেডিক্যাল বিষয়ে একাডেমিক পড়াশোনা করতে হয়।