আদিবাসী ‘নুউ’ ভাষা জানা একমাত্র ব্যক্তি ইসো! ৯০ বছর বয়সেও ভাষাটি রক্ষায় করছেন সংগ্রাম
উপনিবেশ এবং বর্ণবাদের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার আদিবাসী ভাষা 'নুউ' একেবারেই হারিয়ে যেতে বসেছে। বর্তমানে ৯০ বছর বয়সী ক্যাটরিনা ইসো হচ্ছেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি 'নুউ' ভাষায় কথা বলতে পারেন। খবর রয়টার্সের।
ইসো দক্ষিণ আফ্রিকার নর্দান কেপ প্রদেশে বসবাস করেন। শৈশবে তাকে নিজের মাতৃভাষা 'নুউ'-তে কথা বলতে যেয়ে উপহাসের স্বীকার হতে হতো। এমনকি আদিবাসী ভাষা হওয়ায় অনেকেই ভাষাটিকে 'কুৎসিত ভাষা' হিসেবেও আখ্যায়িত করতেন।
এ বিষয়ে ইসো বলেন, "আমরা তরুণ বয়সে মাতৃভাষায় কথা বলতে লজ্জিত বোধ করতাম।" নিজেদের মাতৃভাষার বদলে তাদের 'আফ্রিকান্স' ভাষায় কথা বলতে হতো। এ ভাষাটি দেশটির শাসন ক্ষমতায় থাকা শ্বেতাঙ্গ শাসকগোষ্ঠীর চাপিয়ে দেওয়া ভাষা ছিল।
তবে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর ইসো নিজ মাতৃভাষা সংরক্ষণের গুরুত্বটি বুঝতে পারেন। তাই তিনি নিজ শহর উপিংটনে 'নুউ' ভাষায় শিক্ষাদানের জন্য একটি স্কুল স্থাপন করেন।
আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলে ইউরোপীয় উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার আগে শিকারি গোষ্ঠীগুলোর নিজেদের পৃথক পৃথক ভাষা ছিল। 'নুউ' ছিল তেমনি একটি গোষ্ঠীর ভাষা।
দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের আদিবাসী গোষ্ঠীর এ ভাষাগুলো মূলত 'সান' ভাষাগোত্রের অন্তর্ভুক্ত। সময়ের সাথে সাথে বেশিরভাগ ভাষাই এখন বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।
এ বিষয়ে দ্য ওয়েস্টার্ন কেপ ইউনিভার্সিটির ভাষাবিদ লরাটো মোকওয়েনা বলেন, "আফ্রিকায় উপনিবেশ ও বর্ণবাদের সময়টাতে আদিবাসী গোষ্ঠীর নিজেদের ভাষায় কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। যার ফলে বর্তমানে খুব অল্প সংখ্যক মানুষ রয়েছে যারা এ আদিবাসী ভাষায় কথা বলতে পারেন।"
লরাটো মোকওয়েনা মনে করেন, ক্যাটরিনা ইসো বেঁচে থাকায় 'নুউ' ভাষা রক্ষা করার সুযোগ এখনও রয়েছে। তাই ভাষাটি সংরক্ষণ ও লিপিবদ্ধ করার সুযোগটি কাজে লাগানো উচিত।
ইসো ২০০৫ সালে স্থানীয় বাচ্চাদের 'নুউ' ভাষা শেখানো শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি তার নাতনী ল্যাংগুয়েজ এক্টিভিস্ট ক্লোডিয়া স্নাইম্যানকে সাথে নিয়ে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।
তবে করোনা মহামারির সময়ে চলমান লকডাউনে স্কুলটি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে স্কুলটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় রয়েছে।
স্নাইম্যান স্বপ্ন দেখেন, 'নুউ' ভাষা রক্ষায় একদিন তিনি নিজে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করবেন। একইসাথে ভাষাটিকে রক্ষায় নিজ জায়গা থেকে সব ধরনের চেষ্টা করে যাবেন এ ল্যাংগুয়েজ এক্টিভিস্ট।
স্নাইম্যান বলেন, "আমি খুবই উদ্বিগ্ন। বর্তমানে ভাষাটি যে অবস্থায় রয়েছে, সে অবস্থায় থাকার কথা নয়। যদি ইসো মারা যান, তবে সব শেষ।"
ইসোর দুই বোন জীবিত থাকলেও তারা 'নুউ' ভাষায় কথা বলতে জানেন না। তাই তিনি কারো সাথেই ভাষাটি ব্যবহার করে কথোপকথন করতে পারেন না বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন।
তবে পরিবারের সদস্য ও সন্তানদের ইসো ভাষাটির কিছু কিছু শব্দ ও বাক্যাংশ শিখিয়েছেন।