'বিরক্তিকর অ্যালার্ম' শুনে ফ্রিজার বন্ধ করে ২০ বছরের গবেষণা নষ্ট করে দিলেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী!
বেশ কয়েকবার 'বিরক্তিকর অ্যালার্ম' শুনে ফ্রিজার বন্ধ করে দিয়ে নিউইয়র্কের রেনসেলিয়ার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রায় ২০ বছরের গবেষণা নষ্ট করে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। ওই পরিচ্ছন্নতাকর্মীর নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়ের করা মামলায় এমনটা বলা হয়েছে।
তবে এ ঘটনায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়নি। তিনি ডেইগল ক্লিনিং সিস্টেমস ইনক. এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ একজন কন্ট্রাক্টর ছিলেন এবং ২০২০ সালে কয়েক মাস তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালাবামার ট্রয় শহরের বেসরকারি গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কাজ করেছিলেন।
গবেষণা নষ্ট হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি ক্ষতিপূরণ এবং আইনি খরচা দাবি করেছে ডেইগল ক্লিনিং সিস্টেমস এর কাছে।
জানা গেছে, তাদের ল্যাবের ফ্রিজারে সেল কালচার ও স্যাম্পল ইত্যাদিসহ ২০ বছরের অধিক সময় ধরে গবেষণা সংরক্ষিত ছিল। দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে যে 'তিন ডিগ্রির চাইতে সামান্যও তাপমাত্রা ওঠানামা করলেই মারাত্মক ক্ষতি হবে'।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে না যে, ওই পরিচ্ছন্নতাকর্মী এখানে অপরাধী। বরং তারা ডেইগল ক্লিনিং সিস্টেমস'কে দায়ী করেছে তাকে যথাযথভাবে প্রশিক্ষণ না দেওয়ায় ও সুপারভাইজ না করায়।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, "বিবাদীর অসতর্কতা, জ্ঞানের অভাব, তদারকি না করা এবং কর্মীকে নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম হওয়ায় আমাদের ল্যাবে এ ধরনের বিপর্যয় ঘটে গেছে এবং গবেষণা নষ্ট হয়েছে।" সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ বিষয়ে ডেইগল ক্লিনিং সিস্টেমস এর অ্যাটর্নিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে।
এদিকে রেনসেলিয়ার পলিটেকনিক-এর হয়ে কাজ করা অ্যাটর্নি মাইকেল গিনসবার্গ বলেন, "আমাদের মনে হয় না ক্লিনিং কোম্পানি ইচ্ছা করে কোনো খারাপ কাজ করেছে। এটা আসলে একজন ব্যক্তির ভুলের জন্য হয়েছে। কিন্তু তবুও এই মামলায় কোম্পানিকেই দায়ী করা হয়েছে কারণ তারা ভালোভাবে ওই কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। একজন ক্লিনারকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময়ই শেখানো উচিত যে ইলেক্ট্রিক্যাল কোনো সমস্যায় যেন সে হাত না দেয়।"
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, সেল কালচার এবং নমুনাগুলো মাইনাস আশি ডিগ্রি তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে এবং তিন ডিগ্রির চেয়ে সামান্যও তাপমাত্রা ওঠানামা করলেও এগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। তাই তাপমাত্রা মাইনাস ৭৮ ডিগ্রিতে আনলে বা ৮২ ডিগ্রিতে নিয়ে গেলেও অ্যালার্ম বেজে উঠবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক এবং বারুক 'সিক্সটি সেন্টার ফর বায়োকেমিক্যাল সোলার এনার্জি রিসার্চ-এর পরিচালক কে ভি লক্ষ্মী এই গবেষণা প্রকল্পটি দেখাশোনা করেছেন। ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তিনিই লক্ষ্য করেন যে অ্যালার্ম বেজে উঠেছে কারণ ফ্রিজারের তাপমাত্রা মাইনাস ৭৮ ডিগ্রিতে চলে এসেছে। কিন্তু এই অ্যালার্ম সত্ত্বেও লক্ষ্মী এবং তার টিম সিদ্ধান্ত নেন যে, জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করার আগপর্যন্ত এই তাপমাত্রায়ও নমুনাগুলো ভালো থাকবে।
লক্ষ্মী যখন ফ্রিজারটির প্রস্তুতকারকের অপেক্ষায় ছিলেন যে তিনি এসে মেরামত করবেন, তখন তার টিম ফ্রিজারের আউটলেট ও সকেটের পাশে একটি সেফটি লক বক্স লাগিয়ে দিয়েছিলেন। আর ফ্রিজারের মধ্যেও একটি সতর্কবার্তা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
সেই বার্তায় লেখা ছিল যে, "এই ফ্রিজারটিতে শব্দ হচ্ছে কারণ এটার মেরামতের কাজ চলছে। প্লাগ খুলে ফেলবেন না বা এটা সরাবেন না। এই ফ্রিজার পরিষ্কার করার কোনো দরকার নেই। আপনি যদি শব্দ বন্ধ করতে চান তাহলে ৫-১০ সেকেন্ডের জন্য অ্যালার্ম/টেস্ট মিউট বাটন চেপে ধরতে পারেন।"
কিন্তু ১৭ সেপ্টেম্বর ওই পরিচ্ছন্নতাকর্মী যখন অ্যালার্মের শব্দ শুনলেনে, তার ভাষায় 'বিরক্তিকর শব্দ'; তখন তিনি নিজেই এগিয়ে গেলেন শব্দ বন্ধ করতে। ফ্রিজারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছিল যে সার্কিট ব্রেকারটি, সেটি তিনি উল্টে দেন এবং ভুলে 'অন' থেকে 'অফ' করে দেন। এরপর ফ্রিজারের তাপমাত্রা মাইনাস ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে চলে আসে... এমনটাই বলা হয়েছে মামলাতে।
পরদিন গবেষণা শিক্ষার্থীরা এসে দেখে যে ফ্রিজারটি সুইচড অফ করা এবং "সংরক্ষণের বদলে বেশিরভাগ সেল কালচারই ধ্বংস হয়ে গেছে, এর ফলে ২০ বছরেরও বেশি গবেষণা নষ্ট হয়েছে।"