পাবজি খেলতে গিয়ে প্রেম; ভারত-পাকিস্তানের প্রেমিক জুটির ঠিকানা এখন কারাগার!
জনপ্রিয় অনলাইন গেমস পাবজি খেলার মাধ্যমে হয়েছিল পরিচয়। সেই পরিচয় থেকেই গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। অতঃপর সম্পর্কের এক পর্যায়ে বর্তমানে দুজনের জায়গা হয়েছে কারাগারে। খবর বিবিসির।
গল্পটা মূলত ২৭ বছর বয়সী পাকিস্তানি গৃহবধূ সীমা গুলাম হায়দার ও ২২ বছর বয়সী ভারতীয় তরুণ শচীন মিনারের। সীমা নামের এই নারী শচীনের সাথে সংসার করতে নিজের ছোট চার সন্তানসহ ভিসা ছাড়াই অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন।
পুলিশ জানায়, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সীমা ও শচীন ভারতের উত্তর প্রদেশের গ্রেটার নয়ডা অঞ্চলে বসবাস করছিলেন। গত মঙ্গলবার (৪ জুলাই) এ জুটিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আদালতের পক্ষ থেকে সীমা ও শচীনকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। একইসাথে ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। মেয়ে সন্তানদেরকে মায়ের সাথেই জেলে রাখা হয়েছে।
সীমা-শচীনের পক্ষ থেকে রিপোর্টারদের বলা হয়, তারা একে অপরকে বিয়ে করতে চান এবং সংসার করতে চান। অন্যদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘটনাটি নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।
গ্রেপ্তারের পর ভারত-পাকিস্তানের এই জুটির প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। বাস্তব জীবনের সম্পর্ক গড়ে তুলতে ভার্চুয়াল জগতও যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, সেই বিতর্কই যেন পুনরায় উসকে দিয়েছে এই প্রেম কাহিনী।
২০১৪ সালে সীমার বিয়ে হয়েছিল পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের গুলাম হায়দার নামের এক ব্যক্তির সাথে। এ দম্পতির ঘরে রয়েছে চার সন্তান; তিন মেয়ে ও এক ছেলে।
বিয়ের পাঁচ বছর পর স্বামী গুলাম প্রবাসী হিসেবে কাজের সন্ধানে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। এরপর থেকেই স্ত্রী সীমা নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পাবজি খেলা শুরু করেন।
বিবিসি হিন্দিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সীমা বলেন, "আমি প্রতিদিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা পাবজি খেলতাম। গেমসটি খেলতে খেলতে আমার শচীনের সাথে পরিচয় হয়। আমরা দুজনের মধ্যে ফোন নম্বর আদান-প্রদান করি। এরপর থেকে প্রতিনিয়ত কথা বলতে থাকি।"
টানা তিন বছর ধরে যোগাযোগের এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তখন সীমা পাকিস্তান থেকে ভারতে পালিয়ে যেয়ে শচীনকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন।
গ্রেপ্তারের পর পুলিশকে সীমা অভিযোগ করেন, তার স্বামী গুলাম তাকে নির্যাতন করতেন। তাই তিনি গুলামের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করে শচীনের কাছে চলে এসেছেন।
তবে স্বামী গুলাম অবশ্য নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। এমনকি তাদের মধ্যে এখনো বিবাহ বিচ্ছেদ হয়নি বলে জানিয়েছেন।
বরং স্বামী গুলাম অভিযোগ করেন, স্ত্রী সীমা পাকিস্তানে থাকা তাদের বাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছেন। একইসাথে তাদের সন্তান ও গহনাসহ ভারতে পালিয়ে এসেছেন।
গ্রেটার নয়ডার জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা মিয়া খান বিবিসিকে জানান, সীমা ও শচীন গত মার্চে প্রথমবারের মতো নেপালে দেখা করেছিলেন। কিন্তু ঐ সাক্ষাতের কিছুদিন পর তারা নিজ দেশে ফিরে যান।
কিন্তু এরপর গত মে মাসে সীমা ফের টুরিস্ট ভিসায় চার সন্তানসহ নেপালে ভ্রমণ করেন। সেখান থেকে তিনি বাসে করে বিনা ভিসায় অবৈধভাবে দিল্লীতে চলে আসেন।
পুলিশের কাছে সীমা অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি তার স্বামীর বাড়ি বিক্রি করেনি। বরং ভ্রমণের অর্থ যোগাড় করতে নিজের বাবা-মার কাছে থেকে পাওয়া একটি সম্পত্তি বিক্রি করেছেন পাকিস্তানি এ নারী। একইসাথে নেপাল হয়ে ভারতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের ধারণাটি সীমা ইউটিউব দেখে পেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন।
অন্যদিকে গ্রেটার নয়ডায় বসবাস করা শচীন একটি মুদি দোকানে চাকরি করেন। সীমা চলে আসার পর তিনি একটি ঘর ভাড়া নিয়ে সন্তানসহ একত্রে বসবাস করতে থাকেন।
ঘরটির মালিক গিরিস কুমার বিবিসিকে জানান, তিনি এ দম্পতিকে বিন্দুমাত্র সন্দেহ করেননি। কেননা শচীন বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় প্রয়োজনীয় সকল কাগজ পত্রই জমা দিয়েছিলেন। এমনকি দম্পতির ঘরে শচীনের পিতামাতারও যাওয়া আসা ছিল।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার তথ্যমতে, জুটিটি গ্রেপ্তারের আগে এক আইনজীবীর সাথে দেখা করে সীমার ভারতের বৈধভাবে বসবাসের জন্য করণীয় সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। তবে ঐ আইনজীবী উল্টো পুলিশকে পুরো ঘটনা জানিয়ে দেয় এবং পরবর্তীতে পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করে।
এ সম্পর্কে ঐ আইনজীবী বলেন, "সীমা ও তার সন্তানের কাছে পাকিস্তানি পাসপোর্ট দেখে আমি আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম। তিনি আমার কাছে ভারতে বিয়ে করার প্রসেস সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন।"
আইনজীবীর দাবি অনুযায়ী সীমা তাকে জানায়, তার স্বামী তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। গত চার বছরে স্বামী গুলামের সাথে তার দেখাও হয়নি।
আইনজীবী আরও বলেন, "সীমাকে ভারতীয় ভিসা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি দ্রুত ঐ স্থান ত্যাগ করেন। এরপর আমার এক সহযোগী তাকে পিছু করেন। এ জুটি রাবুপুরা নামের এক স্থানে থাকছেন বলে নিশ্চিত হলে আমি সেটা পুলিশকে জানিয়ে দেই।"
সীমার ভারতীয় ভিসা না থাকার বিষয়টি জানতেন শচীনের বাবা। সেটা জেনেও অবৈধভাবে সীমাকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ইতোমধ্যেই সীমা ও শচীন ভারত সরকারের কাছে আপিল করেছেন। আপিলে তাদের দুজনের বিয়ে করার সিদ্ধান্তে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
অন্যদিকে স্বামী গুলাম অভিযোগ করেন, পাবজি গেমস খেলার মাধ্যমে তার স্ত্রী সীমা বিপথে গিয়েছে। তিনি তার সন্তান ও স্ত্রীকে দেশে ফেরত নিতে চান।