শূকরের হৃৎপিণ্ড পাওয়া বেনেট ছিলেন জেলখাটা আসামী!
ডেভিড বেনেট বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি যার শরীরে সম্প্রতি সফলভাবে শুকরের হৃৎযন্ত্র প্রতিস্থাপিত হয়েছে। কিন্তু বেনেট নাকি একজনকে সাত বার ছুরি মেরে আহত করেছিলেন! ফলাফলে ওই ব্যক্তি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হন এবং ধুঁকে ধুঁকে জীবনের শেষ দিনগুলো পার করেন বলে অভিযোগ তুলেছে আহত ব্যক্তি এডওয়ার্ড শুমেকারের পরিবার।
বেনেটের বয়স এখন ৫৭ বছর। এডওয়ার্ডের বোন লেসলি শুমেকার ডাউনি রেডিও ফোরের একটি শোতে বেনেটকে দোষী সাব্যস্ত করেন।
লেসলি বলেন, আমার ভাই ঐ ঘটনার পরে শারীরিক জটিলতার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন এবং দীর্ঘ দুই দশক ভোগার পরে ২০০৭ সালে তিনি মারা যান।
কিন্তু সার্জারি পরিচালনাকারী টিমের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, কারো আগের জীবনের ক্রিমিনাল রেকর্ড কোনোদিন তাকে চিকিৎসা না দেওয়ার কারণ হতে পারে না।
লেসলি বলেন, "ঘটনাটা কত নির্মম ভাবুন, ১৯৮৮ সালের এপ্রিলে যেদিন ঘটনাটি ঘটে, আমার ভাই তার স্ত্রীর সঙ্গে একান্ত সময় কাটাচ্ছিলেন আর তখন এডওয়ার্ডের বয়স ছিল মাত্র ২২। চরম প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে বেনেট একাধিকবার আমার ভাইকে পেছন থেকে ছুরি মেরেছিলেন।"
শারীরিক আক্রমণ ও গোপনে অস্ত্র বহন করার দায়ে বেনেট দোষী সাব্যস্ত হন এবং ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাকে।
লেসলি বলেন, 'আমি জানতামই না বেনেটের শরীরে শূকরের হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপিত হচ্ছে। আমার মেয়ে টেক্সট করার পরে আমি খবরটি জানতে পারি। মেয়ে লিখেছিল, মা এই সেই লোক যে এডওয়ার্ড মামাকে ছুরি মেরেছিল। এটা জানার পর আমার খুব রাগ হয়েছিল।'
দীর্ঘ সাত ঘন্টা অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে গেছেন বেনেট। এখন দিন দিন তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।
তবে হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনই ছিল বেনেটকে বাঁচানোর একমাত্র উপায়। যদিও এই প্রতিস্থাপনের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ও তার টিকে থাকার সম্ভাবনার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
লেসলি আরও বলেন, 'আমি মনে করি না বেনেট এই হৃদপিন্ড পাওয়ার যোগ্য। তারা বেনেটকে লাইমলাইটে আনার চেষ্টা করছে। তাকে হিরো বানানো হচ্ছে। কিন্তু তিনি সেরকম কেউই নন। আমি মনে করি ডাক্তারদের যে দল এ অপারেশনটি করেছে এর পুরো কৃতিত্ব কেবল তাদেরই পাওয়া উচিত।"
এদিকে ডাক্তাররা বলছেন, ছুরিকাহত হওয়ার পর থেকে ২০০৫ সালে স্ট্রোকের আগপর্যন্ত এডওয়ার্ডকে হুইল চেয়ারে করে চলাফেরা করতে হয়েছিল। তারও দুই বছর পরে ২০০৭ সালে তিনি মারা যান।
দীর্ঘ ১৯ বছর ভুগেছিলেন এডওয়ার্ড। লেসলি বলেন, আমাদের পুরো পরিবারের ওপরই এর প্রভাব পড়েছিল।
মেরিল্যান্ড মেডিকেল সেন্টার কর্তৃপক্ষ অবশ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, 'আগের অপরাধ ধরে কাউকেই চিকিৎসা লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা প্রতিটি রোগীর রোগ অনুযায়ী সেবা করা প্রত্যেকটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা সংস্থার প্রধান দায়িত্ব। সেবা প্রদানের অন্যকোনো মানদণ্ড থাকলে সেটি ভয়ংকর নজির স্থাপন করবে এবং ডাক্তার ও সেবা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ প্রশ্নবিদ্ধ হবে।"
সূত্র: বিবিসি