বিশ্বে প্রথম শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপনের পর রোগী হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলেন
গত ১৬ মার্চ প্রথম জীবিত ব্যক্তি হিসেবে জেনেটিক্যালি এডিটেড (জিনগত পরিবর্তন আনা) শূকরের কিডনি নিয়ে ইতিহাস গড়েন রিচার্ড স্লেম্যান (৬২)। যুগান্তকারী এই অস্ত্রোপচারের পরে এবার হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে তিনি আরও একটি মাইলফলক অর্জন করেছেন।
তবে এই অস্ত্রোপচারের সবচেয়ে কঠিন ধাপ এখন থেকে শুরু, তা হলো প্রতিস্থাপিত কিডনিটি সচল রাখা।
রিচার্ড স্লেম্যান ম্যাসাচুসেটসের বাসিন্দা। তিনি কিডনি রোগের শেষপর্যায়ে ছিলেন। তাই তার দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন ছিল। অবশেষে দীর্ঘ চার ঘণ্টার সার্জারি শেষে চিকিৎসকেরা সফলভাবে স্লেম্যানের শরীরে জিনগতভাবে পরিবর্তিত শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হন।
হাসপাতালের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্লেম্যান জানিয়েছেন হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরতে পারাটা ছিল তার জীবনের 'অন্যতম আনন্দের মুহূর্ত'। এখন তিনি বাড়িতেই সুস্থ হয়ে উঠছেন।
তিনি বলেন, এত বছর ধরে জীবনে প্রভাব ফেলা ডায়ালাইসিসের বোঝা ঝেড়ে ফেলে নিজের পরিবার, বন্ধু ও প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দময় সময় কাটাতে উদ্গ্রীব হয়ে আছি।
অতীতে একাধিকবার মানুষের শরীরে জিনগত পরিবর্তন ঘটানো শূকরের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের চেষ্টা হয়েছে । প্রথমটি ২০২২ সালের জানুয়ারিতে এবং দ্বিতীয়টি ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে। তবে উভয় রোগীই দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে মারা যান এবং তারা কখনও হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরতে পারেননি।
তাই প্রক্রিয়াটিতে এবার যে সফলতা পাওয়া গেছে, বিজ্ঞানীরা সেটিকে প্রতিস্থাপন চিকিৎসায় এক ঐতিহাসিক নজির হিসেবে দেখছেন।
স্লেম্যানের মেডিক্যাল টিম জানিয়েছে, তিনি ভালো আছেন এবং তার নতুন কিডনি ঠিক মতো কাজ করছে।
শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের কিডনি প্রতিস্থাপন বিভাগের মেডিকেল ডিরেক্টর লিওনার্দো ভি রিয়েলা বলেন, 'আমি আজ সকালে তাকে দেখেছি। তিনি দারুণ আছেন।'
স্লেম্যানের চিকিৎসা পদ্ধতিকে বলা হয় জেনোট্রান্সপ্লান্টেশন।
রিয়েলা বলেন, প্রতিস্থাপনের প্রায় এক সপ্তাহ পরে স্লেম্যানের শরীরে তারা প্রতিস্থাপন ব্যর্থ হওয়ার কিছু লক্ষণ দেখতে পান। প্রক্রিয়ার একপর্যায়ে রোগীর শরীরের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিস্থাপিত অঙ্গটিকে গ্রহণ করতে পারছিল না এবং এটিকে আক্রমণ করতে শুরু করে। প্রতিস্থাপন চিকিৎসায় এটি সাধারণ একটি ঝুঁকি। চিকিৎসকরা তাৎক্ষণিক স্টেরয়েড এবং অন্যান্য ওষুধ দিয়ে স্লেম্যানের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে সক্ষম হন।
এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের অর্গান রিজেকশন (অঙ্গ প্রত্যাখ্যান) হতে পারে। স্লেম্যানের বেলায় যেটা ঘটেছিল তাকে বলা হয় সেলুলার রিজেকশন, এটি সবচেয়ে সাধারণ।
প্রতিস্থাপনের পরে যে কোনো সময় রিজেকশন ঘটতে পারে এবং ঝুঁকি কমাতে রোগীকে অবশ্যই সারা জীবন ইমিউনোসপ্রেসিভ ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।
স্লেম্যান হাসপাতালের বাইরে থাকলেও, তাকে প্রতি সপ্তাহে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে যেতে হবে। এসময় চিকিৎসকরা তার রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা করবেন এবং তার স্বাস্থ্যের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবেন।
রিয়েলা বলেন, যদি এক মাসের মধ্যে সবকিছু ঠিকঠাক থাকে, তবে ক্রমে তার হাসাপাতালে চেকআপের পরিমাণ কমানো হবে।
অর্গান রিজেকশন ছাড়াও, আরেকটি সাধারণ ট্রান্সপ্লান্ট জটিলতা হলো সংক্রমণ।
তাই রোগাীদের ইমিউনোসপ্রেসিভ ওষুধ দেওয়ার সময় ডাক্তারদের ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়। খুব কম ডোজ দিলে অর্গান রিজেকশন হতে পারে, আবার খুব বেশি হলে রোগীর সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
ইমিউনোসপ্রেসেন্টস হলো এক ধরনের শক্তিশালী ওষুধ; যা ক্লান্তি, বমি বমি ভাব এবং বমিসহ বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি