‘বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষ’, যিনি প্রমোদতরীতেই কাটিয়েছেন ২৩ বছর!
প্রমোদতরী, যেন উত্তাল সমুদ্রের ভেতর এক ছটাক সুখ। ছুটি কাটানোর জন্য সমুদ্রপ্রেমীদের পছন্দের শীর্ষে থাকে এ বাহন। তবে এক কিংবা দুইদিন নয়, বছরের পর বছর জলের ওপর এ বাহনে ভেসে বেড়ানো কিন্তু চাট্টিখানি কথা না। আর এ অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন "বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষ" মারিও সালসেডো। গত ২৩ বছর ধরে কয়েকশ প্রমোদতরীতে ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা আছে তার। সালসেডোর দাবি, পানিতে ভেসে বেড়ানোই তাকে পরিণত করেছে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষে!
সালসেডোর কর্মজীবনের শুরু করেছিলেন একজন ব্যাংক কর্মকর্তা হিসেবে। জীবনের অনেকটা সময় ব্যাংকে চাকরি করা যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার মায়ামি'র এ বাসিন্দা ঘুরেছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, দেখেছেন প্রচুর মানুষ। তাদের জীবনের আনন্দের মুহূর্তগুলো অনেকটাই কাছ থেকে দেখেছেন তিনি।
একদিন সৈকতে ঘুরতে গিয়ে উপস্থিত সবাইকে অসাধারণ সময় কাটাতে দেখেন তিনি। কিন্তু তখন তার হাতে একটি ব্রিফকেস, পরনে স্যুট-টাই।
"একবার একটি সৈকতে গিয়ে দেখি অসাধারণ সব মানুষরা খুব সুন্দর সময় কাটাচ্ছেন। এতো ভালো লাগছিল তাদের দেখে। তখনই চাকরি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ছাড়তে পারিনি।"
এরপর ১৯৯৭ সালে ৪৭ বছর বয়সে অবশেষে চাকরি ছেড়েই দেন সালসেডোর। তার মতে, "৪৭ বছর বয়সে সিদ্ধান্ত নেই, আর করব না চাকরি। যেমন কথা তেমনি কাজ। প্রচুর টাকা ও অর্থের হাতছানি পেছনে ফেলে আসতে হয়েছিল সেসময়।"
আর পেছনে ফিরে তাকাননি তিনি। জীবনে কখনও প্রমোদতরীতে না চড়লেও ভ্রমণের স্বাদ পেতে তিনি ৬টি অপারেটরের সঙ্গে চুক্তি করে ফেলেন।
একে একে সব কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি শেষ হলে তিনি অনুধাবন করেন, যেমন জীবন খুঁজে এসেছেন এতদিন, প্রমোদতরীতে কাটানো সময়গুলোতে যেন ঠিক তেমন জীবনেরই স্বাদ পেয়েছেন।
ছাপোষা মানুষের ক্ষেত্রে জীবনে একবার প্রমোদতরীতে কাটাতে পারাটাই অনেক সৌভাগ্যের বিষয়। সালসেডোর ক্ষেত্রে ঠিক তার উল্টো, এই প্রমোদতরীই তার জীবন।
২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী মহামারির প্রকোপ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত টানা ২৩ বছরে খুব বেশি হলে দুই-একদিন প্রমোদতরীর বাইরে ছিলেন সালসেডো। এত বছর সমুদ্রে কাটানোর পর আবারও সেই জীবনেই ফিরে যেতে চান তিনি। আর সে লক্ষ্যেই ২০২৩ সালের এপ্রিল নাগাদ কোন কোন প্রমোদতরীর সঙ্গী হবেন, তা ঠিক করে ফেলেছেন ইতোমধ্যে।
প্রমোদতরীর এই ব্যয়বহুল জীবনকে চালিয়ে নিতে এখনও তাকে কাজ করতে হয়। যদিও এ ব্যাপারে কোনো আক্ষেপ নেই এই সাবেক ব্যাংকারের।
অনেকদিন প্রমোদতরীতে চড়ে দেশের বাইরে থাকার পরও তার ভাষ্য, স্থল নয় জলই বেশি টানে তাকে। এমনকি স্বাভাবিক জীবনের প্রতিও আর কোনো টান নেই তার। শুধু বিভিন্ন প্রমোদতরীতে ঘুরে বেড়াতে পারলেই চলবে।
সালসেডো বলেন, "আমার সবকিছুই জাহাজকেন্দ্রিক, এতে আমি এতোটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি আর বিষয়টি আমার জন্য এতোটাই আরামদায়ক যে এর বাইরে অন্য কিছুতে আর ফিরতে চাই না।"
সূত্র: অডিটি সেন্ট্রাল।