হোলি খেলতেন মোগল সম্রাটরাও!
হিন্দু বর্ষপঞ্জি অনুসারে ফাল্গুন পূর্ণিমার দিন উদযাপিত হয় হোলি। অশুভের বিরুদ্ধে শুভের বিজয়ের প্রতীক হিসেবেই দেখা হয় এটিকে। সবার রং-উৎসবে মাতার এই রেওয়াজ অনেক আগে থেকেই চলে আসছে।
এনডিটিভির সূত্র ধরে চলুন শুনি সেই গল্প।
মোগল আমলে হোলি
শুরুর দিকে রং ছড়ানোর এই উৎসবকে ডাকা হতো হোলিকা। আর্যরা নবত্রৈষ্টি যজ্ঞ করতেন এ দিন। মোগল সম্রাট শাহজাহানের শাসনামলে এই উৎসব ঈদ-ই-গুলাবি নামে পরিচিত হয়।
শিব পার্বতীর গল্প
পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, মহাদেব শিবের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চেয়েছিলেন হিমালয়কন্যা পার্বতী। কিন্তু শিব ছিলেন তখন তপস্যায় মগ্ন। সে সময় পার্বতীর অনুরোধে শিবের দিকে মদনবাণ ছোঁড়ে অসময়ে তার তপস্যা ভাঙান কামদেব বা মদনদেব।
শিব তাতে ক্রুদ্ধ হয়ে ত্রিনয়নে মদনদেবকে ভস্ম করে দেন। তবে উদ্দেশ্য সফল হয় পার্বতীর। তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন শিব। ভালোবাসার সেই বিজয় উৎসব আলোকিত হয় হোলির আগুনে।
হিরণ্যকশিপুর কাহিনি
হোলি ঘিরে প্রচলিত আছে হিরণ্যকশিপু ও তার বোন হোলিকার গল্পও। পুরাকালে অত্যাচারী হিরণ্যকশিপু তপস্যা করে ব্রহ্মার কাছ থেকে লাভ করেছিলেন অমরত্ব। দিনে বা রাতে, ঘরে ও বাইরে কোনো প্রাণী, দেবতা, রাক্ষস বা মানুষ তাকে হত্যা করতে পারবে না- ব্রহ্মার কাছ থেকে এমন বর চেয়েছিলেন তিনি।
বর পেয়েই স্বৈরাচারী হয়ে ওঠেন হিরণ্যকশিপু। বিষ্ণুর প্রতি অটল বিশ্বাসী তার পুত্র প্রহ্লাদ ভগবান বিষ্ণুর আশীর্বাদ পেয়েছিলেন। হিরণ্যকশিপু নিজের ছাড়া অন্য কারও প্রশংসা সহ্য করত পারতেন না। কিন্তু প্রহ্লাদ বিষ্ণুর প্রশংসা করলে তাকে হত্যার নির্দেশ দেন। প্রহ্লাদাকে হত্যার জন্য বোন হোলিকার কোলে বসিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু বিষ্ণুর বরে আগুনে হোলিকা পুড়ে গিয়েছিল। প্রহ্লাদ বেঁচে গিয়েছিলেন। সেই থেকে হোলির উৎসব এবং হোলিকা দহন উদযাপিত হয়।
রাধা-কৃষ্ণ ও দোলযাত্রা
তৃতীয় পৌরাণিক কাহিনি বলছে, পুতনা রাক্ষসী এক সুন্দর রমণী রূপে এসে, তার বিষাক্ত দুধ পান করিয়ে শিশু কৃষ্ণকে মারার চেষ্টা করেছিল। দুধের পাশাপাশি শিশু কৃষ্ণ পুতনার প্রাণও নিয়েছিলেন। কথিত আছে, শিশু কৃষ্ণ প্রাণ নেওয়ার পর দেহ অদৃশ্য হয়ে যায় পুতনার। তারপরেই গোয়ালারা গোবরের মূর্তি বানিয়ে তাকে জ্বালিয়ে দেয়।
রাধা ও কৃষ্ণের প্রেমলীলাও হোলির উৎসবে জড়িত। বসন্তের এই মৌসুমে একে অপরকে রঙ দিয়ে রাঙাতেন রাধা-কৃষ্ণ। তাদের এই বৃন্দাবনের লীলা হোলির আখ্যা পায়।
আরও…
যিশুখ্রিষ্টের জন্মের বহু শতাব্দী আগে থেকেই নাকি হোলি পালিত হয়ে আসছে, এমন দাবি অনেকের। এই দাবির পক্ষে কিছু প্রমাণও মিলেছে। জৈমিনির পূর্বসূরী সূত্র এবং কথক গ্রন্থ সূত্রেও হোলির বর্ণনা আছে। হোলি খেলার মূর্তি পাওয়া গেছে প্রাচীন ভারতীয় মন্দিরগুলির দেয়ালে ।
বিজয়নগরের রাজধানী হাম্পিতে একটি ষোড়শ শতাব্দীর মন্দিরে হোলির অনেকগুলি দৃশ্য রয়েছে। যেখানে রাজকুমার এবং রাজকন্যারা তাদের দাস-দাসীদের সঙ্গে নিয়ে হোলি খেলায় মত্ত।