পাওয়া গেল মেয়ের জন্য বানানো পিকাসোর ছবি আঁকা শেখার বই
২০ শতকের শ্রেষ্ঠ চিত্রশিল্পীদের একজন পাবলো পিকাসো। নিজের মেয়ের জন্য তিনি তৈরি করেছিলেন একাধিক আঁকা শেখার বই। পিকাসোর নাতনি সম্প্রতি এরকম অনেকগুলো স্কেচবুক খুঁজে পেয়েছেন। নিজের বড় মেয়েকে আঁকা ও রঙ করা শেখাতে বইগুলো ব্যবহার করতেন পাবলো পিকাসো।
ওই বইগুলোর পৃষ্ঠা পিকাসো পূর্ণ করেছেন বিভিন্ন মজার দৃশ্য দিয়ে। এসবের মধ্যে আছে পশুপাখি, সং, অ্যাক্রোব্যাট, ঘোড়া, ঘুঘু ইত্যাদির ছবি।
মেয়ে মায়া রুইজ-পিকাসো যখন পাঁচ থেকে সাত বছর বয়সী ছিলেন, তখন এই স্কেচবুকগুলো তৈরি করেছিলেন পাবলো পিকাসো। বইগুলোর কোনো কোনো পৃষ্ঠায় মেয়েকে দেখা গেছে বাবার আঁকা ছবি নকলের চেষ্টা করতে। আবার কখনো বাবার ছবিতে নাম্বার বসিয়ে ছবির বিচারও করেছে মেয়ে।
খেঁকশিয়াল ও আঙুর ফলের গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে পিকাসো- একটি খেঁকশিয়াল আঙুর ফল খাওয়ার চেষ্টা করছে- এমন দুইটি ছবি এঁকেছেন। তার একটিতে মেয়ে কাঁচা হাতে রং করেছে। এছাড়া কাগজ থেকে পেন্সিল না উঠিয়ে এক টানে আঁকা একাধিক ঈগলও দেখা গেছে বইগুলোতে।
ভাঁড়ারঘরে পারিবারিক জিনিসপত্রের মাঝে হঠাৎই এসব খুঁজে পেয়েছেন পিকাসোর নাতনি ডায়ানা উইডমেয়ার-রুইজ-পিকাসো। এরপর ৮৬ বছর বয়সী মা মায়া রুইজ-পিকাসোকে সেগুলো দেখান তিনি।
উইডমেয়ার-রুইজ-পিকাসো অবজার্ভারকে বলেন, "মাকে দেখানোর পর তিনি বললেন, 'অবশ্যই, এগুলো আমার ছোটবেলার স্কেচবুক'। বইগুলো দেখামাত্র মা স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন।"
১৯৭৩ সালে পাবলো পিকাসো মারা যান। তারা বাবা ছিলেন চিত্রাঙ্কনবিদ্যার অধ্যাপক। বাবার হাত ধরেই চিত্রকলায় হাতেখড়ি পিকাসোর।
'কখনো দেখা যাচ্ছে মেয়ে একটা ছবি আঁকছে, আর বাবা আরেকটা। বাবা মেয়ের আঁকা ঠিক করে দিচ্ছেন। মাঝেমধ্যে পিকাসো কুকুর বা টুপি আঁকতেন। কখনো কখনো কেবল একটা ছবির জন্য পুরো পৃষ্ঠা ব্যবহার করতেন। আবার কোনো ছবিতে কিছু নির্দিষ্ট দৃশ্য, যেমন সার্কাসের দৃশ্য ইত্যাদি আঁকা হয়েছে। এগুলো খুবই মজার,' বলেন পিকাসোর নাতনি।
মায়া মনে করতে পারেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রংপেন্সিল ও নোটখাতার সরবরাহ কমে যায়। 'বোধহয় সে কারণে বাবা আমার আঁকার খাতায় নিজে এঁকেছেন, আমার পেন্সিল দিয়ে রং করেছেন। রান্নাঘরে বসে আমরা আঁকতাম, কারণ পুরো বাড়িতে কেবল ওই ঘরটাই উষ্ণ থাকত।'
পিকাসোর নাতনি উইডমেয়ার-রুইজ-পিকাসো একজন শিল্প-ইতিহাসবেত্তা, কিউরেটর, ও অলংকার নকশাকারী। হুট করে আবিষ্কার করা এ সংগ্রহকে তিনি 'দৈবাৎ' বলে অভিহিত করেছেন।
পিকাসোর ওই স্কেচবুকগুলোর সাথে তিনি পাখির কিছু অরিগামি ভাস্কর্যও খুঁজে পেয়েছেন। অরিগামি হচ্ছে কাগজ দিয়ে বিভিন্ন আকৃতির বস্তু তৈরি করার জাপানি শিল্প।
সূত্র: দ্য অবজার্ভার