আরও এক দফা বাড়ল ডালের দাম, দুই সপ্তাহে মণে বেড়েছে ১৩০ থেকে ৬০০ টাকা
ভোগ্যপণ্যের বাজারে আরো এক দফা বেড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ডালের দাম। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে বিভিন্ন জাতের ডালের দাম ১৩০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। চাহিদা স্থির থাকলেও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের বুকিং বৃদ্ধি, ডলারের দাম বৃদ্ধি ও লোকাল ট্রেডিংয়ের কারণে এসব পণ্যের দাম বাড়ছে।
ভোগ্যপণ্যের দেশের বৃহৎ পাইকারি বাজারের আড়ত ও পাইকারি দোকানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহষ্পতিবার বাজারে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মসুর বিক্রি হয়েছে তিন হাজার ৬০ টাকা থেকে তিন হাজার ১০০ টাকা দামে। দুই সপ্তাহ আগে বাজারে একই মানের মসুর বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ৫০০ টাকা থেকে দুই হাজার ৫৫০ টাকা দামে। যা মাত্র একমাস আগে দুই হাজার ১০০ টাকা থেকে দুই হাজার ১৫০ টাকা দামে বিক্রি হতো।
সেই হিসেবে, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে প্রতি মণ কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মসুরের দাম ৬০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে, মাত্র এক মাসের ব্যবধানে যা প্রায় ৮০০ টাকা বেড়েছে।
দুই সপ্তাহ আগে বাজারে প্রতি মণ সাদা মটর বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৪০০ টাকা দামে। যা বর্তমানে এক হাজার ৫৩০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগে বাজারে একই মানের সাদা মটর মাত্র এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হতো। বাজার দর অনুযায়ী, গত দুই সপ্তাহে প্রতি মণ সাদা মটরের ১৩০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। গত এক মাসে দাম বেড়েছে ৩৩০ টাকা।
এদিকে, মণে প্রায় ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে মুগডালের দাম। বর্তমানে, বাজারে ভালোমানের প্রতি মণ মুগডাল বিক্রি হচ্ছে চার হাজার ৪০০ টাকা দামে। দুই সপ্তাহ আগে একই মানের মুগডাল মাত্র তিন হাজার ৯০০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে, যা একমাস আগে ছিল মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকার মধ্যে।
এছাড়া, গত দুই সপ্তাহে মণে প্রায় ১৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে আমদানিকৃত ছোলার দাম। দুই সপ্তাহ আগে বাজারে প্রতি মণ অস্ট্রেলিয়ার ছোলা বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ৪০০ টাকা দরে, যা বর্তমানে দুই হাজার ৫৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ডাল ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে ডাল জাতীয় প্রতিটি পণ্যের চাহিদা স্বাভাবিক রয়েছে। পণ্যের সরবরাহও যথেষ্ট আছে। কিন্তু, আর্ন্তজাতিক বাজারে দুই থেকে তিন সপ্তাহ ধরে পণ্যের বুকিং দর বৃদ্ধি এবং ঊর্ধ্বমুখী বাজারে লোকাল ট্রেডিংয়ের কারণে পণের বাজার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ডাল ব্যবসায়ী মেসার্স তৈয়বিয়্যা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. সোলায়মান বাদশা বলেন, "বাজারে কোনো পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেলে তার বিক্রি বেড়ে যায়। দাম বৃদ্ধির কারণে পণ্যটি এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অন্য ব্যবসায়ীর কাছে হাত বদল হতে থাকে। যাকে বাজারে লোকাল ট্রেডিং বলে। এই লোকাল ট্রেডিংয়ের কারণে ডাল জাতীয় পণ্যের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। এছাড়া দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমদানিকারক ও বড় পাইকারদের কারসাজি রয়েছে বলে দাবি করেন এই ব্যবসায়ী।"
তবে, ডাল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স পায়েল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আশুতোষ মহাজন বলেন, "আর্ন্তজাতিক বাজারে ডাল জাতীয় সকল পণ্যের বুকিং দর বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ডলারের মূল্য বৃদ্ধিসহ গেল লকডাউনের কারণে পণ্যের আমদানি ও সরবরাহ কমেছে বাজারে। এসব কারণে বাজারে ডাল জাতীয় পণ্যের দাম বেড়ে চলেছে।"
চট্টগ্রাম ডাল মিল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সনজয় দেব খোকন বলেন, "ডালসহ বাজারে প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং দর বৃদ্ধি ও ডলারের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে লোকাল বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে চলেছে।"
এছাড়া, পণ্যের লোকাল ট্রেডিং ও আমদানিকারকদের কারসাজিতেও পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।