উত্তরাঞ্চলের 'গেমচেঞ্জার' উত্তরা ইপিজেড, কর্মসংস্থান ৩০ হাজারের
উত্তরা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) ৩০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের উত্তরাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শুধু মৌসুম ভিত্তিক কাজের সুযোগ থাকায় এ অঞ্চলে আগে স্থানীয়দের বেকারত্ব বড় মাত্রায় ছিল।
বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) উত্তরা ইপিজেড নির্মাণ করেছে এবং এটি পরিচালনা করছে।
বেপজার তথ্যমতে, ইপিজেড স্থাপনের আগে এই এলাকার জনগণের দৈনিক গড় উপার্জন ছিল ৪০ টাকা বা তারও কম। কিন্তু, ইপিজেডটির কল্যাণে তাদের বর্তমান দৈনিক উপার্জন ২৮০-৩২০ টাকায় পৌঁছেছে।
সারাদেশে মোট আটটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল বেপজার অধীনে পরিচালিত হচ্ছে, এরমধ্যে উত্তরা ইপিজেডের অবস্থান উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলাধীন সংগলশী ইউনিয়নে। এখানে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি চীন, হংকং ও যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকারীরা প্রায় এক হাজার ৮৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন।
ইপেজেডের কারখানাগুলোয় তৈরি হচ্ছে বৈচিত্রময় পণ্য সামগ্রী। বিশ্বখ্যাত মাইকেল কোর ব্র্যান্ডের হ্যান্ডব্যাগ, পরচুল (উইগ) চশমার ফ্রেম ও সানগ্লাস, খেলনা ও মডেল কার, বাঁশ-বেতের তৈরি কফিন, সোয়েটার, গার্মেন্ট অ্যাক্সেসরিজ পণ্য উৎপাদন করছে তারা। এপর্যন্ত এখানে উৎপাদিত প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ২০১৯ -২০২০ অর্থবছরে ১৩০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়।
বেপজা জানায়, বর্তমানে উত্তরা ইপিজেডে ২৪টি শিল্প ইউনিট রয়েছে, আরও পাঁচটি কারখানা উৎপাদন শুরুর অপেক্ষা করছে।
পিছিয়ে পড়া উত্তরাঞ্চলে শিল্পায়নের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০১ সালে এই উত্তরা ইপিজেড স্থাপিত হয়। ২১২ একর জমির উপর গড়ে উঠা উত্তরা ইপিজেডকে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলে বেড়েছে কর্মচাঞ্চল্য। এটি কেন্দ্র করে পরোক্ষভাবে গড়ে উঠেছে অনেক ছোট প্রতিষ্ঠান। ফলে স্থানীয় অর্থনীতিতে অন্যান্য ব্যবসার সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকারের দূরদর্শী সিদ্ধান্ত একটি অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক চিত্রে যে কতটা পরিবর্তন আনতে পারে- তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই ইপিজেড।
বেপজা'র নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম বলেন, উত্তরা ইপিজেড ৩০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এ অঞ্চলের দারিদ্র্য দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সোজা কথায়, ৩০ হাজার কর্মসংস্থানের অর্থ- ৩০ হাজার পরিবার দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের গাইবান্ধা জেলায় আমরা ১,৮৩১ একর জমিতে আরেকটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল স্থাপন করছি। নতুন এ ইপিজেডে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানা স্থাপন করা হবে।'
ইপিজেডে বিনিয়োগকারীদের জন্য নানান ধরনের প্রণোদনার সুবিধা দিচ্ছে বেপজা। রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা কর অবকাশ, শুল্কমুক্ত কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানির সুবিধা পান। এছাড়া রয়েছে মুনাফার ওপর কর ছাড় এবং ইউরোপিয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য দেশে শুল্ক ও কোটামুক্ত রপ্তানির সুযোগ।
উত্তরা ইপিজেড কর্মীদের ৬৬ শতাংশই নারী, যা দেশের প্রত্যন্ত জেলাটিতে নারী ক্ষমতায়নেও অবদান রাখছে।
ইপিজেডে শতভাগ বিদেশি মালিকানার সুযোগও দেয় বেপজা। নেই বৈদেশিক বিনিয়োগে কোন বিধিনিষেধ এবং চাইলে বিনিয়োগকারীরা তাদের সম্পূর্ণ পুঁজি ও মুনাফা নিয়ে যেতে পারেন।
বেপজার আওতাধীন আটটি ইপিজেড হলো- চট্টগ্রাম, ঢাকা, মোংলা, ঈশ্বরদী, কুমিল্লা, আদমজী, কর্ণফুলী এবং উত্তরা ইপিজেড।
বর্তমানে দেশের মোট রপ্তানির ২০ শতাংশে অবদান রাখছে বেপজা, যার ৬৪ শতাংশই তৈরি পোশাক খাত বহির্ভূত পণ্য।