উন্নত জাতের বীজের অভাবে দেশে আলুর প্রক্রিয়াজাতকরণ পিছিয়ে
উন্নত জাতের বীজের সংকটের কারণে দেশে উৎপাদিত আলু থেকে উন্নত মানের প্রক্রিয়াজাত পণ্য তৈরি করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বেসরকারি উদ্যোক্তারা।
রোববার বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে (বিএআরসি) 'আলুর প্রক্রিয়াজাতকরণ বৃদ্ধি' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় উদ্যোক্তারা এসব কথা জানান। অনুষ্ঠানটি কৃষি মন্ত্রণালয় ও বিপণন অধিদপ্তর আয়োজন করে।
আলু থেকে প্রক্রিয়াজাত পণ্য তৈরিকারি বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা জানান, বেসরকারি খাত নিজেদের চেষ্টায় কন্টাক্ট ফার্মিং করে আলু উৎপাদন করছে। এর জন্য নেদারল্যান্ডস থেকে জাত আনতে হচ্ছে। প্রসেসিং এর জন্য যে পরিমাণ উন্নত জাতের আলুর চাষ করা দরকার তা আমাদের দেশে হচ্ছে না।
বোম্বে সুইটস এন্ড কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুরশীদ আহমেদ ফরহাদ বলেন, "আমরা গত মৌসুমে ৩৯ মে. টন বীজ পেয়েছি। কিন্তু আমাদের চাহিদা আরও বেশি। চাহিদা অনুযায়ী বীজ পাচ্ছি না। উন্নত মানের আলুর উৎপাদন বাড়াতে না পারলে আমাদের প্রক্রিয়াজাতকারী পণ্যের উৎপাদনও বাড়বে না।"
একইসঙ্গে গুড এগ্রিকালচার প্র্যাকটিস (গ্যাপ) মেনে উৎপাদন না করতে পারলে রপ্তানিও বাড়ানো যাবে না বলে জানান এই কর্মকর্তা।
প্রাণ অ্যাগ্রো বিজনেস লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার মো. মাহতাব উদ্দিন বলেন, "নেদারল্যান্ডস, কানাডা, জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকেই বীজ আসছে। আলু থেকে আমরা চিপস, বিস্কুট, ফ্রেন্স ফ্রাই, স্টারস, ফ্রোজেন ফুড, স্ন্যাকস সহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করছি। কিন্তু আমরা মাত্র ৬০ হাজার টন আলু প্রসেস করছি। কিন্তু প্রসেসিং এ এই পর্যায়ে ২-৩ লাখ টন আলু থাকতে পারতো।"
উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকরা বলেন, দেশে আলুর উৎপাদন খরচ বেশি, আবার মানটা উন্নত না। এ কারণে এমন জাত আনতে হবে যা দিয়ে দ্বিগুণ প্রডাকশন হবে। এখন ৫ লাখ হেক্টর জমিতে যে পরিমাণ আলু উৎপাদন হচ্ছে তা ৪ লাখ হেক্টরে করতে হবে। এতে করে উৎপাদন খরচ অনেক কমে আসবে। তখন রপ্তানিতেও বাজার দখল করতে সুবিধা হবে।
এদিকে এসিআইয়ের প্রতিনিধিরা দাবি করেন, তারা উন্নত মানের ৮-৯ টি জাত নিয়ে কাজ করছেন। নেদারল্যান্ডস শুধু বিশ্বব্যপী পটেটো ভ্যারাইটি রপ্তানি করেই ২ বিলিয়ন ডলার আয় করে।
জানা গেছে, বিএডিসি ভালো মানের বীজ পেতে কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা দূর করে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট মোট ২৫টি আলুর জাত উদ্ভাবন করেছে বলে জানায় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। কিন্তু এসব জাত কৃষক পর্যায়ে পৌঁছাতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, "রোগের কারণে আমরা রাশিয়ার বাজারে ঢুকতে পারছি না। ইন্দোনেশিয়া আলু উৎপাদনে সাবলম্বী বলে তাদেরকে ইমপোর্ট করতে হচ্ছে না। তারপরও বিশ্বব্যপী আলুর কিছু চাহিদা রয়েছে। তবে আমরা যদি প্রক্রিয়াজত পণ্য তৈরিতে গুরুত্ব দিতে পারি তাহলে সেটা দেশে ও বিদেশে ব্যপক চাহিদা রয়েছে।"
তিনি বলেন, "আমাদের ভালো জাত নেই। উচ্চমানের পণ্য তৈরি করতে যে ধরণের জাত দরকার তা আমাদের নেই। বেসরকারি খাত অনেক জাত নিয়ে আসছে, উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু রপ্তানি মার্কেটে যেতে দ্রুত ইফেক্টিভ ভ্যারাইটি আনতে হবে। এতে করে উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে খরচ কমানো সম্ভব হবে। দেশে যদি আলু থেকে ভালো মানের স্টার্চ উৎপাদন সম্ভব হয় তবে আমদানির উপর ট্যাক্স বাড়ানোর বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নেবে।"
উল্লেখ্য, দেশে ২০২০-২১ সালে ১ কোটি ৬ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। হেক্টর প্রতি ২০ মে. টনের বেশি আলুর ফলন হচ্ছে বলে জানায় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।