ঋণ পরিশোধে ফের ছাড় পেলেন নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকরা
আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে যেসব গ্রাহক ঋণ নিয়েছেন তাদের ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে গণহারে সব গ্রাহকদের জন্য এই সুবিধা প্রযোজ্য নয়। গ্রাহক ও প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব গ্রাহককে এই সুবিধার দেয়ার যোগ্য বলে মনে করবে শুধুমাত্র তারাই এই সুবিধা পাবে।
মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব ফিনান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন এন্ড মার্কেটস (ডিএফআইএম)।
এতে বলা হয়, কোডিভ এর নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় যেসব গ্রাহক সাময়িকভাবে ঋণের কিস্তি পরিশোধে সমস্যার সম্মুখীন হবেন তাদের ক্ষেত্রে মার্চ ২০২১ সময়ে প্রদেয় কিস্তি, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতে ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো যাবে।
গেল বছর জুড়েই ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদেরও ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয়নি, পাশাপাশি খেলাপিও হতে হয়নি। ২৪ মার্চ ব্যাংকের গ্রাহকদের জন্য নতুন সুবিধার ঘোষণা আসলেও প্রায় এক মাস পর আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের জন্য নতুন সুবিধার ঘোষণা আসলো
এই সময়ে ঋণ শ্রেণিকরণ করা যাবে। পাশাপাশি কোন দণ্ড সুদ বা অতিরিক্ত কোন ফি, চার্জ বা কমিশন আরোপ কেরা যাবে না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিডি ফাইন্যান্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কায়সার হামিদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, যেসব গ্রাহকের মার্চে কিস্তি দেয়ার কথা ছিল কিন্তু দিতে পারেননি তারা ৩০ জুন পর্যন্ত সময় পাবেন। এই সময়ের মধ্যে তাদের খেলাপিও করা যাবে না।
"তবে সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে আমরা দেখবো, কিস্তি পরিশোধে গ্রাহকের পূর্বের রেকর্ড কেমন। যদি ভালো হয় সেক্ষেত্রে অবশ্যই সুবিধা পাবেন। এজন্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় গ্রাহক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে।"
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা সময়োপযোগী উল্লেখ করে তিনি বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কিছু কমন গ্রাহক আছে, যারা একদিকে ব্যাংকের গ্রাহক অন্যদিকে এনবিএফআই এরও গ্রাহক। একই গ্রাহক ব্যাংক থেকে সুবিধা পাবে কিন্তু আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি হয়ে গেলে সমস্যা দেখা দিতো।
এছাড়া কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ এর ফলে অনেক গ্রাহকই সময়মতো ঋণের কিস্তি পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি জানান, ঋণ আদায় আগের চেয়ে কমে গেছে। এমন বাস্তবতায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের জন্য এই সুবিধা অত্যন্ত ইতিবাচক।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কিস্তি পরিশোধের সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দেরিতে আসলো কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার ধরণ ভিন্ন হওয়ায় সিদ্ধান্ত সময়মতোই এসেছে। তিনি জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে ঋণের তথ্য পাঠানোর আগেই সিদ্ধান্ত এসেছে।
গেল ২৪ মার্চ, ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া গ্রাহকদের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা বাড়িয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তার প্রায় এক মাস পর নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ঘোষণা আসলো।
ব্যাংকের ক্ষেত্রে গেল বছরের মত গণহারে সুবিধা না দিয়ে ঋণের ধরণ অনুযায়ী বিভিন্ন সুবিধা দেয়া হয়েছে। মেয়াদী বা টার্ম লোন পরিশোধের ক্ষেত্রে গেল ফেব্রুয়ারি মাসেই আরো দুই বছর সময় বাড়ানো হয়েছিল। মার্চে এসে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ও ডিমান্ড লোন এর ক্ষেত্রে নতুন ধরনের সুবিধা দেয়া হয়েছে।
ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে নেয়া ঋণের ক্ষেত্রে গেল বছরের অনাদায়ী সুদ ৬টি সমান কিস্তিতে জুন ২০২২ সময়ের মধ্যে পরিশোধ করা যাবে।
২০২০ সালের অনাদায়ী সুদ পরিশোধ হওয়ার পাশাপাশি ওই ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল এর জুন ২০২২ পর্যন্ত যে সুদ আসবে তা নিয়মিত পরিশোধ করে গেলে ঋণটি মেয়াদউত্তীর্ণ হবে না।
ডিমান্ড বা তলবি ঋণ মার্চ ২০২১ থেকে ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত ৮টি সমান ত্রৈমাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করা যাবে। নিয়মিত পরিশোধ হলে ঋণ শ্রেণিকরণ করা হবে না। তবে যে প্রান্তিক (ত্রৈমাসিক) থেকে কিস্তি অনিয়মিত হবে সেই সময় থেকেই সুবিধা বাতিল করে ঋণ শ্রেণিকরণ করা যাবে।
তবে এই তিন ধরনের ঋণের ক্ষেত্রেই ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা মার্চ ২০২১ থেকে বাড়িয়ে ৩০ জুন ২০২২ করা হয়েছে।