এসএমই খাতের জন্য গার্মেন্টসের ন্যায় করছাড় দেয়ার প্রস্তাব
আয়ের ওপর সাধারণ কোম্পানিকে ৩৩% কর দিতে হলেও তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতের জন্য তা ১২ শতাংশ। রপ্তানিতে প্রণোদনাসহ করের ক্ষেত্রেও বিশেষ ছাড় পাচ্ছে আরএমজি খাত। আরএমজির মতোই এবার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পকে করছাড় দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশন।
মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে আগামী অর্থবছরের জন্য প্রাক বাজেট আলোচনায় এসব প্রস্তাব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
আগামী অর্থবছরের জন্য এসএমই খাতের ১৫টি সংগঠন থেকে প্রস্তাবনা নিয়ে ট্যাক্স, ভ্যাট, ট্যারিফ ও আর্থিক প্রণোদনা সংক্রান্ত ৩২৮টি প্রস্তাব এনবিআরের কাছে জমা দেয়া হয়। এসএমই ফাউন্ডেশনের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির উপদেষ্টা ও এনবিআরের সাবেক সদস্য লুৎফর রহমান বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন।
মো. লুৎফর রহমান বলেন, এসএমই যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রাণ। এখানে কয়েক লাখ উদ্যোক্তা রয়েছে। এসব উদ্যোক্তাকে সুযোগ করে দিলে তারা এক সময় বড় হবে।
তিনি বলেন, 'বর্তমানে টেক্সটাইল, গার্মেন্টস্, পাটজাত পণ্য উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ১৫% এবং পোল্ট্রি ফিড, ফিশ ফিড ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ১৫% পর্যন্ত করপোরেট কর দিচ্ছে। প্লাস্টিক, এগ্রো প্রসেসিংসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ৩২.৫% শতাংশ কর দিতে হয়। ফলে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ পায় না এসব শিল্প'।
এসএমই উদ্যোক্তাদের বিকাশের লক্ষ্যে সব ধরনের এসএমই পণ্যে করপোরেট করহার গার্মেন্টস শিল্পের মতো নির্ধারণের দাবি করেন তিনি।
কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদন ও বিপণন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পজাত পণ্যের ওপর হ্রাসকৃত হারে মূসক আরোপ, মূল্য সংযোজন নিরূপণ ও রেয়াত সুবিধা গ্রহণ করতে অক্ষম ক্ষুদ্র মাঝারি সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বেলায় হ্রাসকৃত মূসক আরোপ, রপ্তানি সংশ্লিষ্ট স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত সব পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ভ্যাট মওকুফ এবং দেশে উৎপাদিত মধু সম্পূর্ণ মূসক মওকুফ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এসব প্রস্তাব বিবেচনা করা হলে দেশের শিল্প উপকৃত হবে এবং দেশ স্বনির্ভরতার পথে অনেকটা পথ এগিয়ে যাবে বলে মনে করছে এসএমই ফাউন্ডেশন।
শুল্ক খাতে এসএমই খাতের প্রস্তাব তুলে ধরে কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরিতে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ ও উপকরণ, কয়ার ফাইবার (নারিকেলের ছোবড়ার তন্তু), ফিলার মাস্টারব্যাচ, কালার মাস্টারব্যাচ, পিভিসি স্টেবিলাইজার, স্টিয়ারিক এসিড পলিইথাইলিন ওয়াক্স, প্রিন্টেড মেলামাইন ট্রান্সফার পেপার, আনপ্রিন্টেড পিভিসি, পলিয়েস্টার, পলি-এমাইড (নাইলন) ফিল্ম ইন রোল, ইউরিয়া মেল্ডিং কম্পাউন্ড, ইউরিয়া রেজিনস, থায়ো-ইউরিয়া রেজিনসের শুল্ক কমানোর দাবি করা হয়।
এর ফলে হালকা প্রকৌশল শিল্প, কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনকারী শিল্প, প্লাস্টিক, মেলামাইন শিল্প এবং বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম উৎপাদনকারী শিল্প বিকাশের সুযোগ পাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এছাড়া প্রস্তাবে প্লাস্টিক পণ্য রিসাইক্লিং শিল্পের ওপর থেকে আয়কর প্রত্যাহার, রপ্তানিমূল্যের ওপর অগ্রিম আয়কর কমানো, কাঁচামাল আমদানির ওপর থেকে অগ্রিম মূসকের মতো অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব করে প্রতিষ্ঠানটি।
বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে পাট শিল্পের মতো চা শিল্পে করপোরেট করহার ১২ শতাংশ করার দাবি করেন দেশের চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদ। এছাড়া চা বিক্রিতে স্যাম্পলের ওপর ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি।
তবে চা বাগানের মালিকরা ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে নতুন কোনো সুবিধা পাবেন না বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, 'চা বাগানের মালিকরা অগোছালোভাবে আছে। আমি ভারত, নেপালসহ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশে চা বাগান দেখতে গিয়েছি। তাদের বাগান কার্পেটের মতো বিছানো, গোছালো থাকে। আর আমাদের বাগান এলোমেলো বা ছড়ানো-ছিটানো থাকে। কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না। জমির সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না। আমার মনে হয়, করের বোঝা বাড়ালে মালিকদের অগোছালো ভাব কমবে, জমির সঠিক ব্যবহার হবে'।
বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ অটোমোবাইলস এসেম্বলিজ অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতি, লঞ্চ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ পরিবহন সেক্টরের বিভিন্ন সমিতি এ বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়েছিল।
করোনার এ সময় লোকসান বিবেচনায় নিয়ে এসি বাস ও লঞ্চের বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতির দাবি করেছে উভয় খাতের ব্যবসায়ীরা। এছাড়া টায়ার আমদানিতে শুল্কহার কমানো, অবৈধ থ্রি হুইলার আমদানি বন্ধসহ আয়কর, ভ্যাট ও শুল্কখাতে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছে তারা।