করোনা পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামে ১৩ মে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মৌসুমের প্রথম চা নিলাম
নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে চায়ের দুটি নিলাম স্থগিত হওয়ার পর আগামী ১৩ মে থেকে শুরু হচ্ছে নতুন বর্ষের নিলাম। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ চা বোর্ড পূর্নাঙ্গ সূচি প্রকাশ না করলেও চট্টগ্রামের জন্য দুটি নিলামের তারিখ চুড়ান্ত করেছে। তবে শ্রীমঙ্গলে অনুষ্ঠিত নিলামের তারিখ এখনও চুড়ান্ত হয়নি।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের ২০২০-২১ নিলাম বর্ষের সূচী অনুযায়ী আগামী ১৩ মে প্রথম ও ১৯ মে দ্বিতীয় নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। চা বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালক (বাণিজ্য) মুহাম্মদ মদহুল কবীর চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে চা নিলামের জন্য দেওয়া হয়েছে কিছু নির্দেশনাও।
চা বোর্ড সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে নতুন বর্ষের নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ৭ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে বসতে হবে সকলকে। বর্তমান নিলাম কেন্দ্রে স্থান সংকুলান না হলে বড় কোন হল রুমে নিলাম স্থানান্তর করা হবে।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে নিলাম কেন্দ্র, ব্রোকার হাউস, ওয়্যার হাউসে করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। নিলাম চলাকালে শুধুমাত্র অপরিহার্য জনবলের উপস্থিতি নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করা হয় ওই নির্দেশনায়।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের সচিব সচিব কুল প্রদীপ চাকমা বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে আমরা শুধুমাত্র চট্টগ্রামের জন্য নতুন ২০২০-২১ নিলাম বর্ষের ২ টি তারিখ চূড়ান্ত করেছি। সাধারণ ছুটির পর অফিস খুললে পূর্নাঙ্গ সূচী নির্ধারণ করা হবে। তবে শ্রীমঙ্গলে নিলামের জন্য এখনও তারিখ নির্ধারিত হয়নি।
চা বোর্ড সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম এবং শ্রীমঙ্গলে মাসে ৪টি নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে শ্রীমঙ্গলে অনুষ্ঠিত হয় ১টি নিলাম। একটি নিলাম বর্ষে সাধারণত ৪৫ টি নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ পরিস্থিতিতে নিলামের সংখ্যা বৃদ্ধি করে চা বোর্ড। করোনা পরিস্থিতিতে গত ২০১৯-২০ নিলাম বর্ষের ২৪ মার্চ ৪৬তম ও ৩১ মার্চ ৪৭তম নিলাম স্থগিত করা হয়।
এদিকে গত নিলাম বর্ষের শেষের দিকে চায়ের গড় দাম কমে গেছে। ২০১৮-১৯ নিলাম বর্ষে প্রতি কেজি চায়ের গড় মূল্য ২৬২.৯৬ টাকা হলেও সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ নিলাম বর্ষে গড় মূল্য নেমে যায় ১৭৭ টাকার নিচে। দুটি নিলাম অনুষ্ঠিত না হওয়ায় বিভিন্ন ব্রোকার হাউজের কাছে অবিক্রিত থেকে যায় ৯ লাখ কেজি চা। যদিও নতুন নিলাম না হওয়া পর্যন্ত ব্রোকার হাউজগুলোকে আউটলটে ( নিলাম ছাড়া) চা বিক্রির সিন্ধান্ত দেয় চা বোর্ড।
চা নিলামকারী প্রতিষ্ঠান প্রডিউস ব্রোকার্সের সিনিয়র ম্যানেজার সুজিত ভট্টাচার্য্য বলেন, গত নিলাম বর্ষের শেষ দিকে চায়ের গড় মুল্য ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা। এবার করেনা পরিস্থিতিতে চায়ের গড় মুল্য কেমন হবে বলা যাচ্ছেনা। আমরা আশা করছি নতুন নিলাম বর্ষে বিগত বর্ষের গড় মুল্য অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশ চা বোর্ড এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৬৭টি চা বাগান রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ২২টি, রাঙ্গামাটি ও বান্দারবান জেলায় ১টি করে চা বাগান রয়েছে। বাকি চা বাগানগুলো এছাড়া সিলেট, শ্রীমঙ্গল ও অন্যান্য জেলায়। বাগান থেকে উৎপাদিত চা মালিকরা বোর্ডের নিবন্ধিত ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠায়।
এরপর চা বোর্ড এসব চায়ের মান যাচাই করে লট আকারে দাম ও গ্রেড নির্ধারণ করেন। ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠানের তৈরি ক্যাটালগে চায়ের গ্রেড ও প্রস্তাবিত দাম নির্ধারণ করে দেয়া থাকে। চা বোর্ডের সদস্য ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি সপ্তাহে নিলামে গিয়ে ক্যাটালগ দেখে নিলামের নিয়ম অনুযায়ী বিডিংয়ের মাধ্যমে চা ক্রয় করে। এক্ষেত্রে ক্যাটালগের নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি বা কম দামে নিলামে বিক্রি হয় বাগান মালিকদের পাঠানো চা।
২০১৯ সালে চা শিল্প ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমাণ ৯৬.০৭ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত উৎপাদন হয় ১.৮৩ মিলিয়ন কেজি চা। ২০১৯-২০ বর্ষের প্রথম নিলামে বিক্রি হওয়া চায়ের গড় দাম ছিল কেজি প্রতি প্রায় ২৫০ টাকা। নিলাম বর্ষের শেষ দিকে চায়ের গড় দাম ১৭৭ টাকার নিচে নেমে আসে।