জিওটেক্সটাইল খাতে নতুন বিনিয়োগে বড় লাভের সম্ভাবনা
দেশে জিও টেক্সটাইলের বাজার বড় হওয়ার আশায় এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে। বর্তমানে সাতটি প্রতিষ্ঠান জিও টেক্সটাইল পণ্য উৎপাদন করলেও নতুন করে বিনিয়োগে এসেছে আরো দুটি প্রতিষ্ঠান। নদীর পাড় রক্ষা কিংবা নদীভাঙ্গন ঠেকাতে নতুন নতুন প্রকল্প এবং সড়ক-মহাসড়কের মত অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে সরকারের ব্যয় বাড়ায় জিও টেক্সটাইল পণ্যের চাহিদাও বাড়ছে। এ চাহিদা ক্রমাগত বাড়ার আশায় নতুন বিনিয়োগ আসছে বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
এ খাতে নতুন করে বিনিয়োগ নিয়ে এসেছে কনফিডেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এবং ওয়েস্টার্ন সুপিরিওর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এর মধ্যে ওয়েস্টার্ন সুপিরিওর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড স্বল্প পরিসরে উৎপাদন শুরু করেছে। আর কনফিডেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ২০২২ সালের মার্চ নাগাদ উৎপাদনে যাবে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি এ লক্ষ্যে জার্মানি ভিত্তিক আউটিফা সলিউশন্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অত্যাধুনিক দুটি মেশিন ক্রয় করছে, যা আগামী মাসে জাহাজীকরণ হওয়ার কথা। প্রতিষ্ঠানটি ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।
কনফিডেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এর প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা (সিওও) শহিদুল ইসলাম টিবিএস'কে বলেন, "২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিকে উৎপাদনে যাওয়ার পর আমাদের কারখানায় দৈনিক ৭০-৮০ টন জিওটেক্সটাইলস উৎপন্ন হবে। কারখানায় ৫০০ জনের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে।"
তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে দুটি নন-উভেন নিডল পাঞ্চিং জিও-টেক্সটাইল ম্যানুফ্যাকচারিং প্রোডাকশন লাইন দিয়ে শুরু করলেও ভবিষ্যতে এ বিনিয়োগ দ্বিগুণ করার লক্ষ্য রয়েছে। এজন্য জার্মানি থেকে কেনা দুটি অত্যাধুনিক মেশিন লাইন আগামী মাসেই পাঠানো হবে বলে জানান শহিদুল।
এদিকে সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার পাইপলাইনে অনেক অবকাঠামো প্রকল্প থাকায় জিওটেক্সটাইলের চাহিদা দিন দিন বাড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সামনে এ পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে।
ওয়েস্টার্ন সুপিরিওর জুট ইন্ডাস্ট্রিজের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক ইঞ্জিনিয়ার আবু হাসনাত বলেন, "আমরা এখন প্রতিদিন ছয় টন জিওটেক্সটাইল উৎপাদন করছি। উৎপাদন বাড়াতে নতুন মেশিন লাইন বসানোর কাজও চলছে। বর্তমানে আমাদের মোট বিনিয়োগ প্রায় ৩০ কোটি টাকা।"
জিও টেক্সটাইল মূলত নন-উভেন টেক্সটাইল- যা দিয়ে উৎপাদিত জিওব্যাগ, জিওশিট ও জিওইউব দিয়ে নদীরক্ষা বাঁধ, সড়ক অবকাঠামো তৈরি, মেরামত, পাকাকরণসহ যে কোন ধরনের বাঁধ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে বহুলভাবে ব্যবহার হয় জিওব্যাগ, যা বড় বড় প্রকল্পের কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে।
বিভিন্ন সূত্রমতে, কেবল পদ্মা সেতুর নদী শাসন কাজেই ব্যবহার হয়েছে এক কোটি ৪৭ লাখ জিওব্যাগ ও ৬৮ হাজার জিও টিউব।
এর মূল কাঁচামাল পলি প্রপিলিন ফাইবার বা পিপি ফাইবার ফেব্রিক থেকে তৈরি হয়। ওই ফেব্রিক দিয়ে তৈরি ব্যাগে মাটি বা বালি ভর্তি করে তা দিয়ে বাঁধ নির্মাণসহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ করা হয়। এই কাঁচামাল আমদানিনির্ভর। মূলত চীন, ভিয়েতনাম ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ থেকে এসব কাঁচামাল আমদানি করতে হয়।
দেশে জিও টেক্সটাইল খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ নিয়ে নির্ভরযোগ্য কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের টার্নওভারের তথ্যও প্রকাশ করতে চায় না।
তবে খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, একটি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের পরিমাণ কেমন হবে, তা নির্ভর করছে ওই প্রতিষ্ঠান কেমন মানের মেশিন ব্যবহার করছে, যেমন- নতুন মেশিন না রিকন্ডিশন্ড মেশিন তার ওপর। যেমন একটি রিকন্ডিশন্ড মেশিন দিয়েও উৎপাদন শুরু করা যায়, সেক্ষেত্রে একটি প্রতিষ্ঠানের হয়তো মোট বিনিয়োগের পরিমাণ হতে পারে ৮-১০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, দেশের সবচেয়ে বড় জিওটেক্সটাইল প্রস্তুতকারক বিজে জিও -টেক্সটাইল লিমিটেড ও ডার্ড ফেল্ট লিমিটেড অন্তত ছয়টি মেশিন লাইন দিয়ে তাদের উৎপাদন কাজ চালাচ্ছে।
এখাতে অন্তত ৭০০ কোটি টাকা এপর্যন্ত বিনিয়োগ হয়েছে বলে জানায় প্রতিষ্ঠান দুটি।
আর জিও টেক্সটাইলের বার্ষিক চাহিদা ১ হাজার থেকে ১২০০ কোটি টাকার। ১৯৯৫ সাল থেকে দেশে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে জিওব্যাগের ব্যবহার শুরু হলেও, পূর্বে ওই চাহিদা মেটানো হতো মূলত মালয়েশিয়া থেকে আমদানির মাধ্যমে। তবে দেশে চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধির সাথে সাথে নন-উভেন জিওটেক্সটাইলের দেশীয় উৎপাদন শুরু হওয়ার পর আমদানির উপর নির্ভরতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
বর্তমানে স্থানীয় চাহিদার প্রায় ৯৫ শতাংশের বেশি দেশের সাতটি কোম্পানির উৎপাদিত জিও টেক্সটাইল পণ্যের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে।
আর রেলসহ কিছু কিছু প্রকল্পের কাজে উভেন জিও টেক্সটাইল ব্যবহার হয়, যা দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন করে না। এ ধরনের জিও টেক্সটাইল আমদানি করতে হয়, যা মোট ব্যবহারের দুই শতাংশের বেশি হবে না বলে অনুমান করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, দেশে প্রথম জিও টেক্সটাইলের বিপণন শুরু করেছিলো ডার্ড গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির আওতাধীন জিও টেক্সটাইলের আলাদা কোম্পানির নাম ডার্ড ফেল্ট লিমিটেড, যেখানে প্রায় এক হাজার জনের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৭৫ টন।
ডার্ড ফেল্ট এর নির্বাহী পরিচালক সৌমিত্র মুৎসুদ্দি টিবিএস'কে বলেন, বাংলাদেশে প্রথম জিও টেক্সটাইলের ব্যবসা শুরু করেছে এ প্রতিষ্ঠান এবং এপর্যন্ত দেশে অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান এটি। পদ্মা সেতু প্রকল্পের নদী শাসন কাজে ব্যবহার হওয়া বিপুল পরিমাণ জিও ব্যাগ ও জিওটিউবের অর্ধেকই সরবরাহ করেছে।
'পৃথিবীর সব দেশেই নদী রক্ষা, রিভার ট্রেনিং, বাঁধ নির্মাণ, অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে জিওটেক্সটাইলের বহুল ব্যবহার রয়েছে। এর উপকারিতার কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশেও আলোচ্য কাজে জিও টেক্সটাইলের ব্যবহার বাড়বে বলে আশা করছি। ফলে দেশে এর বাজারও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে,' বলেন তিনি।
ডার্ড গ্রুপ এর বার্ষিক টার্নওভার সম্পর্কে তিনি পরিস্কার তথ্য দিতে না পারলেও অপর একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, গত বছর প্রতিষ্ঠানটির টার্নওভার ছিলো ২০০ কোটি টাকার উপরে। আর ২০১৫ সালে তা ছিলো ৩২০ কোটি টাকা।
অবশ্য এ খাতের বাজারের আকার কিংবা ভবিষ্যত সম্ভাবনা নিয়ে বিপরীতমুখী বক্তব্যও রয়েছে। নাহি জিও টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের একজন ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বর্তমানে জিও টেক্সটাইলের যে বাজারের আকার, তা গত কয়েক বছর ধরে প্রায় একই অবস্থানে রয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে চাহিদা বরং কিছুটা কমেছে। বর্তমানে চাহিদার তুলনায় ক্যাপাসিটি বেশি রয়েছে। এ কারণে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে সাতটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তিনটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে।
'এ পরিস্থিতিতে নতুন করে যারা বিনিয়োগ নিয়ে আসছেন, তাদের এই অংশের মধ্যেই ভাগ বসাতে হবে, ফলে কাউকে না কাউকে হয়তো ঝরে যেতে হবে' - বলেন তিনি।
অবশ্য এমন বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন নতুন বিনিয়োগে আসা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। তারা জানান, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ এবং প্রতি বছরই নদী খনন, নদী পাড়ে বাঁধ নির্মাণ, ড্রেজিং ও নদী শাসনের মত কাজ কমবে না বরং বাড়বে। অন্যদিকে সড়কসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অবকাঠামোর কাজে স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্য দিনে দিনে জিও টেক্সটাইলের ব্যবহার বাড়বে।
দেশে জিও টেক্সটাইল উৎপাদনকারী হিসেবে শীর্ষে রয়েছে বিজে জিও- টেক্সটাইল লিমিটেড- এর নাম। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশে এ প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ক্ষমতা এখন সবচেয়ে বেশি। এছাড়া তাদের কারখানায় রয়েছে জিও টেক্সটাইল ব্যাগ উৎপাদনের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি।
এর বাইরেও রাহাত জিও-টেক্সটাইল অ্যান্ড সিনথেটিক লিমিটেড, এফজি জিওটেক্সটাইল, অর্কিড জিওটেক্সটাইল ও আরএম জিওটেক্স লিমিটেড বর্তমানে পণ্য উৎপাদন করে বলে জানা গেছে।
প্রাথমিকভাবে তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ ২০০ কোটি টাকার বেশি। আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিকে কার্যক্রম শুরু করার পর প্রতিদিন প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৬০ টন জিও টেক্সটাইল পণ্য উৎপাদন করতে পারবে, যাতে কর্মসংস্থান হবে প্রায় এক হাজার লোকের। "
তিনি বলেন, দিনে দিনে অবকাঠামো কার্যক্রম বিস্তৃত হওয়ায় এ খাতে চাহিদা আরো বাড়বে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সামনে রপ্তানির সম্ভাবনাও রয়েছে।
জিও টেক্সটাইল মূলত নন-উভেন টেক্সটাইল- যা দিয়ে উৎপাদিত জিওব্যাগ, জিওশিট ও জিওইউব দিয়ে নদীরক্ষা বাঁধ, সড়ক অবকাঠামো তৈরি, মেরামত, পাকাকরণসহ যে কোন ধরনের বাঁধ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে বহুলভাবে ব্যবহার হয় জিওব্যাগ, যা বড় বড় প্রকল্পের কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে।
সূত্র জানায়, কেবল পদ্মা সেতুর নদী শাসন কাজেই ব্যবহার হয়েছে এক কোটি ৪৭ লাখ জিওব্যাগ ও ৬৮ হাজার জিও টিউব। এর মূল কাঁচামাল পলি প্রপিলিন ফাইবার বা পিপি ফাইবার ফেব্রিক থেকে তৈরি হয়। ওই ফেব্রিক দিয়ে তৈরি ব্যাগে মাটি বা বালি ভর্তি করে তা দিয়ে বাঁধ নির্মাণসহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ করা হয়। এই কাঁচামাল আমদানিনির্ভর। মূলত চীন, ভিয়েতনাম ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ থেকে এসব কাঁচামাল আমদানি করতে হয়।
জিওটেক্সটাইল পণ্যের মূল ক্রেতা সরকারের পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, রেলওয়ে ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠান। তবে সরকারি ক্রয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরাসরি ক্রয় না করে বরং প্রকল্প উন্নয়ন কাজের দরপত্রের কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই তা ক্রয় করে।
দেশে জিওটেক্সটাইল খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ নিয়ে নির্ভরযোগ্য কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের টার্নওভারের তথ্যও প্রকাশ করতে চায় না।
তবে খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, একটি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের পরিমাণ কেমন হবে, তা নির্ভর করছে ওই প্রতিষ্ঠান কেমন মানের মেশিন ব্যবহার করছে, যেমন- নতুন মেশিন না রিকন্ডিশন্ড মেশিন তার ওপর। একটি মেশিন দিয়েও উৎপাদন শুরু করা যায়, সেক্ষেত্রে একটি প্রতিষ্ঠানের হয়তো মোট বিনিয়োগের পরিমাণ হতে পারে ৮-১০ কোটি টাকা। আবার কোন কোন প্রতিষ্ঠান ৬টি মেশিন দিয়ে উৎপাদন কাজ করছে, যার বেশিরভাগই এসেছে ইউরোপের দেশ থেকে। ফলে তাদের বিনিয়োগ শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
তারা জানান, বাংলাদেশে এপর্যন্ত খাতটিতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৭০০ কোটি টাকা।
আর জিও টেক্সটাইলের বার্ষিক চাহিদা ১ হাজার থেকে ১২০০ কোটি টাকার। ২০০০ সালের আগে থেকে দেশে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে জিওব্যাগের ব্যবহার শুরু হলেও, পূর্বে ওই চাহিদা মেটানো হতো মূলত আমদানির মাধ্যমে।
দিনে দিনে দেশে এই টেক্সটাইলের চাহিদা বাড়তে থাকায় নন-উভেন জিও টেক্সটালের উৎপাদন শুরু হওয়ায় কমে আসে আমদানি নির্ভরতা। বর্তমানে স্থানীয় চাহিদার প্রায় ৯৫ শতাংশের বেশি দেশের উৎপাদিত জিও টেক্সটাইল পণ্যের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে।
আর রেলসহ কিছু কিছু প্রকল্পের কাজে উভেন জিও টেক্সটাইল ব্যবহার হয়, যা দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন করে না। এ ধরনের জিও টেক্সটাইল আমদানি করতে হয়, যা মোট ব্যবহারের দুই শতাংশের বেশি হবে না বলে অনুমান করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
পায়রা বন্দর, চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পেও কিছু উভেন জিও টেক্সটাইল ব্যবহার হচ্ছে।
সূত্র জানায়, দেশে প্রথম জিও টেক্সটাইলের বিপণন শুরু করেছিলো ডার্ড গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির জিও টেক্সটাইলের আলাদা কোম্পানির নাম ডার্ড ফেল্ট লিমিটেড, যেখানে প্রায় এক হাজার জনের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৮৫ টন।
ডার্ড ফেল্ট এর নির্বাহী পরিচালক সৌমিত্র মুৎসুদ্দি টিবিএস'কে বলেন, বাংলাদেশে প্রথম জিও টেক্সটাইলের ব্যবসা শুরু করেছে এ প্রতিষ্ঠান এবং এপর্যন্ত দেশে অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান এটি। পদ্মা সেতু প্রকল্পের নদী শাসন কাজে ব্যবহার হওয়া বিপুল পরিমাণ জিও ব্যাগ ও জিওটিউবের অর্ধেকই সরবরাহ করেছে।
'পৃথিবীর সব দেশেই নদী রক্ষা, রিভার ট্রেনিং, বাঁধ নির্মাণ, অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে জিও টেক্সটাইলের বহুল ব্যবহার রয়েছে। এর উপকারিতার কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশেও আলোচ্য কাজে জিও টেক্সটাইলের ব্যবহার বাড়বে বলে আশা করছি। ফলে দেশে এর বাজারও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে,' বলেন তিনি।
ডার্ড গ্রুপ এর বার্ষিক টার্নওভার সম্পর্কে তিনি পরিস্কার তথ্য দিতে না পারলেও অপর একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, গত বছর প্রতিষ্ঠানটির টার্নওভার ছিলো ২০০ কোটি টাকার উপরে। আর ২০১৫ সালে তা ছিলো ৩২০ কোটি টাকা।
অবশ্য এ খাতের বাজারের আকার কিংবা ভবিষ্যত সম্ভাবনা নিয়ে বিপরীতমুখী বক্তব্যও রয়েছে। নাহি জিও টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের একজন ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বর্তমানে জিও টেক্সটাইলের যে বাজারের আকার, তা গত কয়েক বছর ধরে প্রায় একই অবস্থানে রয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে চাহিদা বরং কিছুটা কমেছে। বর্তমানে চাহিদার তুলনায় ক্যাপাসিটি বেশি রয়েছে। এ কারণে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে সাতটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তিনটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে।
'এ পরিস্থিতিতে নতুন করে যারা বিনিয়োগ নিয়ে আসছেন, তাদের এই অংশের মধ্যেই ভাগ বসাতে হবে, ফলে কাউকে না কাউকে হয়তো ঝরে যেতে হবে' - বলেন তিনি।
ওয়েস্টার্ন সুপিরিওর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেদেড় একজন ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, দুই-তিন বছর আগেও চাহিদার তুলনায় স্থানীয় কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা কম ছিল, কিন্তু এখন বিনিয়োগ বেড়ে গেছে।
অবশ্য এমন বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন নতুন বিনিয়োগে আসা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। তারা জানান, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ এবং প্রতি বছরই নদী খনন, নদী পাড়ে বাঁধ নির্মাণ, ড্রেজিং ও নদী শাসনের মত কাজ কমবে না বরং বাড়বে। অন্যদিকে সড়কসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অবকাঠামোর কাজে স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্য দিনে দিনে জিও টেক্সটাইলের ব্যবহার বাড়বে।
কনফিডেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেদের সিওও শহিদুল ইসলাম বলেন, ভবিষ্যত সম্ভাবনার বিবেচনায় আমাদের বিনিয়োগ আরো বাড়বে।
আলোচ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর বাইরেও দেশে জিও টেক্সটাইল উৎপাদনকারী হিসেবে শীর্ষে রয়েছে বিজে জিও- টেক্সটাইল লিমিটেড- এর নাম। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশে এ প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ক্ষমতা এখন সবচেয়ে বেশি। এছাড়া এ প্রতিষ্ঠানে রয়েছে জিও টেক্সটাইল ব্যাগ উৎপাদনের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি।
এর বাইরেও রাহাত জিও-টেক্সটাইল অ্যান্ড সিনথেটিক লিমিটেড, এফজি জিওটেক্সটাইল, অর্কিড জিওটেক্সটাইল ও আরএম জিওটেক্স লিমিটেড বর্তমানে পণ্য উৎপাদন করে বলে জানা গেছে।