ধুঁকছে আতর-টুপির বাজার
রমজান মাসে অভাবনীয় লাভের আশা ছেড়ে দিয়েছেন দেশের ঐতিহ্যবাহী আতর-টুপির বাজারের ব্যবসায়ীরা। বিক্রিতে ধস নামায় ব্যবসা টিকিয়ে রাখতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
এ খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ২০২০ সালের শুরুতে হঠাৎ করে করোনাভাইরাস মহামারির আগমনে দেশের আতর-টুপির ব্যবসা খাতে প্রথম আঘাত আসে। গত বছরের শেষদিকে সংক্রমণের পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া শুরু করেন তারা। কিন্তু আবারও দেশের সেকেন্ড ওয়েভের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে অকূল পাথারে পড়েছেন তারা।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বার্ষিক আয়ের বড় অংশই দুই ঈদের মৌসুমে হওয়ায়, সারা বছর ধরে দুই ঈদের অপেক্ষায় দিন গোনেন ব্যবসায়ীরা। ২৫০ কোটি টাকার এ বাজারের বেশিরভাগ আয়ই হয় মুসলিম সম্প্রদায়ের দুই বড় উৎসবের মৌসুমে।
"গত বছর থেকেই বিক্রি নেই। এখন আতর ও টুপির বিক্রির মৌসুম কিন্তু ক্রেতার দেখা নেই," বলছিলেন বায়তুল মোকাররম মার্কেটের মেসার্স নূর ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী সিরাজুল ইসলাম।
সিরাজুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, "দোকানের ভাড়া প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা । জমা টাকা যা ছিল সব শেষ হয়ে গেছে। গতকাল ১২৫০ টাকা বিক্রি করেছি। আজ দুপুর হয়ে গেল এক টাকাও বিক্রি করতে পারি নি।"
এ কথা শুধু সিরাজুল ইসলামের একার নয় । আতর ও টুপির বড় বাজার বায়তুল মোকাররম মার্কেট, কাটাবন মসজিদ মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড ও হাতিরপুল এলাকার ব্যবসায়ীদের সবার পরিস্থিতিও এমনই।
২৫০ কোটি টাকার আতর-টুপির বাজার
বাংলাদেশে মহামারির আগে বছরে ২৫০ কোটি টাকার আতর, টুপি বিক্রি হতো বলে জানিয়েছে ইসলামি পণ্য ব্যবসায়ী সমিতি।
সমিতির সেক্রেটারি মো. বশির উদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বছরে দেশের টুপির বাজারে ১০০ কোটি টাকার বেশি বিকিকিনি হয়। আতরের বাজার দেড়শ কোটি টাকার মতো।
"তবে ব্যবসায়ীরা গত বছরের করোনার ধাক্কা সামলে উঠতে পারেননি। তার ওপর আবার এখন চলছে করোনা দ্বিতীয় ঢেউ।"
পাইকারি বাজারে প্রাক মহামারি সময়ের তুলনায় অর্ধেক বিক্রি
আতর-টুপি বিক্রির পাইকারি বাজার রাজধানীর খদ্দর মার্কেট ও চকবাজার মার্কেট। রমজানের শুরুতে যখন পাইকারি বেচা-বিক্রির সময় ছিল, তখন সব ছিল বন্ধ। এর ফলে পাইকারি ব্যবসাও তেমন হয়নি।
খদ্দর বাজার শপিং কমপ্লেক্স-এর দ্বিতীয় তলায় আতর টুপি পাইকারি বিক্রি হয়। এ মার্কেটের আর বি এস এন্টারপ্রাইজে আতর টুপি বিক্রি করা হয়।
এখানে পাইকরি টুপি বিক্রি হয় ৫ টাকা থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে। ছয় মিলি লিটারের বোতলের আতর পাওয়া যায় ৫২ টাকায়।
আর সর্বোচ্চ ২৫ মিলি লিটারের বোতল ১৬ হাজার টাকা।
খদ্দর মার্কেটে আল- রুমি টুপি এ্যন্ড আতর সেন্টারে বিক্রেতা আবু তাহের বলেন,"বিক্রি নেই বললেই চলে। গাড়ি চলেনা। কীভাবে খুচরা ব্যবসায়ীরা কিনতে আসবে এখানে।"
আর বি এস এন্টারপ্রাইজ দোকানের কর্মী হুমায়ুন বলেন, "বিক্রি অর্ধেকে নেমে গেছে । এই সময় কথা বলার সুযোগ ছিল না আগে। রোজার সময় পাইকারি কিক্রির চাপ থাকে আমাদের।"
চকবাজার টুপি - আতর দোকান মালিক সমিতির সেক্রেটারি মো. আমির বলেন, "করোনার জন্য মানুষ ঘর থেকে কম বের হয়, তাই সারা দেশেই বেচাকনো নেই। আর সারা দেশে চাহিদা কম থাকলে আমাদেরও বিক্রি কম থাকে। আমাদের এখানে পাইকারি আতর টুপি বিক্রি হয়, গনপরিবহন বন্ধ থাকায ঢাকার বাইরের খুচরা বিক্রেতারা কিনতে আসতে পারছেন না। আগে যারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এখানে টুপি কিনতে আসতেন তারা আসতে পারছেন না।"
কাটাবন মসজিদের পাশে বোরকা গ্যালারিতে টুপি বিক্রি হয়। বিক্রেতা মো. পারভেজ জানান, গত দুই দিনে মাত্র একটি টুপি বিক্রি হয়েছে।
ফুটপাতেও জমেনি বিক্রি
দোকানের মতো ফুটপাতেও জমেনি আতর – টুপি বিক্রি। করোনার আগে যা বিক্রি হতো তার ১০ ভাগের এক ভাগও এখন বিক্রি হচ্ছে না।
বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটের লাগোয়া ফুটপাতের আতর- টুপি বিক্রেতা মো. আব্দুল খালেক। তার সঙ্গে যখন কথা হলো তখন দুপুর ১২টা। তখন পর্যন্ত এক টাকাও বিক্রি করতে পারেনি তিনি।
তিনি বলেন, "৩০ বছর ধরে এই ব্যবসা করি আমি। গতকাল মাত্র ৪০ টাকা বিক্রি করেছিলাম। আজ এখন পর্যন্ত কোনো বিক্রি হয়নি।"
হাতিরপুলে বীর উত্তম সি আর দত্ত রোডের ফুটপাতে ১৫ বছর ধরে টুপি বিক্রি করছেন মো. ইলিয়াস।
তিনি বলেন, "করোনা যখন ছিলনা তখন প্রথম রোজায় ৫ হাজার টাকা বিক্রি হতো। এর পর আস্তে আস্তে কমে প্রতি দিন দুই থেকে তিন হাজার টাকা বিক্রি হতো। এখন ৫ থেকে ৬ টাকা বিক্রি হয়।"