নভেম্বরে এসএমই মেলা, অংশ নিতে মুখিয়ে রয়েছেন উদ্যোক্তারা
'৯ম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা ২০২১' আয়োজন করছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন (এসএমই)। ২০ থেকে ২৭ নভেম্বর আটদিন ব্যাপী এ মেলা অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে।
গত মার্চ মাসে মেলা হওয়ার কথা থাকলেও বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা পিছিয়ে দিয়েছিল এসএমই ফাউন্ডেশন। এবার অনেকদিন পর হওয়াতে মেলায় অংশ নেয়ার জন্য উদ্যোক্তারা মুখিয়ে রয়েছেন।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিক্রয় এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রতি বছরই জাতীয় এসএমই পণ্য মেলার আয়োজন করা হয়।
উদ্যোক্তারা নিজেদের তৈরি দেশীয় পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করার কারণে মেলাকে ঘিরে ক্রেতাদের চাহিদাও বেশি থাকে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ডকে বলেন, 'এ মেলা উদ্বোধন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মতি দিয়েছেন। আমরা এবার ৩০০ স্টল দিবো। তবে অনেকদিন পর মেলা হচ্ছে তাই আবেদন অনেক পড়বে। অনেক উদ্যোক্তারা মেলায় অংশ নিতে চায় কিন্তু আমাদের জায়গাতো কম তাই সবাইকে হয়তো স্টল বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হবে না'।
ড. মো. মফিজুর রহমান বলেন, 'আমরা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পণ্যকে ক্রেতাদের কাছে পরিচিত করতে চাই। এটা সফলভাবে করতে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। আয়োজন যাতে নিখুঁত ও নির্বিঘ্নে হয়, ভিজিটর যাতে বেশি হয় সেজন্যে কাজ করছি'।
তিনি বলেন, 'এবারও বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিবিদ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ থাকবে। তখন শুধুমাত্র তারাই মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন। গতবারও এটা করেছিলাম আমরা। এতে উদ্যোক্তারা নির্বিঘ্নে তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন'।
'আমরা চাচ্ছি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে ক্রেতাদের সেতুবন্ধ তৈরী করতে। মেলায় একাধিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এসব সেমিনারে এসএমই খাতকে এগিয়ে নেওয়ার বিভিন্ন পরামর্শ উঠে আসবে আশা রাখি'।
শাবাব লেদারের স্বত্বাধিকারী মাকসুদা খানম টিবিএসকে বলেন, '২০১৬ থেকে ব্যবসা করি। ২০১৮ সালে এসএমই মেলায় অংশ নিয়েছি। এবারও স্টল বরাদ্দ পেতে আবেদন করেছি। ব্যবসা সম্প্রসারণে এসএমই মেলা ভালো ভূমিকা রেখেছে। সর্বশেষ মেলাতেও আমি বিদেশি কিছু বায়ার পেয়েছি, পরবর্তীতে তাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করেছি'।
চামড়াজাত পণ্যের এ উদ্যোক্তা বলেন, 'মেলায় অনেক প্রতিষ্ঠান আসে পণ্য দেখে পছন্দ হলে তারা মেলাতেই অর্ডার দিয়ে যায়। অনেকে পরবর্তীতে যোগাযোগ করে। রুট পর্যায়ের উদ্যোক্তার পণ্য পরিচিতির একটা ভালো মাধ্যম এসএমই মেলা। এখানে বিভিন্ন সেক্টরের মন্ত্রী সহ সরকারের নীতিনির্ধারকরা আসেন তাদের সঙ্গেও উদ্যোক্তাদের পরিচিত হয়। অনেকদিন পর মেলায় অংশ নিতে পারবো দেখে খুবই উৎসাহ লাগছে'।
গত দুই মেলায় পাটজাত পণ্য নিয়ে অংশগ্রহণ করে 'তুলিকা' নামক একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী ইশরাত জাহান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'মেলাটি উদ্যোক্তাদের জন্য খুবই প্রয়োজন, কারণ গতবছর মেলা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় ও করোনার কারণে বহু পণ্য অবিক্রিত রয়ে গেছে, আশা করি এবার ব্যাপক আকারে মেলাটির প্রচার-প্রচারণা করলে অবিক্রিত পণ্যগুলো বিক্রি হয়ে যাবে, এবং নতুন নতুন অর্ডার পেয়ে উদ্যোক্তারা মন্দা কাটিয়ে উঠবে'।
অগ্রাধিকার পাবে যে শিল্প
জাতীয় শিল্পনীতিতে উচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারী শিল্প, আইসিটি, সফটওয়্যার শিল্প, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য শিল্প, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প, পাট ও পাটজাত শিল্প, প্লাস্টিক শিল্প, হস্ত ও কারুশিল্প, জুয়েলারি (কৃত্রিম), খেলনা ও আগর শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত এসএমই প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে বলে জানা গেছে।
এসএমই ফাউন্ডেশন মেলায় প্রতিটি স্টলের ফি নির্ধারণ করেছে ১৫ হাজার টাকা। আবেদনের শেষ তারিখ ২১ অক্টোবর।
২০২০ সালের ৪ মার্চ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ৮ম জাতীয় এসএমই মেলা হয়। সেসময় ৯ দিনের মেলায় ৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকার বিভিন্ন পণ্য বিক্রি হয়। একই সঙ্গে ৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকার অর্ডারও পেয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। মেলায় সারাদেশের ২৯৬টি এসএমই উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। তারা ৩০৯টি স্টলে নিজেদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শন করে৷
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, দেশে প্রায় ৬০ লাখ এসএমই উদ্যোক্তা রয়েছেন। দেশের মোট ৯০ শতাংশ শিল্প ইউনিট এসএমই খাতের অন্তর্ভুক্ত। এসএমই ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, দেশের জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান হচ্ছে ২৫ শতাংশ। আর সামগ্রিকভাবে শিল্প খাতে এসএমইর অবদান ৩২ শতাংশ।