পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রকে পিডিবি প্রতি মাসে ১১৫ কোটি টাকা জরিমানা দেয়
বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার মাত্র অর্ধেক ব্যবহার করছে পায়রায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎকেন্দ্র। গত বছর ডিসেম্বরে নির্মাণ কাজ শেষ হলেও সঞ্চালন লাইন স্থাপনের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিটের একটির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
ফলস্বরূপ, পায়রা বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বা কেন্দ্র ভাড়া হিসেবে প্রতি মাসে ১১৫ কোটি টাকা পরিশোধ করছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। বোর্ডের একজন কর্মকর্তা জানান, সচল কোনো কেন্দ্রে উৎপাদন ক্ষমতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন না করা হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থ পরিশোধ করাই ক্যাপাসিটি পেমেন্ট।
১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রথম ইউনিটের উৎপাদন শুরু হয় গত বছর ১৫ মে। একই বছরের ৮ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ইউনিট চালু হয়।
নতুন একটি সঞ্চালন লাইনের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ঢাকায় সরবরাহের কথা থাকলেও লাইনটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। অথচ, ২০২০ সালের ডিসেম্বর নাগাদ লাইন স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি) সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজ করছে। এখন পর্যন্ত অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকার সাথে যুক্ত হতে পদ্মা নদীতে লাইন স্থাপনে সাতটি টাওয়ারের প্রয়োজন।
সঞ্চালন টাওয়ারগুলো নির্মাণের দায়িত্ব পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হলেও তারা সবেমাত্র প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
তবে, কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে তা কেউ বলতে পারছেন না।
বিপিডিবি বর্তমানে বিদ্যমান একটি সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে।
দ্বিতীয় ইউনিট অব্যবহৃত থাকায় সরবরাহ ঘাটতি পূরণে বিপিডিবি বেশি দাম দিয়ে জ্বালানি তেল নির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনছে। এছাড়া, পায়রার কেন্দ্র ভাড়া বাবদ তাদের মোটা অঙ্কের অর্থ গুনতে হচ্ছে।
বিপিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, 'পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার করা সম্ভব হলে আমরা জ্বালানি তেল নির্ভর ব্যয়বহুল বিদ্যুৎ কেনা পরিহার করতে পারতাম।'
জ্বালানি তেল নির্ভর বিদ্যুতের খরচ ইউনিট প্রতি ১৬ টাকা থেকে ২২ টাকা। অথচ পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ মাত্র ৭.৫ টাকায় বিক্রি করে থাকে।
'আমরা সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে দ্রুত সঞ্চালন লাইন নির্মাণ শেষ করার তাগাদা দিচ্ছি,' বলেন বেলায়েত হোসেন।
সঞ্চালন লাইন স্থাপন শেষ করতে নেই সুনির্দিষ্ট সময়সীমা
২০১৭ সালে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানিকে পটুয়াখালীর পায়রা থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে ঢাকার আমিনবাজার পর্যন্ত ৪০০ কেভি ডাবল-সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণের দায়িত্ব দেয় বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়।
প্রতিষ্ঠানটি পটুয়াখালী থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে পদ্মার তীর পর্যন্ত লাইন স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করেছে। এরপর থেকেই প্রতিষ্ঠানটি গোপালগঞ্জ থেকে মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগরে মাওয়া পর্যন্ত নদীর ওপর লাইন স্থাপনে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের টাওয়ার নির্মাণের অপেক্ষা করছে।
সেতু কর্তৃপক্ষের পূর্ণ মনোযোগ পদ্মা সেতু নির্মাণে থাকায় তারা অতি সম্প্রতি পাওয়ার গ্রিড কোম্পানিকে টাওয়ার নির্মাণ শুরু করার কথা জানায় বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'টাওয়ার নির্মাণ কাজ চলমান। টাওয়ারের কাজ শেষ হলে লাইন স্থাপনে আমাদের পাঁচ থেকে ছয় মাস সময় লাগবে। কিন্তু আমরা জানি না টাওয়ার নির্মাণ কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে।'
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা বা ২.৪৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার। নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চায়না মেশিনারিজ কোম্পানির (সিএমসি) যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করে।