প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে গতি নেই
করোনায় সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলায় দ্বিতীয় ধাপে প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ শ্লথ গতিতে বিতরণ হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রণোদনার ঋণ চলতি অর্থবছরের প্রথম আড়াই মাসে মাত্র ৫১৯ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে, যা এই সময়ের লক্ষ্যমাত্রার ৭.৬ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরে এ ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৫টি শিল্প প্রতিষ্ঠান সুবিধা গ্রহণ করেছে।
গত অর্থবছরে এ খাতে ৪০ হাজার কোটি টাকার ঋণের প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ৮১.৭৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এতে গ্রাহক পর্যায়ে সুদহার ৪.৫০ শতাংশ। সরকার হতে সুদ ভর্তুকি ৪.৫০%। প্রথম মেয়াদে সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা।
কোভিড-১৯ ক্ষতি মোকাবেলায় এখন পর্যন্ত সরকার মোট ২৮টি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। সবমিলিয়ে এসব প্যাকেজের অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ১০টি প্রণোদনা প্যাকেজ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। ইতিমধ্যে ৩টি প্যাকেজ পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকি ৭টি প্যাকেজ চলতি অর্থবছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণ সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে এখন পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে মাত্র ৪৭৭ কোটি টাকা। যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ২.৩৮ শতাংশ। প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিমের ঘোষণা করা হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা। এই প্যাকেজের আওতায় এখন পর্যন্ত সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৬৫টি প্রতিষ্ঠান। এখন পর্যন্ত ৩৭৫ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা পেয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৭ দশমিক ৫১ শতাংশ।
করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা ঋণ দেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সুদ ভর্তুকি নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে গত বছরে ব্যাংকগুলো বিতরণকৃত ঋণের সুদ ভর্তুকি পেলেও চলতি বছরে কোনো অর্থ ছাড় করেনি অর্থ মন্ত্রণালয়। নতুন করে সুদ ভর্তুকির টাকা ছাড় করার আগে মন্ত্রণালয় বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিতরণ হওয়া প্রণোদনা ঋণের যাচাই-বাছাই করতে। বাংলাদেশ ব্যাংকে সে হিসেবে এখন পরিদর্শন কার্যক্রম চলছে। এতে নতুন ঋণ বিতরণে প্রভাব পড়েছে।
এদিকে ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকগুলো প্রণোদনা ঋণের যথাসময়ে সুদ ভর্তুকি না পাওয়ায় নতুন ঋণ বিতরণে প্রভাব পড়েছে। যদিও এখনো গ্রাহকদের ওপর কোনো চাপ পড়েনি। তবে যাচাইয়ে অনিয়ম ধরা পড়লে ওই ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণের টাকা ফেরত দিতে হবে।
ঋণ হিসেবে বিতরণযোগ্য প্রতিটি প্রণোদনা প্যাকেজের জন্য গত বছরের এপ্রিলে পৃথক নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতিমালায় বলা হয়েছিল, প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর মেয়াদ হবে তিন বছর। ঋণটি এই সময়ে আদায় না হলে সেটি বিতরণকারী ব্যাংকগুলোর স্বাভাবিক ঋণ বলে গণ্য হবে।
এছাড়া প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্সিং স্কিম ঋণে চলতি অর্থবছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৭৫.৬০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার ৭.৫১ শতাংশ। এ ঋণের এখন পর্যন্ত সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৬৫টি প্রতিষ্ঠান।
এদিকে নিম্ন আয়ের পেশাজীবী কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য পুনঃঅর্থায়ন স্কিমে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আড়াই মাসে ৭৩.৮৭ শতাংশ ঋণ বিতরণ হয়েছে।
এসএমই খাতের জন্য ২ হাজার কোটি টাকার ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম চলতি অর্থবছরে নির্ধারণ হয়েছে। এর মধ্যে ১৯০০ কোটি টাকার গ্যারান্টি সুবিধা প্রাপ্তির জন্য ২৭টি ব্যাংক ও ৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ইতোমধ্যে ২টি আবেদনের বিপরীতে ২৮ লাখ টাকার গ্যারান্টি সুবিধা দেয়া হয়েছে।
এছাড়া রপ্তানিমুখী শিল্প-প্রতিষ্ঠানের কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারিদের বেতন-ভাতাদির জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ খাতটি শতভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে। একইসঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের গত বছরের এপ্রিল ও মে মাসের ঋণের বিপরীতে সুদ ভর্তুকির জন্য ২ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করেছে। এ খাতটিও শতভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে।