বড় ব্যয়ের পরিকল্পনা ছাড়াই বাজেট প্রস্তাবনা তৈরি
সরকারের ব্যয় বাড়িয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে করোনা মহামারির কবল থেকে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বড় কোন ব্যয় পরিকল্পনা ছাড়াই আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬,০৩,৬৮১ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট চূড়ান্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
জিডিপির অনুপাতে এটি চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়েও কম। আর মূল্যস্ফীতি হিসাব করলে চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার বাড়ছে না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অর্থ মন্ত্রণালয় আয়োজিত প্রাক-বাজেট বৈঠকগুলোতে ব্যবসায়ীরা নতুন অর্থবছর শুল্ক-করে বড় ধরণের ছাড় চেয়েছেন। রপ্তানিমুখী ও আমদানি বিকল্প শিল্প খাতগুলোতে বাড়তি প্রণোদনা রাখার অনুরোধ করেছেন।
আর প্রবৃদ্ধিমুখী বাজেট না করে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়িয়ে জীবন ও জীবিকাকে প্রাধান্য দেওয়ার সুপারিশ ছিল অর্থনীতিবিদদের। এজন্য প্রয়োজনে বিদেশি উৎস থেকে অনেক বেশি ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন তারা।
এসব চাহিদা পূরণে বাড়তি ব্যয়ের উদ্যোগ থাকছে না নতুন বাজেটে। এমনকী জিডিপির অনুপাতে আগামী অর্থবছর এবারের মূল বাজেটের চেয়েও কম অর্থ ব্যয় করবে।আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে জিডিপির মাত্র ১৭.৪৬ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট ছিল ৫,৬৮,০০০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৭.৯০ শতাংশ। ব্যয় সাশ্রয়ী নীতির অংশ হিসেবে অনুন্নয়ন বাজেট কাঁটছাঁট করা এবং অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নে ব্যর্থতার কারণে বাজেটের আকার কমিয়ে ৫,৩৮,৯৮৩ কোটি টাকা করা হয়েছে, যা জিডিপির ১৭.৪৫ শতাংশ।
কল্যাণমুখী রাষ্ট্র ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট এক্সপেনডিচার জিডিপির অনুপাতে প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যয় করে। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত ২৬.৯, পাকিস্তান ২২, নেপাল ৩১ ও ভিয়েতনাম সরকার ২৩ শতাংশের বেশি অর্থ ব্যয় করছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'চলতি অর্থবছরের বাজেট বরাদ্দের বড় একটা অংশ ব্যয় হচ্ছে না। এ অবস্থায় বাজেটের আকার কতটা বাড়ানো যাবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। তবে বাংলাদেশে বাজেটের আকার বরাবরই প্রয়োজন ও অন্যান্য দেশের তুলনায় কম'।
তিনি বলেন, 'কোভিডের মতো খারাপ সময়েও সক্ষমতার অভাবে স্বল্প বরাদ্দের বড় অংশ বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না, ব্যয় হয় না। এ অবস্থায় আগামীতে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি বাস্তবায়নের সক্ষমতাও বাড়াতে হবে'।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'দেশের মানুষ ও অর্থনীতি সঙ্কটে রয়েছে। এ সঙ্কট কাটাতে সরকারের ব্যয় বাড়াতে হবে। দেশের মানুষের কল্যাণে বাড়তি ব্যয় নিশ্চিত করতে বাজেট ঘাটতি জিডিপির আট শতাংশ ছাড়ালেও বড় ধরনের কোন সমস্যা হবেনা'।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, 'অতিমারির কারণে গত অর্থবছর থেকেই সম্প্রসারণমূলক বাজেট প্রত্যাশা করা হচ্ছিল, যেখানে উন্নয়ন ব্যয় বাড়বে। প্রয়োজনে বাজেট ঘাটতিও বাড়বে। কারণ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, রিবাউন্স নিশ্চিত করতে মানুষের হাতে টাকা পৌঁছাতে হবে। মানুষের টিকে থাকার জন্য টাকার প্রবাহ বাড়াতে হবে'।
তিনি বলেন, 'বছরে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। করোনার সময়েও জিডিপির ছয় শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে'। এ দুই সূচক বিবেচনায় নতুন বাজেটের আকার ন্যূনতম ১২-১৫ শতাংশ বাড়ানো উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
'ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের টিকিয়ে রাখতে হলে এককালীন কিছু টাকা দিতে হবে। নতুন দুই তিন কোটি গরীবকে নগদ সহায়তার আওতায় আনতে হবে। এ সব বিবেচনায় বড় ধরনের ঘাটতি স্বীকার করে হলেও অর্থ ব্যয় বাড়াতে হবে', যোগ করেন তিনি।
আগামী অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন নির্ভর করবে বিদেশি ঋণ ব্যবহারের উপরে। কারণ, বাজেটের ১৬ শতাংশেরও বেশি অর্থায়ন হবে বিদেশি উৎস থেকে। বাজেট সহায়তা হিসেবে পাওয়া বিদেশি ঋণের অর্থ সরকার ব্যবহার করতে পারলেও অতীতে দেখা গেছে, প্রকল্প সহায়তার অর্থ ব্যবহারে ব্যর্থতা রয়েছে।
করোনা সংক্রমণের পর দেশগুলো সরকারি ব্যয় বাড়ালেও বাস্তবায়ন অদক্ষতার কারণে বাংলাদেশে তা বাড়ছে না। কোভিড মোকাবেলায় বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগিদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক সহায়তা পেলেও তা খরচ করতে পারেনি সরকার। ফলে বাংলাদেশের প্রকৃত বাজেট অর্থব্যয় জিডিপির ১৫-১৬ শতাংশের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
পরিচালন ব্যয় বাজেটের ৬০%
আগামী বাজেটের প্রায় ৬০ ভাগ ব্যয় হবে পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে। এর পরিমাণ ৩,৬১,৫০০ কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ১৩,৩২০ কোটি টাকা এবং সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৩৭,৮১২ কোটি টাকা বেশি।
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে পরিচালন খাতে বরাদ্দ ছিল ৩,৪৮,১৮০ কোটি টাকা। তবে ব্যয় সংকোচন নীতির অংশ হিসেবে সরকারি চাকরিজীবীদের গাড়ি কেনা নিষিদ্ধ করা, বিদেশ ভ্রমণে বরাদ্দ অর্ধেক কমানোসহ বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে এ খাতে ব্যয় কিছুটা কমেছে। সংশোধিত বাজেটে পরিচালন ব্যয় বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩,২৩,৬৮৮ কোটি টাকা।
পরিচালন ব্যয়ের মধ্যে আগামী অর্থবছর সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হবে ঋণের সুদ পরিশোধে। এ খাতে বরাদ্দের ৬৮,৫৮৯ কোটি টাকার মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ বাবদ খরচ হবে ৬২,০০০ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ বাবদ ব্যয় হবে ৬,৫৮৯ কোটি টাকা।
ব্যয় সাশ্রয়ের অংশ হিসেবে আগামী অর্থবছর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে জমি অধিগ্রহণ, নির্মাণ ও পূর্ত কাজ, শেয়ার ও ইক্যুইটি খাতে বিনিয়োগ চলতি অর্থবছরের তুলনায় কমাবে সরকার।
মূলধন ব্যয় নামে এসব খাতে আগামী অর্থবছর বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩২,৬৬০ কোটি টাকা। চলতি অর্থ বছরের মূল বাজেটে এটি ছিল ৩৬,৪৯০ কোটি টাকা। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে এসব খাতে ব্যয় কমিয়ে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ ২১,১৪১ কোটিতে নামানো হয়েছে।
উন্নয়ন ব্যয় ২,৩৭,০৭৮ কোটি টাকা
আগামী অর্থবছর উন্নয়ন খাতে সিটি করপোরেশন ও স্বায়ত্বশাসিত সংস্থার উন্নয়ন কর্মকান্ডসহ মোট ২,৩৭,০৭৮ কোটি টাকা ব্যয় হবে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ২,১৫,০৪৩ কোটি টাকা। অব্যবস্থাপনা ও সক্ষমতার অভাবে তা বাস্তবায়ন করতে না পারায় সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ কমিয়ে ২,০৮,০২৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও প্রকৃত বাস্তবায়নের পরিমাণ হবে এর চেয়েও কম।
উন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২,২৫,৩২৪ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ২০,১৭৯ কোটি টাকা। কাঙিক্ষত মাত্রায় এডিপি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ কমিয়ে ১,৯৭,৬৪৩ কোটি টাকা ধরা হয়েছে।
করোনা মহামারীতে এডিপি বাস্তবায়ন অধিক গুরুত্বপূর্ণ হলেও চলতি অর্থবছর তা বাস্তবায়নের হার খুবই হতাশাজনক। গত এপ্রিল শেষে, অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৯৮,৮৪০ কোটি টাকা, যা সংশোধিত বরাদ্দের ৪৯.১৩ শতাংশ। বাস্তবায়নের এই হার গত পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন।
সরকারের উন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে বরাদ্দ আগামী বছর কমানো হচ্ছে, যদিও এই কর্মসূচির আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণে দরিদ্রদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।
এ খাতে চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ২৬৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল, যা এবার ২৫৮৮ কোটিতে নামানো হয়েছে।
এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ১ টাকাও বাড়ছে না
আগামী অর্থবছর সরকার ৩৫,৬৮১ কোটি টাকা বাড়তি ব্যয়ের পরিকল্পনা করলেও রাজস্ব আহরণের প্রধান উৎস এনবিআরের লক্ষমাত্রা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ১ টাকাও বাড়ছে না। তবে এনবিআর বহির্ভূত কর ব্যবস্থা এবং কর বহির্ভূত রাজস্ব- বিভিন্ন সেবা ফি, জরিমানা, টোল, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান ও করপোরেশনগুলোর মুনাফা থেকে বাড়তি অর্থ কোষাগারে নেওয়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে অর্থবিভাগ।
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ৩,৮৯,০০০ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এটি চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ১১,০০০ কোটি টাকা বেশি।
২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩,৭৮,০০০ কোটি টাকা, যা সংশোধন করে ৩,৫১,৫৩২ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত অর্থবছর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আগের অর্থবছরের তুলনায় যখন এনবিআরের রাজস্ব আয় কমে গেছিল, তখন চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে উচ্চাভিলাসী লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয় সংস্থাটিকে। যদিও তা অর্জন করার মতো প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ লক্ষ্যমাত্রা যে পূরণ হবার নয়, তা তখনই অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন এনবিআরের চেয়ারম্যান।
কোভিডের প্রথম ওয়েভ শেষে আমদানি-রপ্তানিতে কিছুটা স্বাভাবিক পরিস্থিতি নেমে আসা ও অর্থনীতি রিবাউন্ড করার কারণে প্রাথমিক হিসাবে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও ৩,৩০,০০০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার ধারে-কাছে যেতে পারছে না সংস্থাটি। আগামী অর্থবছরের বাজেটেও এই লক্ষ্যমাত্রা বহাল রাখা হয়েছে। যদিও চলতি অর্থবছর এনবিআরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৩,০১,০০০ কোটি টাকা করা হয়েছে।
আগামী অর্থবছরও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে না বলে মনে করছেন ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, করোনার কারণে এ বছর আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি আদায় সম্ভব হবে না। তাই আগামী বাজেটে কোনভাবেই ৩ লাখ কোটি টাকার বেশি লক্ষ্য নির্ধারণ করা ঠিক হবে না।
কর ব্যতীত রাজস্ব খাত থেকে আগামী অর্থবছর ৪৩,০০০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। মূলত করপোরেশন ও স্বায়ত্বশাসিত সংস্থাগুলোর মুনাফার যে অর্থ বিভিন্ন ব্যাংকে সঞ্চয় রাখা আছে, সেগুলো কোষাগারে এনে এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা হবে। এছাড়া, বিভিন্ন সেবা ফিও বাড়তে পারে।
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এ খাত থেকে ৩৩,০০০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরার পর সংশোধিত বাজেটে তা ২৫৩২ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে।
স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশ থেকে অনুদান পেয়ে থাকে, যা ফেরত দিতে হয় না। ফলে বিদেশি অনুদানকে আয় হিসেবে বিবেচনা করে সরকার। কোভিড পরিস্থিতির কারণে অনুদান ৫০০ কোটিরও বেশি কমতে পারে বলে আশঙ্কা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য এক চিঠিতে আগামী অর্থবছর অনুদান কমিয়ে দেবে বলে জানিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে।
আগামী অর্থবছর বৈদেশিক অনুদান হতে ৩৪৯০ কোটি টাকা পাওয়ার আশা করছে অর্থবিভাগ। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এটি ছিল ৪০১৩ কোটি, যা সংশোধিত বাজেটে ৩৯৮৫ কোটিতে নামানো হয়েছে।
ঘাটতি জিডিপির ৬.২%
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সূত্র মেনে বাংলাদেশ প্রতিবছর জিডিপির ৫ শতাংশ ঘাটতি রেখে বাজেট প্রণয়ন করলেও কোভিড পরিস্থিতিতে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা না বাড়িয়ে ঘাটতি অর্থায়ন বাড়িয়ে আগামী বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে।
এতে সামগ্রিক ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে ২,১৪,৬৮১ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬.২ শতাংশ। কোভিড পরিস্থিতির কারণে চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ১,৯০,০০০ কোটি টাকা ঘাটতি ধরা হয়েছিল, যা ছিল জিডিপির ৬ শতাংশ। সংশোধিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ২৫০০ কোটি টাকা কমলেও অর্থনীতির আকার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী না বাড়ায় জিডিপির অনুপাতে ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.১ শতাংশ।
লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বৈদেশিক অনুদান পেলে আগামী অর্থবছর বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২,১১,১৯১ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬.১ শতাংশ।
বিদেশি ঋণে ভরসা বেশি
ঘাটতি অর্থায়ন মেটাতে আগামী অর্থবছর বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরতা বাড়বে। বিদেশি উৎস থেকে সরকার মোট ৯৭,৭৩৮ কোটি টাকা ঋণ নেবে, যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এটি ছিল ৭৬,০০৪ কোটি টাকা।
কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বৈদেশিক সহায়তা না পাওয়া এবং বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থতার কারণে সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৬৮,৪১৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১,১৩,৪৫৩ কোটি টাকা ঋণ নেবে সরকার। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে ৭৬,৪৫২ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২,০০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হবে।
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক থেকে ৮৪,৯৮০ কোটি টাকা এবং সংশোধিত বাজেটে ৭৯,৭৪৯ কোটি টাকা নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। অর্থাৎ, আগামী অর্থবছর ব্যাংক থেকে সরকার কম পরিমাণ ঋণ করবে। এতে বেসরকারিখাতে ঋণ বিতরণ বিঘ্নিত হবে না।
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ২০,০০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৩০,৩০২ কোটি টাকা করা হয়েছে।