বাংলাদেশ থেকে বেড়েছে রপ্তানি, বেনাপোল বন্দরে ভয়াবহ পণ্যজট
বাংলাদেশের বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ পণ্যজট। বেনাপোল দিয়ে রপ্তানি বেড়ে যাবার কারণে ওপার থেকে আমদানিবাহী ট্রাক বেনাপোলে প্রবেশ করতে পারছে না। আবার পেট্রাপোলে জায়গা সংকট থাকায় বেনাপোলে রপ্তানিবাহী ট্রাকজট লেগেছে।
বেনাপোল বন্দর সূত্র জানায়, গেল ২০২০-২১ অর্থবছরে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি কমে যায় প্রায় ৪২ হাজার মেট্রিক টন। গত ২ বছর ধরে রপ্তানি কমছে। এর আগে রপ্তানি হার ভালো ছিল।
তবে, গত ১৫ দিন ধরে রপ্তানি আদেশ বাড়ছে। করোনাকালে যেখানে রপ্তানিবাহী ৫০ ট্রাক পণ্য যেত, এখন সেখানে যাচ্ছে ৩০০ ট্রাক পণ্য।
কাস্টম সূত্র জানায়, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতি বছর প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা মূল্যের বাংলাদেশে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়। ২০১৪- ১৫ অর্থবছর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত ৫ বছরে রপ্তানি হয়েছিল ১৮ লাখ ৫১ হাজার ২৫৭ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য। এর মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের রপ্তানি হয়েছিল ৪ লাখ এক হাজার ১৭৭ মেট্রিক টন পণ্য, ২০১৯-২০ অর্থবছরে রফতানি হয় ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৮২৯ মেট্রিক টন পণ্য। আর গেল ২০২০-২১ অর্থবছরে রফতানি হয়েছে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৮ মেট্রিক টন পণ্য।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, "করোনাকালে আমাদের দেশ থেকে রপ্তানির হার অনেক কমে যায়। গত ১০ থেকে ১৫ দিন ধরে সেটি দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। এতে উভয় বন্দরে দেখা দিয়েছে পণ্যজট। তবে, বনগাঁ পৌরসভা পার্কিংয়ে রাখা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় থাকা ট্রাক থেকে চাঁদা নিচ্ছে। প্রতিদিন ছোট গাড়ি ৫০ টাকা, ৬ চাকার গাড়ি ৮০ টাকা, ১০ চাকার গাড়ি ১২০ টাকা ও ট্রলার ১৬০ টাকা হারে পার্কিং চার্জ আদায় করে থাকে। এতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।"
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশের সরকার অনুমোদিত ২৩টি স্থলবন্দরের মধ্যে চলমান ১২টি বন্দরের অন্যতম বেনাপোল স্থলবন্দর। এ বন্দর থেকে ভারতের কলকাতা শহরের দূরত্ব ৮৪ কিলোমিটার। মাত্র তিন ঘণ্টায় একটি পণ্যবাহী ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে পৌঁছাতে পারে কলকাতা শহরে। তেমনি একই সময় কলকাতা থেকে পণ্যবাহী ট্রাক পৌঁছায় বেনাপোল বন্দরে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে এ পথে ব্যবসায়ীদের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে প্রবল আগ্রহ রয়েছে। প্রতিবছর এ বন্দর দিয়ে প্রায় ৮০ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হচ্ছে। আমদানি বাণিজ্য থেকে সরকারের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা এবং রপ্তানি বাণিজ্য থেকে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয়। প্রতি বছর ৬০ হাজার কোটি টাকার পণ্য এই স্থলবন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে। সরাসরি প্রায় ২০ হাজার মানুষ এবং পরোক্ষভাবে সব মিলিয়ে ৫০ হাজার মানুষ নির্ভরশীল এই স্থলবন্দরের ওপর।
আমদানি পণ্যের মধ্যে গার্মেন্টস সামগ্রী, তৈরি পোশাক, শিল্প-কারখানা ও ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল, শিল্প প্রতিষ্ঠানের মূলধনী যন্ত্রপাতি, কেমিক্যাল, খাদ্যদ্রব্য, চাল, পেঁয়াজ, তুলা, বাস, ট্রাক চ্যাসিস, মোটরসাইকেল এবং পার্টস ও টায়ার রয়েছে।
রপ্তানি পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাত দ্রব্য, টিস্যু, ধানের কুড়া, সাদা মাছ, ব্যাটারি, সিরামিক টাইলস, সাবান, হাড়ের গুঁড়ো, ওভেন গার্মেন্টস, নিটেড গার্মেন্টস, নিটেড ফেব্রিকস উল্লেখযোগ্য।
ইন্দো-বাংলা চেম্বার অব কমার্স সাব কমিটির পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, "ভারত থেকে রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা বেড়ে যাবার কারণে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরে তীব্র জটের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে।"
এ ব্যাপারে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার মো. আজিজুর রহমান বলেন, "করোনাকালে বেনাপোল দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য কমে যায়। কিন্তু গত ১৫ দিনে ধরে রপ্তানি বেড়েছে। আগে যেখানে শতাধিক ট্রাক রপ্তানি হতো, এখন সেখানে তিন থেকে সাড়ে তিনশ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। এতে বন্দরে জটের সৃষ্টি হয়েছে। বন্দরের সক্ষমতা বাড়লে এই বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য আরও গতিশীল হবে।"
বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক মামুন কবীর জানান, রফতানিবাহী ট্রাকের হার বেড়ে যাবার কারণে পণ্যজট সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছি।