বৈশ্বিক তেলের বাজার স্বাভাবিক হলেও জ্বালানি আমদানিতে মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম করোনা-পূর্ব স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলেও জ্বালানি আমদানি নিয়ে উদ্বেগের মুখে বাংলাদেশ।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, সোমবার কালো সোনা নামে পরিচিত খনিজ বা অপরিশোধিত তেলের মূল্য ব্যারেল প্রতি ৬০ মার্কিন ডলারে ফিরেছে। গত কয়েক মাসে মূল্যবৃদ্ধির এই হার ৫০ শতাংশেরও বেশি।
জ্বালানি তেলের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ব বাজার স্বাভাবিক হলেও বাংলাদেশ সরকারের জন্য তা চাপ সৃষ্টি করতে করতে পারে। অন্যদিকে, খনিজ তেলের দাম বৃদ্ধিতে সরবরাহেও সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জ্বালানি তেলের একমাত্র আমদানিকারক রাষ্ট্রচালিত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনও (বিপিসি) বিশ্ব বাজারে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।
বিপিসির পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড প্ল্যানিং) সৈয়দ মেহেদি হাসান বলেন, 'তেলের দাম বৃদ্ধি পেলে তা মূল্য পরিশোধের ভারসাম্যে চাপ সৃষ্টি করে। তবে বর্তমান মূল্যবৃদ্ধি চরম পর্যায়ে না পৌঁছানো অবধি তেমন একটা চাপ সৃষ্টি করবে না।'
সরবরাহ নিরাপত্তার বিষয়ে সৈয়দ মেহেদি হাসান বলেন, বিপিসির ৪৫ দিনের মজুদ আছে। এছাড়া সরবরাহকারীদের সঙ্গেও অবাধ সরবরাহের দৃঢ় চুক্তি করা আছে।
সাধারণত বিশ্ব বাজার থেকে খনিজ ও পরিশোধিত তেল আমদানির জন্য বিপিসি ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে।
তবে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় ২১ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকায় নেমে আসে। মহামারির কারণে দেশব্যাপী লকডাউনে বাণিজ্যিক চাহিদা কমে যাওয়ার আমদানি খরচ কমে।
এ বছর দেশের চাহিদা মেটাতে ৭১ লাখ ৫০ হাজার টন ফুয়েল আমদানি করতে হবে বলে ধারণা করছে বিপিসি।
বর্তমানে দেশের দৈনিক তেলের চাহিদা প্রায় ১৪ হাজার টন। করোনার সময় সরকারি ছুটি চলাকালীন এই চাহিদা দৈনিক ৬ হাজার টনে নেমে এসেছিল।
দেশের জ্বালানি চাহিদার ৭৮ শতাংশ পূরণ করে ডিজেল তেল। দেশের মূল পরিবহন মাধ্যম ট্রেন, লঞ্চ, মোটরযান- সবই ডিজেলে চলে।
সেচকালীন সময়ে ডিসেম্বর থেকে মে পর্যন্ত জ্বালানি চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এ সময় ফসলি জমিতে ১১ লাখ ২৬ হাজার পাম্প সেচ কাজে ব্যবহৃত হয়।
বিপিসির আরেকটি সূত্র বলছে, জ্বালানির দাম ব্যারেলপ্রতি ৭০ ডলার না ওঠা পর্যন্ত বাংলাদেশি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটির কোনো ক্ষতি হবে না।
বর্তমানে বিপিসির বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি লিটার ডিজেল, অকটেন এবং পেট্রোল যথাক্রমে ৬৫ টাকা, ৮৯ টাকা এবং ৮৬ টাকায় বিক্রি করে। ২০১৬ সালের এপ্রিলে এই মূল্য নির্ধারিত হয়।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেকের উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্তে ফেব্রুয়ারি ও মার্চে সৌদি আরবের প্রতিশ্রুত তেলের বাড়তি সরবরাহ কমতে পারে। এমনকি রাশিয়াও বিশ্ব বাজারে তেলের মূল্য নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করছে।
গত বছর জানুয়ারির পর সোমবার আন্তর্জাতিক বাজারে ইউরোপকেন্দ্রিক ব্রেন্ট তেলের মূল্য সর্বোচ্চ ২.৪৫ ডলার বৃদ্ধি পায়। ফলে সরবরাহ সংকোচনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ওসিবিসির অর্থনীতিবিদ হাউই লি বলেন, বিশ্বের শীর্ষ রপ্তানিকারক সৌদি আরব গত সপ্তাহে সরবরাহ কমার আশঙ্কার মাঝেও খনিজ তেলের দাম অপরিবর্তিত রেখে বেশ 'ইতিবাচক বার্তা' দিয়েছে।
'সৌদি যখন এমন আচরণ করছে, তখন অন্যরা সরবরাহ কমানোর সাহস পাবে বলে মনে হয় না,' যোগ করেন তিনি।
বিনিয়োগকারীরা বছরের দ্বিতীয় ভাগে বিশ্লেষকদের তেলের চাহিদা পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণীর ওপর নজর রাখছে। তবে তারা ইউরোপ ও এশিয়ার করোনা লকডাউনের কারণে চাহিদার বর্তমান দুর্বলতা নিয়ে তেমন চিন্তিত নয় বলে জানান লি।
সোমবার অন্যান্য মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দুর্বল অবস্থান পণ্য বাজারে এনেছে ইতিবাচকতা। অন্যান্য মুদ্রাধারী ক্রেতাদের জন্য ডলার নির্ভর পণ্য আরও সহজলভ্য হয়েছে।
রয়টার্সের সূত্রানুসারে, এএনজেড বিশ্লেষকদের মতে, 'দুর্বল ইউএস জব রিপোর্টের কারণে নতুন প্রণোদনামূলক পদক্ষেপের আশা করা যাচ্ছে।' বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকির আশঙ্কায় শক্তি উৎপাদন খাত ও শিল্প ধাতব পণ্য উপকৃত হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
তবে খনিজ তেলের মূল্য বাড়লেও যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনকারীরা উৎপাদন বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিচ্ছে।
উৎপাদন সম্পর্কে অগ্রীম ধারণা প্রদানকারী সূচক ইউএস অয়েল রিগ কাউন্ট মে মাসের পর গত সপ্তাহে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে এনার্জি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বেকার হিউজ করপোরেশন।