ভোগব্যয়ে সুরক্ষা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান রক্ষায় প্রণোদনা বাড়াতে হবে
স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি মোকাবিলার পাশাপাশি আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে মানুষের ভোগব্যয় ও কাজের সুরক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলেছেন, ক্রয়ক্ষমতা ধরে রাখতে আগে বিদ্যমান দরিদ্র, নতুন দরিদ্র ও নগর এলাকায় দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে থাকা মানুষের কাছে সরাসরি আর্থিক সহায়তা দিতে 'ফিসক্যাল ডেফিসিট' কিছুটা বাড়িয়ে হলেও বড় বাজেট দিতে হবে।
আর কর্মসংস্থান রক্ষায় তৈরি পোশাক শিল্পের বাইরে বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ চাহিদা নির্ভর ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের প্রতিষ্ঠান রক্ষায় প্রণোদনার পরিমাণ বাাড়নো ও শ্রমিকদের জন্য নগদ সহায়তা বরাদ্দে তাগিদ দিয়েছেন তারা।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের আয়োজনে 'কারেন্ট স্টেট অফ পোভার্টি, ভালনেরাবিলিটি এন্ড দ্য ইকোনমি' শীর্ষক প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ সব বিষয় উঠে এসেছে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের সঞ্চালনায় এ অনলাইন আলোচনায় পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর এবং সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য যুক্ত ছিলেন। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সম্পাদক ইনাম আহমেদ।
ওয়েবিনারে বক্তারা বলেন, ভোগব্যয়কে সুরক্ষা দিতে না পারলে মানুষের ঋণগ্রস্ততা, অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রির প্রবণতা, অপুষ্টি ও চরম দারিদ্র্যতার প্রবণতা বেড়ে যাবে। আর মানুষের ভোগব্যয় বাড়লে অভ্যন্তরীণ বাজারনির্ভর ক্ষুদ্র ও মাঝারী আকারের শিল্প প্রতিষ্ঠানের পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া সহজ হবে।
দরিদ্রদের নগদ সহায়তা ও কর্মসংস্থান সুরক্ষায় বরাদ্দ বাড়াতে সরকারের আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে মন্তব্য করে আলোচনায় বক্তারা বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির কোন সূচকেই বড় ধরনের ঝুঁকির আশঙ্কা নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজর্ভের অবস্থা ভালো, ব্যাংকিং খাতে বাড়তি তারল্য রয়েছে। জিডিপির তুলনায় সরকারের ঋণের পরিমাণও কম। এ অবস্থায় বড় বাজেট প্রণয়নে সরকারের কোন আর্থিক সমস্যা হবে না।
তবে জাতীয় বাজেট ও এর আওতায় নেয়া সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচী ও প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা আরও বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, প্রতি বছর বড় বরাদ্দ দেয়া হলেও বাস্তবায়ন হচ্ছে অনেক কম। এর ফলে সরকারের আয়-ব্যয়ের হিসাব ঠিক থাকলেও দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য তথা টেকসই দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে না।
তারা বলেছেন, চলতি অর্থবছর করোনার প্রকোপে বাড়তি অর্থের চাহিদা থাকলেও সরকারের ব্যয়ের পরিমাণ কমে আসায় ঘাটতির পরিমাণ কমেছে। আগামী বাজেটে বাস্তবায়ন সক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজে গতি আনার পরামর্শ দেন তারা।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সম্পাদক ইনাম আহমেদ বলেন, 'কোভিডের কারণে আমাদের দারিদ্র্য অনেক বেড়ে গেছে। ভালনেরাবিলিটিও বেড়েছে। অনেকের চাকুরী নেই। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে গিয়ে অনেকের আর্থিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে। অনেকেই নতুন করে ঝুঁকিতে পড়েছেন'।
তিনি বলেন, 'আমাদের রপ্তানি কিছুটা ঠিক থাকলেও আমদানি কমেছে। নানা ধরনের টান-দোটানায় আছে অর্থনীতি। এই অর্থনীতি কীভাবে দারিদ্র্য ওভালনেরাবিলিটির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তা আলোচনার দাবি রাখে'।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, 'করোনার প্রভাব নিয়ে অনেক জরিপ হয়েছে এবং সব জরিপের ফলাফল এটা দেখাচ্ছে যে দারিদ্র্যের মাত্রা বেড়েছে'।
তিনি বলেন, 'আগে যারা দরিদ্র ছিলেন তাদের অবস্থা অবনতি হয়েছে এবং দুই শতাংশ মানুষ মারাত্মক ধরনের খাদ্য সঙ্কটে আছেন'।
'তাদের সাথে যোগ হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি নতুন দরিদ্র, যারা আগে দরিদ্র্যসীমার ওপরে থাকলেও তাদের আয় মধ্যম আয়তালিকার কম ছিল। প্রথম ধাক্বায় তারা দারিদ্র্যে পতিত হয়েছেন, এবং তাদের বড় একটা অংশ এখনও পুনরুদ্ধারের পথ খুঁজে পাননি'।
এরই মধ্যে ব্যয় বৃদ্ধি একটা যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'শহর এলাকায় বাড়িভাড়া, ইউটিলিটি, যাতায়াত, স্বাস্থ্য, শিক্ষার ব্যয় প্রায় সামষ্টিকভাবে দ্বিগুণ হয়েছে। এর ফলে মানুষের সঞ্চয় কমেছে, ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে'।
তবে নিজেদের নিকটাত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবদের সহায়তা নিয়েই এ সব পরিবার টিকে আছে। সরকার বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দরিদ্ররা নামমাত্র সহায়তা পেয়েছেন বলেও তিনি জানান।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'বাংলাদেশে সামষ্টিক অর্থনীতির সার্বিক অবস্থা এখনও স্থিতিশীল আছে'। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, 'ফিসক্যাল পলিসির আওতায় সরকারের বড় অর্থ ব্যয় হয়নি। ব্যালেন্স অব পেমেন্টে বড় সারপ্লাস আছে। সব মিলিয়ে অর্থনীতিতে কোন সংকট নেই'।
তবে আর্থিক ও বাণিজ্য সংক্রান্ত কিছু সূচকের পর্যালোচনা করে তিনি বলেন, 'অর্থনীতি এখনও তেমন চাঙ্গা হয়নি'।
তিনি বলেন, 'আমাদের ক্রেডিট এক্সপানশন ৮ শতাংশ যা মূল্যস্ফীতির সামান্য বেশি। তা আবার সরকারের স্টিমুলাসের সমান'। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, 'তা হলে কী স্টিমুলাসের বাইরে আর ক্রেডিট দেয়া হয়নি?' এই অবস্থায় বড় প্রবৃদ্ধি কীভাবে হবে সে বিষয়েও প্রশ্ন তুলেন আহসান এইচ মনসুর।
তিনি আরও বলেন, 'টার্ম লোনের প্রবৃদ্ধি এখনও ডাবল ডিজিট নেগেটিভ। মেশিনারি আমদানিতেও একই অবস্থা'। এ বিনিয়োগে বড় প্রবৃদ্ধি সম্ভব হবে না বলেও তার আশঙ্কা।
তবে সার্বিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারত মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'আমরা হয়ত কিছুটা প্রবৃদ্ধি লাভ করছি। এটাও একটা ভালো দিক। কারণ এ অবস্থায় প্রবৃদ্ধি না করাটাও অস্বাভাবিক কিছু ছিল না'।
তিনি বলেন, করোনার মধ্যেই অনেকগুলো শিল্প মোটামুটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। রপ্তানি খাত আগের পর্যায়ে যেতে না পারলেও সেখানে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত আছে। চাহিদা বাড়লে তারা সম্প্রসারণের জন্য প্রস্তুত আছে।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অর্থনীতির ঝুঁকি স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির চাইতে বেশি দিন প্রলম্বিত হবে। তবে এই দুই ঝুঁকির মধ্যে সমন্বয় করা খুবই কঠিন হবে মন্তব্য করে তিনি সমন্বিত ব্যবস্থাপনা প্রণয়নের তাগিদ দেন।
তিনি বলেন, 'আগামী বাজেটে ভোগব্যয়কে সুরক্ষা দিতে হবে। তা করতে না পারলে মানুষের ঋণগ্রস্ততা, দারিদ্র্য, সম্পত্তি বিক্রি, অপুষ্টি, চরম দারিদ্র্যতা বাড়বে'।
'দ্বিতীয়ত, যদি কোথাও গুরুত্ব দিতে হয়, সেটা হলো চাকুরীর সুরক্ষা। এই দুটো জায়গায় সহায়তা দিতে চাইলে অবশ্যই সম্প্রসারণমূলক নীতি গ্রহণ করতে হবে'।
তিনি বলেন, বাজেট ঘাটতি গত কয়েক বছর ধরেই সীমার মধ্যে আছে, তবে বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে বেশি অর্থ ব্যয় করতে চাইলেও আগামীতে কোন সমস্যা হবে না। নিম্ন মূল্যস্ফীতি, বাড়তি রিজার্ভ আর সীমিত বিদেশি ঋণের কারণে বড় বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের বাড়তি সক্ষমতা রয়েছে বলেও তিনি জানান।
তিনি বলেন, দরিদ্র মানুষের প্রান্তিক প্রবণতা গ্রাহক (এমপিসি) সবচেয়ে বেশি। এ কারণে সরকারের আর্থিক সহায়তা সরাসরি গরীব মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে।
এ অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী গত বছর ভোগব্যয় সুরক্ষার জন্য প্রথমে যা দিয়েছিলেন, তা জিডিপির ০.০৩ শতাংশ। এবার যা ঘোষণা করা হয়েছে, তা জিডিপির ০.০৫৪ শতাংশ। বাংলাদেশে আসলে সেভাবে কোন প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি আরও বলেন, এই মূহুর্তে জরুরী ভিত্তিতে দেশের মানুষের নিষ্পত্তিযোগ্য আয় বাড়ানো, ভোগব্যয় বাড়ানো, তাদের দারিদ্র্য প্রবণতা আটকানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর এর আর্থিক সামর্থ্য সরকারের আছে। এ লক্ষ্যে জিডিপির অন্তত আধা শতাংশ বরাদ্দ রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, শিল্প খাতে কর্ম রক্ষায় সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছে তার বড় একটা অংশ গেছে আরএমজি খাতে। ছোট ও মাঝারী শিল্প প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ চাহিদা নির্ভর শিল্পগুলোতেও প্রণোদনার ব্যবস্থা রাখার পক্ষে মত দেন তিনি।
কর্মসংস্থানের পুনরুদ্ধার সুষম নয়
কর্মসংস্থানের পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় পেশাভিত্তিক একটা বিভাজন বিদ্যমান রয়েছে বলে মন্তব্য করেন হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, কম বেশি কিছু মানুষ তাদের পেশায় ফিরে এসেছেন। আর কিছু পেশায় আর্থিক পুনরুদ্ধার হয়নি।
তিনি আরও বলেন, 'এক বছরের মাথায় সামগ্রিক গড় আয় কোভিড-পূর্ববর্তী সময়ের চাইতে ৭ শতাংশ কম। শুধু নগর এলাকায় দরিদ্রদের মধ্যে এটা ১৪ শতাংশ কম'।
তিনি আরও বলেন, পুনরুদ্ধারের একটা নির্দিষ্ট রূপ দেখা যাচ্ছে। ব্যাষ্টিক পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে, এক বছরে একটা বৃহৎ অংশের প্রায় আট শতাংশ এখনও বেকার, যারা কোভিডের আগে কাজে নিয়োজিত ছিল।
কিন্ত মার্চ থেকে জুনের মধ্যে চাকুরী হারানো লোকজনের ৪১ শতাংশ পেশা পরিবর্তন করেছে। এই পেশা পরিবর্তনে্র ফলে লোকজন এক ধরনের অদক্ষ এবং ক্ষেত্রবিশেষে নিম্ন দক্ষতা সম্পন্ন শ্রমিককে কাজে নিতে বাধ্য হচ্ছে।
বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্নে দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হলেও কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের দক্ষতা কমে আসায় এক দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে বলেও তিনি জানান।
অনিশ্চিত পুনরুদ্ধারের উপায়
অর্থনীতির কিছু সূচকে ভালো অবস্থার মধ্যেও সার্বিক অর্থনীতির বিষয়টি এখনও অনিশ্চিতই রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, 'আমি প্রথমে ভেবেছিলাম, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা পুনরুদ্ধার করতে পারব। একেবারে প্রথম দিকের কথা বলছি'।
'এক সময় মনে হয়েছিল জুন-জুলাইয়ে পুনরুদ্ধার সম্ভব যখন রিবাউন্ডিংটা ভালো হচ্ছিল। পরবর্তীতে ইউরোপ- আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ছড়িয়ে গেলে আমার প্রত্যাশা কমে গেছে। মনে হয়েছে, সেপ্টেম্বর- অক্টোবরে অর্থনীতি আগের অবস্থায় ফিরবে '।
'এখন আমরা দ্বিতীয় ধাক্কায় পড়ে গেলাম। এখন মনে হচ্ছে আগামী বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে পুনরুদ্ধার সম্ভব, যদি আবার তৃতীয় ঢেউ না আসে। এবং সেটিও সম্ভব যদি কেবল আমরা এ সংক্রমণকে রোধ করে রাখতে পারি, বা একটা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পারি'।
এক্ষেত্রে আগামীতে করোনার বড় ধরনের বিস্তারকে ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন তিনি। আর এ ঝুঁকি মোকাবিলায় করোনার টিকা নিশ্চিত করা বিশেষ করে দেশেই টিকা উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বাস্তবায়নই বড় সমস্যা
বড় বাজেট দেয়া হলেও তা বাস্তবায়নে আন্তরিকতা ও দক্ষতার অভাবকে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
এ বিষয়ে হোসেন জিল্লুর বলেন, প্রতিবছর বড় বাজেট দেয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয় না। এ কারণে বাজেটের পরিমাণ নিয়ে আলোচনা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, বাজেট বাস্তবায়নে সক্ষমতার ঘাটতি আগেও ছিল। কোভিডের কারণে আরও বেড়েছে। স্বাস্থ্য খাতে গবেষণায় ১০০ কোটি টাকার বরাদ্দের মধ্যে একটি টাকাও ব্যয় হয়নি।
তিনি বলেন, 'ব্যয় দক্ষতার বিষয়টিকে বাজেটেই একটি বড় সমস্যা হিসেবে ধরতে হবে। বাস্তবায়নের বিষয়টি একটি কৌশলগত চ্যালেঞ্জ'।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, 'বেশি টাকার চাহিদা থাকলেও ব্যয়ের সামর্থ না থাকায় বাজেট ঘাটতি বাড়ছে না। অতীতে সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে বাজেট ঘাটতি বেড়ে যেত। আর এখন বাজেট ঘাটতি নির্ভর করে বাজেট বাস্তবায়নের ওপর'।
তিনি বলেন, 'চলতি অর্থবছরে বাজেট ব্যয় গত বছরের চাইতে কম। যেটুকু বেড়েছে, তা নন-এডিপি খাতে। এই সময়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা ব্যয়ের অক্ষমতা'।
দরকার রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত
বাজেটের বাস্তবায়ন বাড়ানো আর এর মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করতে সরকারের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সাহসী সিদ্ধান্ত প্রধান ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, 'কালো টাকা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। এটা অর্থনৈতিকভাবে যৌক্তিক না, সামাজিকভাবে ফলপ্রসূ না, রাজনৈতিকভাবে গর্হিত, সামাজিকভাবে পরিত্যাজ্য। এটা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। তবে এটা রাজনৈতিক-অর্থনীতিতে আছে'।
তিনি আরও বলেন, 'অনেক সময় জনগণকে মানুষ হিসেবে দেখা হয় না, নাগরিক হিসাবে দেখা হয় না। তার অধিকার দেখা হয় না। ক্ষমতাবানরা সবাইকে প্রজা হিসাবে দেখেন'।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের কাঠামো দুর্বল হলে শক্তিশালী লোকজন জবাবদিহিতার বাইরে থাকে।
'লুটপাটের মাধ্যমে দুর্বল করে দেয়া ব্যাংককে ১৫-৩০ হাজার কোটি টাকা দেয়া হয় জনগণের কর থেকে। কালো টাকা সাদা করে কর মওকুফ হলেও কোন প্রশ্ন আসে না। অথচ মানুষকে ১০ টাকার জায়গায় ১৫ টাকা দিতে হলে অনেক আলোচনা করতে হয়'।
সাহসী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে দরিদ্র মানুষের পাশে দাড়াতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।