মাল্টি ফাংশনাল হাতঘড়ির বাজার বাড়ছে
সময় দেখার জন্য মোবাইলসহ নানান ধরনের ডিভাইস হাতের নাগালে থাকার পরও দেশে হাতঘড়ির চাহিদা কমছে না। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বছরে ১০ শতাংশেরও বেশি হারে বাড়ছে ঘড়ির বাজার। ঘড়ির মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে নানা সুবিধা যুক্ত মাল্টি ফাংশনাল হাতঘড়ি।
দেশের শীর্ষ ঘড়ি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তরুণরাই প্রধানত মাল্টি ফাংশনাল ঘড়ি বেশি কিনে থাকেন। ঘড়ি এখনও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ফ্যাশনের অন্যতম অনুষঙ্গ। এ কারণে সময় দেখার জন্য ঘড়ির বিকল্প বেশ কিছু ডিভাইস মানুষের হাতে হাতে ঘুরলেও ঘড়ির চাহিদা কমছে না।
মাল্টি ফাংশনাল ঘড়ির ব্রান্ডের ভেতরে ক্রেতাদের মধ্যে টিসট্, ক্রিডেন্টস, মনট্রেক্স, ক্যাসিও, ও সিকো ঘড়ির চাহিদা বেশি বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা।
দেশে ঘড়ির বার্ষিক বাজার ১৮০-২০০ কোটি টাকার মতো উল্লেখ করে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ঘড়ির বাজার পুরোটাই আমদানি নির্ভর। দেশে ঘড়ি তৈরির নামী কোনো প্রতিষ্ঠান নেই।
ব্যক্তির বাইরে দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ঘড়ির বড়ো ক্রেতা। এরা মূলত উপহার দেয়ার জন্য ঘড়ি কিনে থাকেন। বিয়ে, সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে ঘড়ি উপহার দেয়ার প্রবণতা এখনো আগের মতোই আছে।
দেশে ঘড়ি আমদানিকারকদের মধ্যে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান কল্লোল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি গত ২৪ বছর ধরে ঘড়ির ব্যবসা করছে। দেশে বিশ্বখ্যাত ৩০টির মতো ব্র্যান্ডের ঘড়ি বিক্রি করে কল্লোল।
প্রতিষ্ঠানটির ঘড়ি বিভাগের ম্যানেজার মাসুদ আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমরা বিভিন্ন ব্যান্ডের ঘড়ি বিক্রি করি। তবে কেউ যদি আলাদা করে কোনো বিশেষ ঘড়ি, বিশেষভাবে অনেক দামি ঘড়ির অর্ডার করেন, সেটাও আমরা এনে দেই।'
এক্সক্লুসিভ ও এমন দামি ঘড়ির ক্রেতা খুব একটা কম নয় বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা।
১৫ লাখ টাকার ঘড়িও অনেক বিক্রি হয়
কল্লোল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড যেসব ঘড়ি বিক্রয় করে থাকে তার মধ্যে সবচেয়ে দামি হলো-লংজিনস ব্রান্ডের ঘড়ি। এর দাম শুরু ৮১ হাজারে, শেষ ১৫ লাখে গিয়ে। এরপরের তালিকায় রয়েছে র্যাডো। এটার দাম ৬৫ হাজার থেকে শুরু, শেষ ৯ লাখে।
মাল্টি ফাংশনাল ঘড়ির দাম তিন হাজার দিয়ে শুরু। সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকায়ও এমন ঘড়ি বিক্রি হয়।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, কর্পোরেট কাস্টমারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষভাবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ফার্মাসিটিক্যালস কোম্পানিগুলো একসঙ্গে অনেক ঘড়ি কেনে। এগুলো তারা বার্ষিক সাধারণ সভা এবং প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিফট হিসেবে দেয়।
মোহাম্মদ অ্যান্ড সন্স গত দুই বছর ধরে উচ্চমূল্যের ঘড়ি আমদানি ও বিক্রির কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার সাফায়েত চৌধুরী টিবিএসকে জানান, তারা দশটি ব্যান্ডের ঘড়ি আমদানি ও বাজারজাতকরণের কাজ করে থাকেন। তাদের ঘড়ির দাম শুরু ৩৫ হাজারে শেষ ১০ লাখে। চাকরিজীবী ও করপোরেট ক্লায়েন্টরাই মূলত তাদের কাছে ঘড়ি কিনতে আসেন।
বাংলাদেশে ঘড়ি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টমি হিলফিগার, ওবাকু, ইস্প্রিট, ওমেগা, গুচি, এমিকা, ফসিল, ডিজেল, সুইস্টার, লোবর, ভিকটোরি নক্স, বারবারি, রয়েল ক্রাউন, রোলেক্স- এগুলো বাংলাদেশে জনপ্রিয় ঘড়ির ব্র্যান্ড।
তৈরি হচ্ছে স্মার্টওয়াচের বাজারও
দেশে তরুণ প্রজন্মের কাছে স্মার্টওয়াচ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মৌসুমভেদে এই ঘড়ির প্রতি ক্রেতাদের বেশ ঝোঁক দেখা যায়।
স্মার্ট ওয়াচে অ্যাপ চালানো, হৃৎস্পন্দন মাপা, জিপিএসের মাধ্যমে হাঁটা মাপা, ম্যাপের মাধ্যমে নেভিগেশন, নোটিফিকেশন দেখা, ফোন কল করা ও ধরা, মেসেজের উত্তর দেওয়া, সময়, দিন, তারিখ দেখা যায়।
বাংলাদেশে স্মার্টওয়াচের বাজার মূলত অ্যাপলের দখলে। 'অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৩'–এর পাশাপাশি বাজারে অ্যাপল ওয়াচ–৪ এর চাহিদাও বেশ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, অপারেটিং সিস্টেম অনেকটা সহজ হওয়ার কারণে তরুণ-চাকুরিজীবদের পছন্দের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে এই ঘড়ি। বছরে ৮ থেকে ১০ লাখ এই ঘড়ি বিক্রি হয়ে থাকে। অ্যাপল ওয়াচের নির্দিষ্ট শ্রেণির একটা ক্রেতাগোষ্ঠী আছে। চীন ও অন্যান্য দেশের বিভিন্ন ব্যান্ডের স্মার্টওয়াচও দেশে পাওয়া যায়।