শিল্পনীতি ২০২১: যুগোপযোগী করার পরামর্শ অংশীজনদের
সম্ভাবনাময় খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে ব্যবসাবান্ধব আধুনিক ও যুগোপযোগী শিল্পনীতি প্রণয়নের বিষয় মত দিয়েছেন শিল্পখাতের অংশীজনেরা (স্টকহোল্ডার)।
তারা বলেছেন, শিল্পখাতের ক্রমবর্ধমান উন্নতি ও উৎপাদনশীলতা অর্জনে উপযুক্ত প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি ও দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির মাধ্যমে অধিকতর জনগোষ্ঠীকে এ খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে।
রোববার শিল্প মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এবং প্রিজম প্রোগ্রামের টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স কম্পোনেন্টের সহযোগিতায় নতুন জাতীয় শিল্পনীতি-২০২১ প্রণয়নের লক্ষ্যে অংশীজন পরামর্শক কর্মশালায় এ মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ওই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন অংশীজনেরা।
পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন, প্রবৃদ্ধি নির্ভর পরিকল্পনা, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করার বিষয়টি শিল্পনীতিতে গুরুত্ব দেওয়ার সুপারিশ এসেছে আলোচনায়।
প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, 'যেসব পণ্য রিসাইক্লিং করা যায়, সে পণ্য উৎপাদনে সরকারের নীতি সহায়তা থাকে- সেটা শিল্পনীতিতে উল্লেখ থাকতে হবে। প্লাস্টিক পণ্যে রিসাইক্লিং সম্ভাবনা অনেক। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যুযোপযোগী শিল্পনীতি করতে হবে আমাদের।'
অটোমোবাইলস খাতকে সম্ভাবনাময় খাত উল্লেখ করে রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান বলেন, 'শিল্পনীতিতে এ খাতসহ অন্য সব সম্ভাবনাময় খাতকে গুরুত্ব দিতে হবে। যুগোপযোগী ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করে নীতি প্রণয়ন করতে হবে।'
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সেক্রেটারি জয়নাল আবেদিন বলেন, 'দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানে যেন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশ আসে রেডিমেড গার্মেন্টস সেক্টর থেকে। তাই রপ্তানি পণ্যের তালিকায় যেন নতুন করে আরও বেশি পণ্য যোগ হয়, শিল্পনীতিতে সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।'
অন্যদিকে, বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদাউস-আরা-বেগম বলেন, 'প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১-সহ বাংলাদেশের এলডিসি গ্রাজুয়েশনের বিষয় মাথায় রেখে শিল্পনীতি করা প্রয়োজন।'
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, 'শিল্পোন্নত দেশ গড়তে শিল্পখাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির কোনো বিকল্প নেই। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সফলতাকে অর্জন করতে কর্মদক্ষতা উন্নয়নের ওপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করতে হবে।'
শিল্পমন্ত্রী বলেন, 'টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি অপরিহার্য পূর্বশর্ত হচ্ছে, পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন। সে লক্ষ্যে সরকার পরিবেশবান্ধব শিল্প কারখানা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সফলতা অর্জনে সরকারি ও বেসরকারি সমন্বিত প্রচেষ্টায় শিল্পায়নের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও দক্ষতা বৃদ্ধি করাই এ নতুন জাতীয় শিল্পনীতি ২০২১ প্রণয়নের মূল উদ্দেশ্য। তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সর্বোচ্চ সুফল অর্জন এবং দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্রতা ও বেকারত্ব হ্রাস করাই এ নীতিমালার লক্ষ্য।'
শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, 'নতুন জাতীয় শিল্পনীতি-২০২১ প্রণয়নে শ্রমিকদের স্বার্থ ও উদ্যোক্তা উন্নয়নের সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করা হবে। আমাদের দেশে শিল্পখাতে দক্ষ শ্রমিকের অভাব রয়েছে। নতুন শিল্পনীতিতে দক্ষ শ্রমিক তৈরিতে প্রশিক্ষণের বিষয়টি গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।'
বলে রাখা ভালো, ১৯৭৩ সালে প্রথম শিল্প ও বিনিয়োগ নীতি হয়। এরপর ১৯৭৫ সালে সেটি সংশোধিত হয়। ১৯৮২ সাল থেকে 'শিল্পনীতি' নামকরণ করে শিল্পনীতি প্রণয়ন করা হয়। এরপর সংশোধিতসহ ৭ বার শিল্পনীতি তৈরি করা হয়। বর্তমানে ২০১৬ সালের নীতি বহাল রয়েছে।