সরকারি ব্যাংকগুলো ঝুঁকি মোকাবেলায় সক্ষম নয়: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন
সরকারি ব্যাংকগুলো যে কোন ধরনের আর্থিক দুর্যোগ সামাল দিতে সক্ষম নয়।আন্তর্জাতিক মানদন্ড বা ব্যাসেল-থ্রি অনুযায়ী যে পর্যাপ্ত মূলধন থাকা দরকার, ব্যাংকগুলোর তা নেই। গেল বছর ঋণ শ্রেণীকরণ বন্ধ থাকায় প্রভিশনের জন্য বাড়তি খরচের চাপ না থাকার সুবিধাও কাজে লাগতে পারেনি ব্যাংকগুলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে পাওয়া 'ক্যাপিটাল এডেকোয়েসী অব ব্যাংকস আন্ডার ব্যাসেল-থ্রি' প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এই প্রতিবেদনে ২০২০ সাল শেষে ব্যাংকগুলোর মূলধন পর্যাপ্ততা অনুপাত বা সিএআর পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে।
আমানতকারীদের সুরক্ষা, ব্যাংকের স্থিতিশীলতা ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার দক্ষতা পরিমাপের মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা হয় মূলধন পর্যাপ্ততা অনুপাত (সিএআর)। যে ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততা অনুপাত বা সিএআর যত বেশি, অর্থনৈতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সে ব্যাংকের সক্ষমতা ততটাই শক্তিশালী।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, সরকারি, বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ৯টি ব্যাংকের মধ্যে ৭টি ব্যাংকের ঝুঁকি মোকাবেলায় ব্যাসেল-থ্রি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় মূলধন পর্যাপ্ততা নেই। বরং বড় ধরনের ঘাটতিতে আছে। ব্যাসেল থ্রি অনুযায়ী এই অনুপাত ১০.৫%।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এর সাবেক সভাপতি নুরুল আমিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেশি হওয়ায় এসব ঋণের বিপরীতে যে প্রভিশনিং রাখতে হয় তাতে অনেক টাকা চলে যায়।
অন্যদিকে যেহেতু এগুলো সরকারের প্রতিষ্ঠান তাই যে কোন ধরনের দুর্যোগে সরকারকে পাশে পাওয়া যাবে এমন মনোভাবও কাজ করে। এছাড়া মূলধন ঘাটতিতে পড়লে সরকার এসব ব্যাংককে মূলধন যোগান দেয়। সব মিলিয়ে ব্যাংকগুলো মূলধন পর্যাপ্ততা নিয়ে অতটা চিন্তিত থাকে না।
গেল ডিসেম্বর শেষে সরকারি বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৪২ হাজার ও ৪ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের যথাক্রমে ২১ ও ১৩ শতাংশ। যদিও গেল বছর শেষে সার্বিক ব্যাংক খাতে খেলাপির হার ছিল ৭.৬৬ শতাংশ।
সরকারি ব্যাংকগুলোর তুলনায় বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঝুঁকি মোকাবেলায় অনেক সক্ষম। আন্তর্জাতিক মানদন্ডে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে মাত্র তিনটি ব্যাংকের যথাযথ মূলধন পর্যাপ্ততায় ঘাটতি আছে। ব্যাংক তিনটি হলো বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক এবং পদ্মা ব্যাংক।
এদিকে মূলধন পর্যাপ্ততায় সবচেয়ে উপরের দিকে আছে বিদেশি দুটি ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও এইচএসবিসি ব্যাংক। এরপরই আছে দেশীয় মালিকানাধীন ইসলামী ব্যাংক।
২০১৯ সাল শেষে সার্বিকভাবে ব্যাংকখাতে সিএরআর বা মূলধন পর্যাপ্ততা অনুপাত ছিল ১১.৬ শতাংশ। ২০২০ সাল শেষে এটি অপরিবর্তিত আছে। অর্থাৎ গেল এক বছরে সার্বিকভাবে ব্যাংকখাতের মূলধন পর্যাপ্ততা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
এ প্রসঙ্গে নুরুল আমিন বলেন, যেহেতু গেল বছর জুড়েই ঋণ শ্রেণীকরণ বন্ধ ছিল, তাই প্রভিশনিং এর পিছনে বাড়তি খরচ হয়নি। আবার যারা ঋণের কিস্তি শোধ করতে পেরেছিল তাদেরটা নেয়া হয়েছে। এতে পরিস্থিতি আগের মতই ছিল। তবে আসছে মার্চ প্রান্তিক শেষে প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠবে বলে তিনি মনে করেন।