সাইবেরিয়ার দুর্গম অঞ্চলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বর্ণ মজুদের সন্ধান
রাশিয়ার সবচেয়ে বড় স্বর্ণ উত্তোলক ও পরিশোধনকারী কোম্পানি পলিউস পিজেএসসি। সাম্প্রতিক এক ঘোষণায় কোম্পানিটি জানায়, সাইবেরিয়া অঞ্চলে তাদের মালিকানাধীন 'সুখই লগ ডিপোজিট' ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বর্ণ মজুদের সন্ধান মিলেছে।
খনিজ সম্পদ পরিমাপে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড জেওআরসি স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে পরিচালিত এক জরিপের মাধ্যমে একথা জানানো হয়। অত্যাধুনিক সেন্সর এবং অন্যান্য পদ্ধতির সাহায্যে করা সমীক্ষায় ক্ষেত্রটিতে ৪ কোটি আউন্স স্বর্ণ মজুদ পাওয়া গেছে, বলে জানান কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পাভেল গ্র্যাচেভ।
প্রতি টন আকরিকে সেখানে ২.৩ গ্রাম স্বর্ণ আছে। রাশিয়ায় এপর্যন্ত সন্ধান পাওয়া স্বর্ণের এক-চতুর্থাংশ মজুদ আছে সুখই লগ ফিল্ডে। অর্থাৎ, বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় খনি প্রকল্প; কানাডায় সিব্রিজ গোল্ড ইঙ্কের কেএসএম প্রজেক্ট এবং এবং আলাস্কা'র ডনলিন গোল্ড- এর চাইতেও বেশি স্বর্ণ পাওয়া যাবে এখানে।
মস্কোতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গ্র্যাচেভ বলেন, 'ক্ষেত্রটিতে খনি প্রকল্প পরিচালনার আগে প্রাথমিক মজুদের অনুমান একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।'
সাইবেরিয়ার ইর্কুটস্ক অঞ্চলের প্রত্যন্ত এক এলাকায় অবস্থিত সুখই লগ ক্ষেত্র। ১৯৬১ সালে সর্বপ্রথম এটির সন্ধান পান সোভিয়েত ভূতত্ত্ববিদেরা। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তারা মজুদ নির্ণয়ে গবেষণা করেছেন। খবর ব্লুমবার্গের।
সোভিয়েত আমলের অবসানের দীর্ঘদিন পরও যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে রাশিয়ার সরকার এখানে খনি প্রকল্প শুরু করতে পারেনি। কিন্তু, উত্তোলন শুরু করার বিষয়টি নিয়ে অনেকদিন থেকেই ভাবা হচ্ছিল। এ অবস্থায় ২০১৭ সালে পলিউস এবং রাষ্ট্রায়ত্ত একটি খনিজ সংস্থার কাছে ক্ষেত্রটি নিলামে বিক্রি করা হয়। পরে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার অংশীদারিত্বের মালিকানাও কিনে নেয় পলিউস।
চলতি বছরের শুরুতে পলিউস জানায়, তারা দেনার হার কমিয়ে ছোট ছোট খনি প্রকল্পের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। সুখই লগ ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য যথেষ্ট পুঁজি সংগ্রহ করতেই এমন প্রস্তুতি। তবে চলতি বছরের শেষে একটি প্রাক-সম্ভাবনা গবেষণার পর কোম্পানিটি সেখানে তাদের মোট বিনিয়োগ এবং উত্তোলন পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করবে।
প্রাথমিকভাবে, কোম্পানিটি আড়াইশ' কোটি ডলার বিনিয়োগের কথা জানায়, যার মাধ্যমে বার্ষিক ১৬ লাখ আউন্স স্বর্ণ উৎপাদন (উত্তোলন ও পরিশোধনের পর) করা যাবে।
সুখই লগের মতো বিশাল মজুদ ক্ষেত্রে খনি তৈরি বেশ ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘমেয়াদি কাজ। উৎপাদন সক্ষমতায় নিয়ে যেতে পারলে পলিউসের মোট স্বর্ণ উত্তোলনের পরিমাণ ৭০% বাড়বে। তাছাড়া, ক্ষেত্রটির মালিকানা কিনে নেওয়ার পর থেকে বিশ্ববাজারে দুষ্প্রাপ্য ধাতুটির দর ৬০% বেড়েছে।
গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র-সহ নানা দেশের সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক করোনা অতিমারির আঘাত থেকে অর্থনীতির সুরক্ষায় বেশ কিছু বড় অংকের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা দেয়। এরফলে, ওই মাসে স্বর্ণের দর সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছে যায়।
গ্র্যাচেভ জানান, পরিবেশগত নেতিবাচক প্রভাব যথা-সম্ভব কমিয়ে, দুর্গম অঞ্চলে সফলভাবে এত বড় আকারের খনি যে পরিচালনা করা সম্ভব- সেটা আমরা প্রমাণ করতে চাই। এজন্যই, ধীরে-সুস্থে চলার কৌশল নেওয়া হয়েছে।''