সিরামিক - বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় শিল্প
বাংলাদেশে উচ্চবিত্তের খাবার টেবিলে টেবিল ওয়্যার হিসেবে সৌখিনতার জন্য সিরামিকস পণ্যের ব্যবহার শুরু করে এ দেশের মানুষ। বিশ শতকের শেষ দিকেও আমদানি এবং দেশের অল্প কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ সৌখিন পণ্যের যোগান দিতো। তবে গত ১০ বছরে দেশে সিরামিক পণ্যের বাজারে এসেছে বড় পরিবর্তন।
সৌখিনতা ছাড়িয়ে সিরামিকস এখন জীবনের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য। বাংলাদেশে মূলত এখন তিন ধরনের সিরামিক পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। টেবিলওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারি ওয়্যার। সিরামিক দিয়ে তৈরি হচ্ছে টাইলস, স্যানিটারিওয়্যার (বেসিন, কমোড), ফুলের টব, মটকা, কিচেন ওয়্যার, টেবিলওয়্যার, ডিনার সেট, টি সেট, কফি মগ, বাটি থেকে শুরু করে গৃহস্থালির বিভিন্ন জিনিসপত্র। এখন একটি বৃহৎ শিল্পে রূপ নিয়েছে বাংলাদেশের সিরামিক খাত। দেশে গড়ে উঠেছে ৬৬টি ব্র্যান্ড। প্রতিবছর প্রায় ৬০০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হচ্ছে স্থানীয় বাজারে। গত বছর রপ্তানিও হয়েছে ৫৮৫ কোটি টাকা।
বাংলাদেশে সিরামিকস পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ) বলছে, ১৯৬০ এর দশকে পোর্সেলিন আর সিরামিকের বাসনপত্র উৎপাদনকারী তাজমা সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ এর মাধ্যমে এ দেশে ব্যবসা শুরু হয়। আর এখন বৃহৎ শিল্পগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে সিরামিক খাত।
সংগঠনটির তথ্যমতে, বর্তমানে ৬৬টি ব্র্যান্ড ছাড়াও ছোট-মাঝারি শতাধিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সিরামিকস খাতে। সরাসরি ৫৫,০০০ কর্মীর পাশাপাশি সংযুক্ত শিল্প মিলিয়ে প্রায় ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এ খাতে। বছরে প্রায় ২৫ কোটি পিস টেবিল ওয়্যার, ১৫ কোটি স্কয়ার ফিট টাইলস এবং ৫০ লাখ পিস স্যানিটারি ওয়্যার উৎপাদন করছে স্থানীয় কোম্পানিগুলো। তবে টেবিলওয়্যার এর বড় অংশই রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে।
বিসিএমইএ এর সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ডকে বলেন, “আশির দশকে ৯০ শতাংশ সিরামিক পণ্যই আমদানি করা হতো। এখন চাহিদার প্রায় ৮৫ শতাংশেরই যোগান দিচ্ছে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। এখন বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রাও আসছে এ খাত থেকে। আগামী পাঁচ বছর পর রপ্তানিতে তৈরী পোশাক ও চামড়া শিল্পের পরই সিরামিকসের অবস্থান হবে।”
বাংলাদেশে সিরামিকসের বাজার
বাংলাদেশে সিরামিকস শিল্প নিয়ে সম্প্রতি একটি গবেষণা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা ইউএসএআইডি। সংস্থাটির তথ্য মতে, এ দেশে সবচেয়ে উদীয়মান খাত সিরামিকস।
গত ৫ বছরে ২০০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির তথ্য দিয়ে সংস্থাটি বলছে, ২০১৮ সালের শেষে বাংলাদেশে সিরামিক শিল্পের বাজার আকৃতি দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে টাইলসের বাজার। সিরামিকের বাসনপত্রের বাজার ৫০০ কোটি টাকা ও স্যানিটারি পণ্যের বাজার ৯২০ কোটি টাকা বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
গত পাঁচ বছরে সিরামিক বাজারের ২০০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি টাইলস শিল্পকে কেন্দ্র করে হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সিরামিক প্রস্তুতকারক এবং রপ্তানিকারক সংগঠন বিসিএমইএ। সংগঠনটির তথ্য মতে, সামগ্রিকভাবে সিরামিকসের পণ্যের প্রবৃদ্ধি ২০-২২ শতাংশ। তবে শুধু টাইলসের ক্ষেত্রে এই প্রবৃদ্ধি ৩০-৩৫ শতাংশ।
মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ডকে বলেন, “গত ১০ বছরে দেশে কোনো টেবিল ওয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। এ সময়ের মধ্যে নতুন করে টাইলস উৎপাদনে এসেছে অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠান। আরো ১২টি প্রতিষ্ঠান বাজারে আসার অপেক্ষায় রয়েছে।”
তবে দেশের বাজারেও ভালো চাহিদা রয়েছে দাবি করে কারখানা সম্প্রসারণের কথা জানিয়েছে টেবিল ওয়্যার খাতের বৃহৎ দুই প্রতিষ্ঠান মুন্নু ও ফার সিরামিকস।
ফার সিরামিকস লিমিটেড এর পরিচালক ইরফান উদ্দিন রিফাত বলেন, “দেশের বাজারের পাশাপাশি রপ্তানি বাণিজ্যে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে আমাদের টেবিল ওয়্যারের। ব্যবসা সম্প্রসারণের পর দুই বছরের মধ্যে আমরা রপ্তানিতে শতভাগ প্রবৃদ্ধি পেয়েছি।”
দেশের সিরামিকস শিল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছে কারা
বিসিএমইএ এর তথ্য মতে, টেবিল ওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারি ওয়্যার মিলিয়ে এখন দেশের বাজারে সবার শীর্ষে আছে গ্রেটওয়াল সিরামিকস। প্রতিষ্ঠানটি বছরে প্রায় দেড় কোটি স্কয়ার ফিট টাইলস ও ১০ লাখ পিস চারু ব্র্যান্ডের স্যানিটারি ওয়্যার উৎপাদন করছে। সম্প্রতি থাইল্যান্ডের বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড কোটোর কারখানা স্থাপন করেছে গ্রেটওয়্যাল। টেবিল ওয়্যার উৎপাদনেরও পরিকল্পনা করছে তারা।
গ্রেটওয়্যাল সিরামিকসের মহা ব্যবস্থাপক ফরিদ আহমেদ কিসলু দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ডকে বলেন, “গুণগত মান ও সব ধরনের সিরামিকস পণ্য উৎপাদনের কারণেই আমরা ধীরে ধীরে বাজার দখল করে অন্যদের ছাড়িয়ে গেছি। কোটো ব্র্যান্ডের পণ্য রপ্তানি শুরু হলে বিশ্ব বাজারেও শক্ত অবস্থান করে নিতে পারবে গ্রেটওয়্যাল।”
পণ্যভেদে বাজার অংশীদারিত্বের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বিচার করলে টেবিলওয়্যারে শীর্ষ অবস্থানে আছে বেক্সিমকো গ্রুপের শাইনপুকুর সিরামিকস। ২০১৮ সালে কোম্পানিটির টার্নওভার ১৫২ কোটি টাকা। ৫০০ কোটি টাকার মোট বাজারে এর অংশীদারিত্ব প্রায় ৩০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মুন্নু সিরামিকস। গত বছর মুন্নু সিরামিকসের বিক্রি ছিল ১৪০ কোটি টাকা। এছাড়া ফার সিরামিকস, স্টার সিরামিকসসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য বাজার অংশীদারিত্ব রয়েছে।
টাইলসের ক্ষেত্রে গ্রেটওয়্যালের পরই রয়েছে এক্স মনিকা, বছরে ১ কোটি ২০ লাখ স্কয়ার ফিট টাইলস উৎপাদন করে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর আকিজ সিরামিকসের উৎপাদন বছরে ১ কোটি ১০ লাখ স্কয়ারফিট। আরএকে সিরামিকসের ৮০ লাখ স্কয়ারফিট, স্টার সিরামিকসের ৮৫ লাখ স্কয়ারফিট, চায়না বাংলা সিরামিকসের ৭৫ লাখ স্কয়ার ফিট, ডিবিএল সিরামিকসের ৬৫ লাখ স্কয়ার ফিট।
স্যানিটারি ওয়্যারের বাজারে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান আবুল খায়েল গ্রুপ। গ্রুপটির স্টেলা ব্র্যান্ড দেশের বাজারে শীর্ষ স্যানিটারি ওয়্যার বিক্রেতা। বছরে প্রায় ২০ লাখ পিস স্যানিটারি ওয়্যার উৎপাদন করছে তারা। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আরএকে সিরামিকস। তাদের উৎপাদন সক্ষমতা ১৫ লাখ পিস।
৫০টিরও বেশি দেশে বাংলাদেশি সিরামিক
এক দশক আগেও নামমাত্র রপ্তানি ছিল সিরামিকস পণ্যের। তবে ২০১৬ সাল থেকে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। গত তিন বছরে এ পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ২০০ শতাংশ। বর্তমানে ৫০টিরও বেশি দেশে যাচ্ছে বাংলাদেশের সিরামিকস পণ্য।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য মতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫৮৫ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান। রপ্তানি পণ্য হিসেবে এককভাবে সিরামিকস এখন সপ্তম। গত তিন বছরে প্রায় ২৬ শতাংশ করে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি রয়েছে এ খাতে। যদিও টেবিলওয়্যারই এখন পর্যন্ত মূল রপ্তানিকৃত সিরামিকস পণ্য।
বিসিএমইএর সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, “সিরামিকের প্রধান বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) চীনা সিরামিকের একচেটিয়া দখল ঠেকাতে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ২০১৭ সালে। বিপরীতে শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি ১০ শতাংশ পর্যন্ত ইনটেনসিভ বড় প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।”
টাইলস রপ্তানি শুরু হলে এটি শিগগিরই কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন তিনি।
যে কারণে বড় হচ্ছে সিরামিকস শিল্প
দেশে আবাসন শিল্পের বিকাশ সিরামিকসের বাজার বড় হওয়ার অন্যতম কারণ। বাসার মেঝে কিংবা বেসিন এখন সিরামিকস ছাড়া কল্পনাও করা যায় না। বিলাসবহুল পণ্য হওয়ায় মধ্যবিত্ত শ্রেনীর উদ্ভবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে টাইলস, টেবিল ওয়্যার ও স্যানিটারি ওয়্যারের চাহিদা।
রাজধানীর বাংলামোটরের তিলোত্তমা সিরামিকস সেন্টারে স্যানিটারি ওয়্যার কিনতে আসা ধানমন্ডীর এক গৃহিণী আফরোজা সুলতান বলেন,“নতুন বাড়ি করেছি। ছয়তলা ব্লিডিংয়ের সব ফ্লোরেই টাইলস দিতে হবে। বিভিন্ন দোকান ঘুরে সেরাটা নেয়ার চেষ্টা করছি।”
আফরোজা সুলতানার মতো প্রতিদিনই অনেকেই বাংলামোটর সোনারগাঁও রোড থেকে টাইলস ও স্যানিটারি ওয়্যার কিনছেন বলে জানান তিলোত্তমা সিরামিকস সেন্টারের হামিদুর রহমান।
তিনি বলেন, “গত পাঁচ বছরে সিরামিকস পণ্যের দাম প্রায় ১০-১৫ শতাংশ কমেছে। মানুষের নাগালের মধ্যে এসেছে এসব পণ্য। তাই বাড়ি নির্মাণে সবাই এখন টাইলস ও স্যানিটারি ওয়্যার ব্যবহার করছেন।”
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুসারে, ২০১৭ সাল শেষে দেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ মধ্যবিত্তে উপনীত হয়েছে। ২০১০ সালে যেখানে মোট জনসংখ্যায় মধ্যবিত্তের হার ছিল ১০ শতাংশ। বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের হিসাবে, প্রতি বছর ২০ লাখ মানুষ মধ্যবিত্তের কাতারে যোগ হচ্ছে। ফলে ২০২৫ সালে বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের সংখ্যা উঠে যাবে ৩ কোটি ৪০ লাখে।
অন্যদিকে ২০১৭ সাল শেষে দেশে শহুরে জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৮৭ লাখে । ২০৩০ সালের মধ্যে এ সংখ্যা ৮ কোটি ৫৯ লাখে উন্নীত হবে বলে ধারণা গবেষকদের।
মধ্যবিত্ত ও শহুরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণেই সিরামিকসের বাজার বড় হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নতুন সম্ভাবনা ও বিনিয়োগ
আবাসন খাতের বিস্তার ও বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা বাড়ায় বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে সিরামিকস খাতে। ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে গত ১০ বছরে এ খাতে ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন স্থানীয় উদ্যোক্তারা। গড়ে তুলেছেন প্রায় ৪০টির মতো কারখানা।
বিশ্বখ্যাত কোট্টো, গ্রোহি ও সিবিসি ব্র্যান্ডও কারখানা করেছে বাংলাদেশে। ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে আরএকে সিরামিকসও। তবে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে স্থানীয় শেলটেক গ্রুপ।
প্রাকৃতিক গ্যাস দিয়ে সিরামিকস উৎপাদন করতে ভোলায় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে শেলটেক। চলতি বছর বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসা শেলটেক সিরামিকসের দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ৪ লাখ মেট্রিক টন। এশিয়া অঞ্চলে এটি সবচেয়ে বড় কারখানা বলে দাবি করছে কোম্পানিটি।
শেলটেক গ্রুপের চেয়ারম্যান কুতুব উদ্দিন আহমেদ দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ডকে বলেন, “এখনো বছরে দেড় হাজার কোটি টাকার সিরামিকস পণ্য আমদানি হয়। শেলটেকের উৎপাদন পুরোপুরি শুরু হলে আমদানি অনেক কমে যাবে।”
“২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে পুরোপুরি উৎপাদন শুরু হলে এটি এশিয়ার অন্যতম বড় সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে পরিচিতি পাবে“- এমনটাই আশা কুতুব উদ্দিন আহমেদের।
শেলটেক ছাড়াও দুই বছর আগে উৎপাদনে এসেছে ডিবিএলসহ অন্তত ১০টি বড় ব্রান্ড। বর্তমানে উৎপাদনের অপেক্ষায় রয়েছে আরও ১২টি প্রতিষ্ঠান।
সিরামিক শিল্পের চ্যালেঞ্জ
গত প্রায় এক দশক ধরে প্রবৃদ্ধি সংকটে ভুগছে টেবিলওয়্যার পণ্য। মূলত চীন, ভিয়েতনাম ও ভারত থেকে তুলনামূলক কম দামী পণ্যের কাছে মার খাচ্ছেন দেশীয় উৎপাদনকারীরা। বিপরীতে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি, কাঁচামাল আমদানি ও কর সংক্রান্ত জটিলতার কারণে কিছুটা বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় উদ্যোক্তারা।
তাদের দাবি, বাংলাদেশে অপেক্ষাকৃত সস্তা শ্রমশক্তি থাকলেও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ও সরবরাহ ঘাটতি কিছুটা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সিরামিকস খাতের জন্য। ঘাটতি রয়েছে দক্ষ প্রকৌশলীরও। এছাড়া কাঁচামাল আমদানি ও ১৫ শতাংশ সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি পিছিয়ে দিচ্ছে তাদের।
টেবিল ওয়্যার খাতের বৃহৎ প্রতিষ্ঠান মুন্নু সিরামিকস এর ভাইস চেয়ারম্যান মইনুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ডকে বলেন, “গুণগত মানে কোনো দিক থেকেই পিছিয়ে নেই আমরা। আমেরিকা, ইউরোপসহ ৫০টির বেশি দেশে পণ্য রপ্তানি করছি। রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধিও ১৫-২০ শতাংশের মতো। তবে সস্তা চীনা পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে না পেরে দেশের বাজারে আমরা পিছিয়ে পড়ছি।”
স্থানীয় উদ্যোক্তাদের রাজস্ব সংক্রান্ত সুবিধা দিয়ে এ সংকট মোকাবিলা করা যায় বলে মনে করেন সিরাজুল ইসলাম মোল্লা।
তিনি বলেন, রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ ও স্থানীয় বাজার দখলে কাঁচামাল ও উপকরণের ওপর থেকে আমদানি শুল্ক কমানো যেতে পারে। বিদেশ থেকে তৈরি সিরামিক পণ্যের আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো ও দেশীয় টাইলস্ উৎপাদনে আরোপিত ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা উচিত। তাহলে স্থানীয় বাজারেও ভাল করবে দেশীয় কোম্পানিগুলো।