ঈদের আগে নগদ টাকার বাড়তি চাহিদায় কল মানি রেট ৫.৪৮%
গতকাল বুধবার কল মানি মার্কেটে আন্তঃব্যাংক লেনদেন হয়েছে ৮,৬৮৭ কোটি টাকা। তবে লেনদেনের পরিমাণ আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমলেও এ দিনে কল মানি রেট ছিল ৫.৪৮ টাকা। যা গত সাড়ে ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে থাকা ২০১৬ সাল পর্যন্ত তথ্য পর্যালোচনা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ব্যাংকগুলোর তারল্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বল্প সময়ের জন্য ধার করা আন্তঃব্যাংক লেনদেন (কল মানি রেট) রেকর্ড ৫.৪৮ শতাংশে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বুধবার কল মানি মার্কেটের রেট ছিল সাড়ে ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এর আগে সর্বোচ্চ কল মানি রেট, ৫.১৭ শতাংশ রেকর্ড করা হয় ২০২০ সালের ২০ জুন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি বছরের ১৩ জুন থেকে ২০ জুন পর্যন্ত এই রেট ৫.১ থেকে ৫.৩ এর মধ্যে ছিল।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্রমবর্ধমান তারল্য সংকট ছাড়াও রিপারচেস অ্যাগ্রিমেন্টের (রেপো) হার পরপর দু'বার বৃদ্ধি হওয়ায় কল মানি রেট বেড়েছে।
এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পলিসি রেট স্বল্প সময়ের মধ্যে ৫.৫০ শতাংশে উন্নীত করার কারণে আন্তঃব্যাংক লেনদেন কল মানি রেট বেড়েছে। এর আগে চলতি বছরের ২৯ মে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পলিসি রেট ৪.৭৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে উন্নীত করে।
দেখা যায়, গত ৩ জুলাই কল মানি মার্কেটে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। সেদিন মার্কেট রেট ছিল ৪.৫৪ শতাংশ। এর পর থেকে ক্রমান্বয়ে বাড়লেও মঙ্গলবার রেট ছিল ৪.৮৮ শতাংশ। এক দিনের ব্যবধানে এ রেট বেড়ে হয়েছে ৫.৪৮ শতাংশ। যা গত ছয় বছরের মধ্যে কখনো হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কোভিড সংক্রমণ কমে আসার পর দেশের আমদানি ব্যাপক পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসায়ীদের ডলারের চাহিদা বেশি ছিল। সেই অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে গিয়ে অধিক টাকা খরচ করতে হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলোতে তারল্যের পরিমাণ কমে এসেছে।
কম ডিপোজিট গ্রোথের মধ্যেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার ক্রয় অব্যাহত রাখায় নগদ অর্থের ঘাটতি এখন আরও বেড়েছে।
২০২১-২২ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটির বেশি টাকা বিনিময়ে ৭.৬২ বিলিয়ন ডলার ক্রয় করেছে ব্যাংকগুলো।
সাম্প্রতিক তথ্য থেকে দেখা গেছে, চলতি বছরের মে মাসে ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ ২,৩১৫ বিলিয়ন টাকা থেকে কমে ১,৮৯২ বিলিয়ন টাকা হয়েছে। মূলত, অতিরিক্ত রিজার্ভ ৬২৫ বিলিয়ন থেকে ২২০ বিলিয়ন টাকায় নেমে আসায় এটি হয়েছে।
সরকারি একটি ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা মানি মার্কেটে লিড লেন্ডার ছিলাম, গত কয়েকমাসে সরকারি ও ব্যবসায়ীদের অধিক পরিমাণ এলসি খুলতে গিয়ে নগদ তারল্যের সংকটে রয়েছি। গত মাসেও আমরা মার্কেটে টাকা দিলেও এই মাসের শুরু থেকে মার্কেট থেকে টাকা তুলতে হচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, "কেন্দ্রীয় ব্যাংক পলিসি রেট বাড়িয়েছে। এছাড়া কোরবানি ঈদের কারণে অনেক গ্রাহকের নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে গেছে। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ সংরক্ষণের জন্য অধিকাংশ পণ্যে শতাভাগ এলসি মার্জিন করে দিয়েছে। যার কারণে অনেক গ্রাহক এলসি মার্জিন রাখতে ব্যাংক থেকে আমানতের নগদ টাকা তুলছে।"
এদিকে, দেশের মুদ্রা ও ঋণ ব্যবস্থাপনা অধিকতর সুসংহত রাখার লক্ষ্যে মোটরকার (সেডানকার, এসইউভি, এমপিভি), ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স হোম অ্যাপ্লায়েন্স, স্বর্ণ ও স্বর্ণালঙ্কার, মূল্যবান ধাতু, মুক্তা, তৈরি পোশাক আমদানিতে এলসি-র শতভাগ নগদ মার্জিন সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সরকার ঘাটতি বাজেট মেটাতে ব্যাংকগুলো থেকে ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে থাকে। যার কারণে প্রাইমারি ডিলার ব্যাংকগুলো বার্ধতামূলক অংশগ্রহণ করতে হয়।
বিদায়ী অর্থবছরে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
বুধবার সোনালী ব্যাংক ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ব সবগুলো ব্যাংকের গড়ে ২ হাজার কোটি টাকা করে মানি মার্কেট থেকে ঋণ নিতে হয়েছে। তবে ঈদের পরে মর্কেট অনেকটা শিথিল হয়ে আসবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।