আরও দুই মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী না চলায় বেশ কয়েকটি মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া, সামনের দিনগুলোতে অনিয়ম পেলে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
অনিয়মের দায়ে অঙ্কন মানি চেঞ্জার ও ফয়েজ মানি চেঞ্জার নামে আরো দুইটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিসমিল্লাহ মানি চেঞ্জারের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে রাজধানীর মানি চেঞ্জারগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে অনেকগুলো অভিযান চালিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশ কয়েকটি টিম। গত রোববারও ২২টি মানি চেঞ্জার পরিদর্শন করা হয়। এদের বেশিরভাগের বিরুদ্ধেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গাইডলাইন না মানার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার কোনো অভিযানে যায়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
অভিযুক্ত ৩-৪টি মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হবে উল্লেখ করে এ কর্মকর্তা বলেন, 'পরিদর্শনে গিয়ে আমরা দেখেছি, মানি চেঞ্জারগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত লিমিটের বেশি ডলার রাখছে। এমনভাবে ডলার রাখলে বাজারে ডলারের সাপ্লাই কমে গিয়ে শর্টেজ তৈরি হয়। ফলে ডলারের দাম বেড়ে যায়। সংরক্ষণের লিমিট খুব বেশি অতিক্রম না করায় তাদেরকে তাৎক্ষণিক সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল। এখন অভিযুক্ত এসব মানি চেঞ্জারকে লিমিটের বেশি ডলার রাখার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে।'
দেশে অনুমোদিত মানিচেঞ্জার ৬০২টি, এর মধ্যে ২৩২টির বৈধতা আছে। বাকিগুলোর লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল রয়েছে। মানিচেঞ্জারের দৈনন্দিন কেনাবেচার তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে হয়। দিনশেষে একটি মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠান নিজেদের কাছে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ডলার রাখতে পারে। কোনো মানি চেঞ্জারের কাছে এরচেয়ে বেশি ডলার জমা হলে তা ব্যাংকের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে নিয়মিত মনিটরিং না হওয়ায় মানি চেঞ্জারগুলো এতোদিন এই নিয়মের খুব বেশি তোয়াক্কা করেনি।
গতকাল সোমবার কার্ব মার্কেটে ডলার বেচাকেনা হয়েছে ১০৮ টাকা রেটে। আগের দিন রোববারও একই দামে ডলার বিক্রি করেছিল মানি চেঞ্জারগুলো।
রাজধানীর পল্টন, মতিঝিল ও বায়তুল মোকররম এলাকার বেশ কয়েকটি মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ডলার কিনেছে ১০৭ টাকা করে।
এর আগে গত ২৬ জুলাই রেকর্ড ১১২ টাকায় পৌঁছেছিল ডলারের দাম। মনিটরিং এর কারণে পরদিন বুধবার দাম ১০৮ টাকায় নেমে আসে। বৃহস্পতিবার দাম ২ টাকা বেড়েছিল।
মতিঝিলের একটি মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জানান, সোমবার বাজারে অন্য দিনের তুলনায় কাস্টমার কিছুটা বেশি আসছে। ডলার কেনার জন্য অনেকেই এসেছেন, তবে বিক্রি করার জন্য লোক কম। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদারকির কারণে অনেক ব্যবসায়ীই ডলার কেনাবেচা করতে ভয় পাচ্ছেন।
ব্যাংকগুলোতেও নগদ ডলারের দাম কিছুটা কমে এসেছে। গত সোমবার সর্বোচ্চ ১০৪ টাকায় নগদ ডলার কিনে ১০৭ টাকায় বিক্রি করেছে তারা। বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা রেটে ডলার বিক্রি করেছিল। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে রূপালী ব্যাংক আগের মতোই নগদ ডলার বিক্রি করেছে ১০৪.৯৫ টাকা রেটে, অন্যগুলো ১০২ টাকা রেটে বিক্রি করেছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেছিলেন, ডলারের দাম চড়া করে যেসব মানিচেঞ্জার ও ব্যাংকগুলো মুনাফা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। ডলার বাজার স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। এ কাজে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরো বলেন, জড়িতদের চিহ্নিত করতে অভিযান অব্যাহত থাকবে। অনিয়মের প্রমাণ পেলে প্রয়োজনে লাইসেন্স বাতিলও করা হবে।
ব্যাংকগুলো সোমবার সর্বোচ্চ ১০৫ টাকা রেটে আমদানি এলসি সেটেলমেন্ট করেছে।
তবে এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো থেকে ডলার সংগ্রহ করতে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান টিবিএসকে বলেন, 'এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো আমাদের কাছে ১০৯-১১০ টাকা পর্যন্ত রেমিট্যান্সের ডলারের দাম চাচ্ছে। আমি আজকে ১০৬ টাকা পর্যন্ত বলেও কোনো ডলার কিনতে পারিনি। হাউজগুলো এভাবে দাম বাড়ালে আমদানি এলসির সেটেলমেন্টেও ডলারের দাম বেড়ে যাবে।'
বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার ৯৪.৭০ টাকা ইন্টারব্যাংক এক্সচেঞ্জ রেটে ৫০ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে ব্যাংকগুলোর কাছে। চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত রিজার্ভ থেকে প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।