রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটতে শুরু করেছে
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত শুরু হওয়ার পর সোমবার (১ আগস্ট) প্রথমবারের মতো মংলা বন্দরে এসে পৌঁছেছে রুশ পণ্যবাহী জাহাজ। এর মাধ্যমে, সংঘাতের কারণে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে বাংলাদেশের খাদ্যশস্য আমদানির ক্ষেত্রে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল, তা দূর হতে শুরু করেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, "আমরা আশা করছি রাশিয়ার সঙ্গে রপ্তানি-আমদানি বাণিজ্য ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে।"
গম আমদানির বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মস্কোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, আগামী দিনগুলোতে বেসরকারি পর্যায়ের বাণিজ্যও আবার শুরু হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তবে উভয় দেশের সঙ্গে বাণিজ্য পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে অর্থ লেনদেনের বিষয়টি বাধার সম্মুখীন হবে। কারণ রাশিয়ার প্রধান ব্যাংকগুলোকে আন্তর্জাতিক আর্থিক বার্তাপ্রেরণ ব্যবস্থা, সুইফট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে তুলা, গম, ভুট্টা, সরিষা ও মসুর ডাল আমদানি করে বাংলাদেশ। দেশের মোট ৭ মিলিয়ন টন বার্ষিক গমের চাহিদার প্রায় সাড়ে ৩ মিলিয়ন টনই পূরণ হয় এই দেশ দুটি থেকে।
কিন্তু সুইফট ব্যবস্থা থেকে রাশিয়াকে বাদ দেওয়ায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে এসব পণ্যের আমদানি স্থগিত রয়েছে।
তা সত্ত্বেও, ভারত এবং চীনের মতো কিছু দেশ বিকল্প ব্যাংকিং চ্যানেল ও মুদ্রার মাধ্যমে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করছে।
এদিকে, দেশের শস্য চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশও বাণিজ্য পুনরায় শুরু করার চেষ্টা করছে।
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সারসহ রুশ খাদ্যপণ্যের উৎপাদন, বিক্রয় ও পরিবহনে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
সেখানে আরও বলা হয়েছে, ইউক্রেনের ওপর হামলার কারণে অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও রাশিয়ার খাদ্য ও সার বাণিজ্যে কোনো বিধিনিষেধ নেই।
এরই মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রায় ৩ হাজার ৩২৮ টন যন্ত্রপাতি নিয়ে সোমবার রাশিয়ার একটি কার্গো জাহাজ এসে হাজির হয়েছে মংলা বন্দরে।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, "যুদ্ধ সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমাদের দেশে চলমান সব মেগা প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বা অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। তাই নিয়ম অনুযায়ী এসব পণ্য মংলা বন্দরে আসছে।"
"যুদ্ধের কারণে কিছু সময়ের জন্য বিরতি পড়লেও রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ভালো। এখন থেকে রাশিয়ার জাহাজে করে নিয়মিত পণ্য আসবে", যোগ করেন তিনি।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি আমদানির সঙ্গে জড়িত সাব-কন্ট্রাক্টর নুরু অ্যান্ড সন্সের মালিক এইচএম দুলাল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মংলা বন্দরে রুশ জাহাজের আগমন সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে, সর্বশেষ ১৮ অক্টোবর, ২০২১ তারিখে রুশ পতাকাবাহী জাহাজ এমভি ফেসকো ইউলিস বন্দরে এসেছিল।"
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছে, সম্প্রতি সর্বশেষ জাহাজটির আগমনের সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এ নিয়ে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাঞ্চলের নিষেধাজ্ঞার কোনো সম্পর্ক নেই।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শওকত আকবর জানান, চালানের সময়সূচী মোতাবেক স্টেট কর্পোরেশন রোসাটমের প্রধান বৈদেশিক বাণিজ্য প্রকৌশল কোম্পানি, জয়েন্ট-স্টক কোম্পানি অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট (জেএসসি এএসই) এই যন্ত্রপাতি পাঠিয়েছে।
এছাড়া, কিছু যন্ত্রপাতি আকাশপথে এবং কিছু পাঠানো হচ্ছে নৌপথে। তবে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কোনো চালান নির্ধারিত ছিল না বলে জানান শওকত আকবর।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্যশস্য আমদানিকারক কর্তৃপক্ষ বলছে, রাশিয়া থেকে আমদানির বিষয়টি নির্ভর করছে মুদ্রা ইস্যুর ওপর। পেমেন্ট বা লেনদেনের মাধ্যমের নিষ্পত্তি হলে আমদানি সহজ হবে।
এ ব্যাপারে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, "পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে খাদ্য সামগ্রী অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে আমদানি শুরু হলেই তা বোঝা যাবে।"