আইএমএফ–পরিত্রাতা নাকি বিষের পেয়ালা?
বৈশ্বিক অর্থনীতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) নিয়মিতভাবে তাদের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সাম্প্রতিকতম প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয় গত মঙ্গলবার (২৬ জুলাই)। এতে আরো অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিয়েছে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সার্বিক মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৯ শতাংশের মতো উচ্চ হারে হওয়ার প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, উন্নত দেশগুলির সুদহার বৃদ্ধি বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির আগুনকে উস্কে দিয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে আগে থেকেই উন্নয়নশীল দেশের বৈদেশিক ঋণ পরিস্থিতির অবনতি হয়েছিল–যা এখন আরো বাজে রুপ নিচ্ছে। 'মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা' হয়েছে বৈশ্বিক জ্বালানি ও খাদ্য সংকট। পরিত্রাণের সুযোগ দিচ্ছে না জলবায়ু পরিবর্তনের আঘাতও।
আইএমএফ- এর প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়েরে-অলিভার গুরিনচাস এক ব্লগ পোস্টে লিখেছেন, 'বিশ্ব হয়তো অচিরেই মন্দার অতল খাঁদের কিনারে গিয়ে দাঁড়াতে পারে। এই সংকটকালে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, আগামী মহামারির প্রস্তুতি থেকে শুরু করে খাদ্য নিরাপত্তা ও ঋণের চাপ কমানোর মতো নানান বিষয়ে বহুপাক্ষিক সহযোগিতা একান্ত জরুরি হবে'।
গুরিনচাস সঠিক চিত্রই তুলে ধরেন তার পর্যবেক্ষণে। শ্রীলঙ্কা থেকে এল সালভেদর অথবা ঘানা– প্রতিটি মহাদেশের উন্নয়নশীল দেশই রয়েছে সংকটে। দেশগুলি যখন সবে করোনা মহামারির অভিঘাত সামলে উঠতে শুরু করেছিল–তখনই শুরু হয় ইউক্রেনে যুদ্ধ। এতে আকাশচুম্বী হয়েছে খাদ্য ও জ্বালানির দর, বিপুল আমদানি ব্যয়ের চাপে তাদের দেনা সমস্যা আরো জটিল রুপ ধারণ করেছে।
ডলার বিশ্ববাণিজ্যের একটি প্রধান মুদ্রা। যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতিকে বাগে আনতে সুদহার চড়াভাবে বাড়িয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ। এতে আরো শক্তিশালী হয়েছে ডলারের মান। ইউরোপের দেশগুলিও তাদের সুদহার বাড়াচ্ছে। সব মিলিয়ে বেড়ে গেছে উন্নয়নশীল দেশের দেনা মেটানোর খরচ। পরিণতিস্বরুপ: ডলার সংকটকালে ডলার-ভিত্তিক বৈদেশিক ঋণগুলি পরিশোধ নিয়েই অকূল পাথারে উন্নয়নশীল দেশগুলো।
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ও রাজনৈতিক-অর্থনীতির সহযোগী-অধ্যাপক স্টিফেন নেলসন বলছেন, 'যেসব (উন্নয়নশীল) দেশ ঐতিহাসিকভাবেই বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থার আওতাধীন–তাদের দুর্বলতাই সবচেয়ে বেশি। কারণ, অন্য (উন্নত/ দাতা) দেশের ওপর তারা নিজেদের খরচ মেটানোর জন্য নির্ভর করে। এটি বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় গভীরভাবে যুক্ত একটি কাঠামোগত বৈষম্য'।
তাত্ত্বিকভাবে, মূমুর্ষ অর্থনীতিগুলোকে পুনরুদ্ধার সহায়তা দিয়ে প্যারামেডিকের মতই অবদান রাখার কথা আইএমএফ- এর। তবে এই জরুরি সহায়তার 'অ্যাম্বুলেন্স রাইড' কিন্তু মোটেও বিনামূল্যে আসে না।
আইএমএফ'র ঋণ কীভাবে কাজ করে?
১৯৩০ সালের আর্থিক সংকট বিশ্বজুড়ে মহামন্দা রুপে ছড়িয়ে পড়ে, যাকে বলা হয় 'দ্য গ্রেট ডিপ্রেশন'। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্ম দিতে মহামন্দার ভূমিকা ছিল অনেকখানি। বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে বিশ্বব্যাংকের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠা করা হয় আইএমএফ। আরেকটি অর্থনৈতিক সংকট যেন পৃথিবীকে তৃতীয় মহাসমরের দিকে না নেয়–প্রতিষ্ঠান দুটির প্রাথমিক লক্ষ্য তাই বলা হয়েছিল। বিশেষত, সে সময়ে প্রয়োজন ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপীয় অর্থনীতিগুলির পুনর্গঠন।
যোগাযোগ, বিদ্যুৎ উৎপাদন, জ্বালানি, স্যানিটেশন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ-সহ যেসব অবকাঠামো প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহ দেয়—সেসব নির্মাণে কোনো দেশকে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দিতে প্রতিষ্ঠা হয় বিশ্বব্যাংক।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার তত্ত্বাবধায়ক সংস্থা-রুপে প্রতিষ্ঠা হয় আইএমএফ। কোনো দেশ যেন তাদের বর্তমান ঋণ প্রতিশ্রুতিগুলি পূরণ করতে পারে বা ঋণ দাতাদের সময়মতো সুদ ও আসল পরিশোধ করতে পারে- সে লক্ষ্যে বাজারের প্রচলিত হারের চেয়ে কম সুদহারে স্বল্পমেয়াদি ঋণ দেয় আইএমএফ। বিপন্ন অর্থনীতিকে দেওয়া এমন জরুরি সহায়তাকেই বলা হয় সংস্থাটির 'বেইলআউট প্যাকেজ'। সহজভাবে বলা যায়, বিনামূল্যের আইএমএফ ঋণ বলে কোনোকিছুর অস্তিত্ব নেই।
আইএমএফ বিনা শর্তেও ঋণ দেয় না কোনোকালে। আর্থিক স্বচ্ছলতা ধরে রেখে একটি দেশ যেন তার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে সক্ষম থাকে– সেই লক্ষ্যেই আইএমএফ সে দেশের সরকারকে অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি কমাতে বিশেষ কিছু নীতিগ্রহণের জোর পরামর্শ (আদতে শর্ত) দেয়।
আইএমএফ নির্দেশিত এই নীতিগুলো মূলত কৃচ্ছতাসাধনের, যাকে বলা হয় 'অস্টারেটি মেজারস'। কোনো সরকারের যখন জরুরি ভিত্তিতে সহায়তা দরকার–তখন তাদের আইএমএফ এর কথামতো কৃচ্ছতাসাধনের পথে হাঁটতে নেয়। নিতে হয় সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি, জ্বালানি ও খাদ্যে ভর্তুকি কমানোর মতো বেদনাদায়ক সিদ্ধান্ত, যার ভুক্তভোগী হয় সংকটে নিপতীত দেশের আপামর জনগণ। ক্ষুধার্ত বিক্ষুদ্ধ জনতা তখন রাজপথে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে, দেখা দেয় রাজনৈতিক অস্থিরতা। দিনশেষে, আইএমএফের পরামর্শ হিসাবরক্ষকের পছন্দ হলেও– জনতার জন্য তা দুর্ভোগেরই কারণ হয়ে ওঠে।
গ্রিক পুরাণের দানব হাইড্রার মাথার মতোই বিশ্বজুড়ে আজ অর্থনৈতিক সংকটের একাধিক কারণ মাথাচাড়া দিচ্ছে। তাই আইএমএফ- এর কৃচ্ছতা অবলম্বনের পরামর্শ এখন আরও কঠিন। গত মে মাসের শেষদিকে পাকিস্তানকে 'খাদ্য ও জ্বালানির ভর্তুকি প্রত্যাহার'- এর মতো 'কঠোর নীতিনির্ধারণী পদক্ষেপ' নিতে বলে; যাতে করে দেশটি আইএমএফ এর বেইলআউট পরিকল্পনার লক্ষ্যগুলি অর্জন এবং পরবর্তী পর্যায়ের তহবিল পেতে পারে।
জুনের শেষ নাগাদ বৈদেশিক মুদ্রা সংকটে থাকা পাকিস্তান- বাজেট ঘাটতি কমাতে জ্বালানি থেকে আরও বড় পরিসরে ভর্তুকি প্রত্যাহার করে–এতে ভোক্তাপর্যায়ে মূল্যস্ফীতি হয় সাংঘাতিক বা ১৭ শতাংশ, দেশজুড়ে শুরু হয় বিক্ষোভ। পাকিস্তানে যখন জ্বালানি সংকট বাড়ছিল এবং দেশজুড়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছিল–তখনই সরকারের এ সিদ্ধান্তে মানুষের দুর্ভোগ সীমা ছাড়িয়ে যায়।
আফ্রিকার দেশ ক্যামেরুনও চাইছে আইএমএফ এর বর্ধিত ঋণ সুবিধা (এক্সটেনডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি)। এই দেশটিতেও জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে, সড়কে বিক্ষোভ করেছে ট্যাক্সি চালকেরা–তবু আইএমএফ পাকিস্তানের মতো একই পরামর্শ দিয়েছে। সাফ সাফ বলেছে, জ্বালানিতে ভর্তুকি কমাও।
এদিকে খাদ্য আমদানিতে ব্যাপক নির্ভরশীলতা রয়েছে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়ার। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহে যে বিচ্ছিন্নতা দেখা দিয়েছে– তিউনিসিয়া তাতে চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। আইএমএফ থেকে ঋণ পাওয়ার আলোচনা করছে তিউনিসিয়াও। দেশটির ওপর আইএমএফ এর শর্তে রাজি হওয়ার চাপও বাড়ছে– ফলে পর্যায়ক্রমে খাদ্যে ভর্তুকি প্রত্যাহারের পথই নিতে হচ্ছে তিউনিসকে।
তবে একটি কথা না বললেই নয়। স্বল্পোন্নত দেশে খাদ্য ও জ্বালানিতে ভর্তুকির সুবিধা সে দেশের অপেক্ষাকৃত ধনীদেরও লাভবান করে; কারণ তাদের তুলনায় দরিদ্ররা এ দুটি পণ্য ভোগ করেন অনেক কম।
তাহলে, আইএমএফ কী দক্ষিণ গোলার্ধের দরিদ্র দেশগুলির অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণের নীতি গ্রহণ করতে পেরেছে?
আসলে তা পারেনি বলেই মনে হয়।
বৈশ্বিক দেনা ও বৈষম্যের নানান দিক নিয়ে কাজ করে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক দাতব্য সংস্থা ডেবট জাস্টিস। সংস্থাটির অ্যাডভোকেসি শাখার প্রধান জেরোমে ফেলপস বলেন, 'আইএমএফ দাবি করে–তাদের ঋণ নিতে নাকি আর কৃচ্ছতা অবলম্বনের দরকার হয় না; তবে আমি এই শব্দটির ব্যবহার এড়াতে চাই না। আসলে তারা বেশ নিগ্রহমূলক শর্তে ঋণ দিয়ে চলেছে– ক্রমবর্ধমান খাদ্য ও জ্বালানি মূল্যের এই সময়ে দরিদ্র মানুষ যাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এদিকে করোনা মহামারি আঘাত হানার পর বিশ্বের ৯০টি দেশকে নিজেদের জরুরি ঋণ তহবিল থেকে সহায়তা দিচ্ছে আইএমএফ। বৈদেশিক ঋণের চাপ কমানোসহ স্বল্প আয়ের দেশকে সহজশর্তে আর্থিক সহায়তা দানও করছে কয়েকটি কর্মসূচির অধীনে। সিয়েরা লিওন, সেনেগাল, মাদাগাস্কার, মৌরিতানিয়া ও সিশেলসের মতো আফ্রিকান দেশে আইএমএফ সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো খাতের বরাদ্দকে তাদের দেওয়া বাজেট সহায়তার অন্তর্ভুক্ত করতে শুরু করেছে।
আইএমএফ- এর একজন মুখপাত্র ফরেন পলিসিকে বলেন, 'মহামারি শুরুর পর থেকে– তাৎক্ষণিক বাজেট সহায়তা দানকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা জরুরি অর্থায়ন করেছি। জরুরি অর্থায়নকালে পেতে কোনো কঠিন শর্ত দেওয়া হয়নি। এর মাধ্যমে আমরা দেশগুলিকে যে বার্তা দিয়েছি তা হলো– জীবন ও জীবিকা বাঁচাতে যতটুকু ব্যয় করা দরকার, তা তোমরা করতে পারো। তা ছাড়া, ২০২০ সালের মার্চের পর থেকে আইএমএফ সমর্থিত সকল ঋণ কর্মসূচিতে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ রাখার শর্ত অন্তর্ভুক্ত হয়েছে'।
কিন্তু, এ দাবির অসারতাই খুঁজে পেয়েছে বৈশ্বিক দাতব্য সংস্থা- অক্সফাম। তাদের বিশ্লেষণ মতে, মহামারিকালে স্বাস্থ্য সংকটে থাকা দরিদ্র দেশগুলোকে আরও কৃচ্ছতা অবলম্বন করতে হবে– আইএমএফের ৮৪ শতাংশ ঋণে হয় এমন শর্ত ছিল, নয়তো এমন পদক্ষেপ গ্রহণকে উৎসাহিত করা হয়েছে।
#EndAusterity নামক একটি বৈশ্বিক প্রচারণা কর্মসূচির আওতায় ৮৭ দেশের ৫০০টির বেশি সংস্থা ও পণ্ডিতরা আইএমএফ ও সকল দেশের সরকারের প্রতি কৃচ্ছতা অবলম্বন থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। এর পরিবর্তে তারা লিঙ্গ সমতা এগিয়ে নিতে, পরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিতে ও আয় বৈষম্য কমাতে সহায়ক অবদান রাখবে এমন খাতে নীতি সমর্থন দাবি করেছেন।
তবে সবচেয়ে জটিল দিকটি হলো– এসব প্রকল্পের অর্থায়নের পর ঋণদাতাকে তা এক সময় অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। অর্থাৎ, নিশ্চিত করতে হবে আর্থিক প্রাপ্তির দিকটিও। অনেক সময়েই সামাজিক কল্যাণ সরকারের ব্যয়ই বাড়ায়, তাৎক্ষণিক আয় বৃদ্ধি তাতে ঘটে না।
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য চাই বিদেশি বিনিয়োগও। কোনো দেশ যাতে বিনিয়োগকারীদের কাছে আকৃষ্ট করতে পারে সেজন্য ওই দেশের নীতিনির্ধারণী সুদহার বৃদ্ধি এবং বাজেট প্রণয়নকালে কোমরের বেল্টখানা কষে বাধার মতো পরামর্শ দেয় আইএমএফ। রাজনৈতিকভাবে উভয় পদক্ষেপই অজনপ্রিয়।
এই বাস্তবতায় বিশেষজ্ঞরা আইএমএফের প্রতি তাদের শর্তের বেড়াজাল সহজ করার পরামর্শ দিচ্ছেন। তারা সংস্থাটির স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস (এসডিআর) তহবিল থেকে আরও সহায়তা দরকার–এমন দেশগুলিকে অর্থায়ন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এসডিআর হলো- আইএমএফ এর আন্তর্জাতিক সম্পদের রিজার্ভ। সদস্য দেশগুলির সরকারি মুদ্রা রিজার্ভকে সহায়তা দিতে এটি তৈরি করা হয়েছে। ২০২১ সালে এসডিআর তহবিল থেকে করোনা মহামারির অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলিকে বিপুল সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ফলে আর্থিকভাবে দুর্বল দেশগুলি শূন্য হতে থাকা রিজার্ভের ঘাটতি পূরণে অতি-দরকারি বৈদেশিক মুদ্রা পেয়েছে।
- সূত্র: ফরেন পলিসি অবলম্বনে সংক্ষেপিত