৪-৫ মাসের মধ্যে কমতে পারে সাবান-টুথপেস্টের মতো নিত্যপণ্যের দাম
বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম ও ডলার পরিস্তিতি স্থিতিশীল থাকলে নিত্যদিনের ব্যবহারের পণ্য যেমন- সাবান, ডিটারজেন্ট, টুথপেস্টসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম কমতে আরও ৪ থেকে ৫ মাস সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে এসব পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
আজ বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে সাবান, ডিটারজেন্ট, পেস্ট, লিকুইড ক্লিনার জাতীয় পণ্যের উৎপাদনকারীদের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সেই সভায় প্রতিষ্ঠানগুলো এ কথা জানায়।
অনুষ্ঠানে স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের পরিচালক (অপারেশন) মালিক মোহাম্মদ সাইদ বলেন, "বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম কিছুটা কমতির দিকে। একই সঙ্গে ডলারের দামও যদি স্থিতিশীল থাকে, তাহলে হয়তো আগামী ৪-৫মাস পর এসব পণ্যের দাম কমতে পারে।"
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএফএম সফিকুজ্জামান বলেন, "বিশ্ববাজারে দাম উঠানামার ক্ষেত্রে আমরা নিয়মিত তেলের দামের উঠানামা দেখি। একইভাবে আমরা যদি বিশ্ববাজারে এসব পণ্যের কাঁচামালের দামের দিকে তাকাই, তাহলেও হয়তো দাম উঠানামার চিত্র দেখতে পাবো। কিন্তু এসব পণ্যের ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর কেবল দাম বাড়ানোর চিত্রই দেখা যায়।"
তবে মাঝে মধ্যেই দাম কমানোর মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে দাবি করলেও সুনির্দিষ্ট করে তা উল্লেখ করতে পারেনি কোম্পানিগুলো। ইউনিলিভার বাংলাদেশের সিএফও জাহিদ মালিতা দাম কমানোর দাবি করলেও শেষ কবে দাম কমানো হয়েছিল তা ঠিকঠাক বলতে পারেননি।
তিনি বলেন, "এটা তো সমসময় মনে রাখা যায় না, তবে কাঁচামালের দাম কমলেও আমরা তা সমন্বয় করি।'
এ সময় স্কয়ার টয়লেট্রিজের পরিচালক ৭ বছর আগে (২০১৫) একবার কাঁচামালের দাম কমার কারণে এসব পণ্যের দাম কমানো হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন।
করোনা মাহামারি, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের বাজারে অস্থিরতার সময়ে কোম্পানিগুলো কয়েক দফায় সাবান, টুথপেস্ট, ডিটারজেন্টসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। এরমধ্যে চলতি মাসের শুরুতে সর্বশেষ দফায় ১০০ গ্রাম সুগন্ধি সাবানের দাম ব্র্যান্ডভেদে ৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৫ টাকা, ৫০০ গ্রামের ডিটারজেন্ট ৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯০ টাকা পর্যন্ত করা হয়। টুথপেস্টের প্রতি ১০০ গ্রামের টিউবের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। আকার ও মানভেদে টিস্যুর দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা।
কোম্পানিগুলো বলছে, এর প্রধান কারণ হলো কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি।
সভায় এর একটি হিসাবও তুলে ধরা হয় ইউনিলিভারের পক্ষ থেকে। ইউনিলিভার বাংলাদেশের সিএফও জাহিদ মালিতা জানান, এই সময়ে সাবান ও ডিটারজেন্টের দাম গত দুই বছরে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ বেড়েছে। আর এই পণ্যগুলোর কাঁচামালের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
তিনি জানান, ৫০০ গ্রাম রিন পাউডারের দাম ২০২০ সালে ছিল ৬০ টাকা। তখন এর প্রধান কাঁচামাল সালফিউরিক এসিডের প্রতি কেজির দাম ছিল ৮৩ টাকা। ২০২২ সালে ৫০০ গ্রাম রিন পাউডার বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়, কারণ এখন এর কাঁচামালের প্রতিকেজি কিনতে খরচ হচ্ছে ১৯০ টাকা। একইভাবে বিশ্ববাজারে সাবানের কাঁচামাল- ভেজিটেবল ওয়েল, টুথপেস্টের কাঁচামাল- সোডা অ্যাশের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে বর্তমানে কিছু কিছু পণ্যের দাম কমতির দিকে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কোম্পানিগুলো দাবি করছে, দাম সমন্বয় করতে গিয়ে তাদের লাভ উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে হচ্ছে। কারণ ভোক্তারা এসব পণ্যের ব্যবহার আগের তুলনায় কমিয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে যখন বিশ্ববাজারে দাম কমতে শুরু করেছে, তখন ডলারের মূল্যস্ফীতি খরচ বাড়িয়েছে।
বর্তমানে আরও একটি নতুন সংকট যুক্ত হওয়ার দাবি তুলেছে কোম্পানিগুলো। তারা বলছে, বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম কমলেও কাস্টমস চাইছে আগের বাড়তি দামের ওপরই শুল্ক আরোপ করতে। এতে করে এসব পণ্যের দাম কমানো আরও কষ্টকর হয়ে পড়বে বলে জানায় তারা।
তবে এই সমস্যা সমাধানে ভোক্তা অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
অনুষ্ঠানের এসিআই ও কল্লোল গ্রুপ অব কোম্পানিজের পক্ষ থেকেও কাঁচামাল বৃদ্ধিকেই এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে ভোক্তাকণ্ঠের সম্পাদক কাজী হান্নান বলেন, "যখন কোনো একটি ব্রন্ডের কিছু পণ্য মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়তা পায়, যেগুলোর বিক্রি বেশি হয়, কোম্পানিগুলো সুযোগ পেলেই সেসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এটি হওয়া উচিত নয়।"
অনুষ্ঠানের শেষে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, "কয়েকটি দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে আমরা কোম্পানিগুলো পরিদর্শন করবো, তাদের কস্ট অ্যানালাইসি (ব্যয় বিশ্লেষণ) করবো। আসলে কতটা দাম বাড়ানোর কথা ছিল, তারা কতটা বাড়িয়েছে সেটি দেখা হবে।"
"কোনো ধরনের অস্বাভাবিক কিছু পেলে সেখানে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে," যোগ করেন তিনি।